সীমান্তে উত্তেজনা নিরসনের বাংলাদেশ-মিয়ানমার পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত

79

ডেস্ক রিপোর্টঃ-সীমান্তবর্তী এলাকায় চলমান উত্তেজনার ঘটনায় বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) ও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) মধ্যে বৈঠক শুরু হয়েছে। বিজিবি ও বিজিপির মধ্যে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে এ বৈঠক হয়।
রবিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল ১০টায় কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে বিজিবির সোদান রেস্ট হাউসে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে এ বৈঠক হয়েছে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ১০ সদস্যের একটি দল স্পিড বোটে করে উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের নাফ নদীর শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে পৌঁছেন।
এ সময় টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে তাদের স্বাগতম জানান। পরে তাদের শাহপরীরদ্বীপ বিওপিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পতাকা বৈঠকে মিলিত হয় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র আরো জানায়, টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ও মিয়ানমার মংডুর ১ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল কাও না ইয়ান শোর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসময় সীমান্তে উত্তেজনা নিয়ে বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। তবে বিষয়ে বিস্তারিত বিকালে প্রেস ব্রিফ্রিংয়ে জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন বিজিবির পক্ষ থেকে।
আলোচনার বিষয়ের অন্যতম ছিলো প্রায় তিন মাস ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান গোলাগুলিকে কেন্দ্র করে সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে বাংলাদেশ সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। সীমান্তের এই পরিস্থিতি নিয়ে শুরু থেকে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে নানা পর্যায়ে যোগাযোগ চলছিল। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিজিবির পক্ষ থেকে বিজিপির কাছে একাধিকবার চিঠি পাঠানোও হয়েছিল। বাংলাদেশের সীমান্তে মর্টারশেল ও গুলি এসে পড়ায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে একাধিকবার তলব করে প্রতিবাদও জানানো হয়েছিল।
এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি বৈঠকে বসতে রাজি হয়ে বিজিবির কাছে একটি চিঠি পাঠায়। এর আলোকেই রবিবার (৩০ অক্টোবর) দুই দেশের ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ভবিষ্যতে সব ধরনের সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে একমত পোষন। আর নিয়মিত পতাকা বৈঠক বসবে দু’দেশই।
উল্লেখ্য, সীমান্তে উত্তেজনা শুরু হয় চলতি বছরের আগস্টে। প্রথমে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণ। এর মধ্যে ২৮ আগস্ট মিয়ানমারে ছোড়া দুটি মর্টার শেল এসে পড়ে বাংলাদেশের ভূখন্ডে। তবে বিস্ফোরিত না হওয়ায় কেউ হতাহত হয়নি। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যুদ্ধ বিমান থেকে ছোঁড়া আরও দুটি মর্টার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ে।
একইদিন বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে উড়ে যায় মিয়ানমারের যুদ্ধ বিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার। যার কারণে সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে বাড়ে আতঙ্ক। এরপর আরও কয়েকবার সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা ঘটিয়েছে মিয়ানমারের বিজিপি।
সবশেষ গত ২৩ অক্টোবর নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নতুন করে শুরু হয় গোলাগুলি। যা দু’দিন থেমে থেমে অব্যাহত থাকে। তবে এরপর থেকে আর শোনা যায়নি গোলাগুলির শব্দ।