তুমব্রু ও বাইশফাঁড়ি সীমান্তের বিপরীতে যুদ্ধ বিমান থেকে ফের গোলা ছুড়ছে মায়ানমার, মাটির বাড়ি ফাটল

104

শামীম ইকবাল চৌধুরী, নাইক্ষ্যংছড়িঃ-বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি মায়ানমার সীমান্তের তুমব্রু ও বাইশফাঁড়ি সীমান্ত পয়েন্টের বিপরীতে মিয়ানমারের যুদ্ধ বিমান গোলা ছুড়ে সে দেশের বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে।
শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত পৌঁনে ১১টায় এ গোলা বষর্ণ করে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী। স্থানীয় লোকজনের দাবী রাত নামলেই শুরু হয় মায়ানমার বাহিনীর তান্ডব। রাতের ঘুম হারাম করে সে দেশের বর্মী বাহিনীর বিচরনে ও যুদ্ধ বিমানের গোলা এবং মর্টার শেলের বিকট শব্দে। সেই শেলের শব্দে তুমব্রু উত্তর পাড়ার নু আহমেদ এর বাড়িসহ কয়েকটি বাড়ি ফাটল ধরে যায়।
তুমব্রু বাজার ব্যবসায়ী বদিউল আলম ও আবদুল কাদের এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্রতিদিন নতুন নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্ত পরিবেশ জটিল করছে।
তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত পৌঁনে ১১টায় রাখাইন প্রদেশের মংডু জেলার উত্তরে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্ত পিলার ৩৭, ৩৮, ৩৯ এলাকায় মিয়ানমার বিমান বাহিনীর দুটি যুদ্ধ বিমান হতে ভারী অস্ত্রের গোলা বর্ষণ করে সে দেশে। এর একটি বিমান মিয়ানমার থেকে এসে তুমব্রু পয়েন্টের জিরো লাইনের সোজা উপর দিয়ে মিয়ানমারে ফিরে যায়। আর মর্টারশেলের গোলা বর্ষণ করে। যাতে করে তুমব্রু বাজার, কোনার পাড়া, মধ্যম পাড়া ও উত্তর পাড়ার বসতিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ ঘটনায় মিয়ানমারের ভেতরে হতাহত হয়ছে কিনা কোন সঠিক তথ্য জানা যায়নি।
এছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে টহলরত এক মাঠ পর্যায়ের বিজিবির কর্মকর্তা জানান, ২৪ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল ৭টার দিকে মায়ানমার সামরিক বাহিনীর যুদ্ব বিমান ৪০/৪১ সীমান্ত পিলার এলাকায় টহল দেয় এবং গোলা নিক্ষেপ করে।
তুমব্রু বাজার সার্বজনীন দুর্গা মন্দির কমিটির সভাপতি রুপলা ধর জানান, মায়ানমার সীমান্ত ঘেষা তুমব্রু ওপারের ক্যাম্প থেকে শনিবার সকাল ১০টায় সে দেশের অভ্যন্তরে একটি মর্টার শেল নিক্ষেপ করে।
এ রিপোর্ট পাঠানো পর্যন্ত সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। কোন ধরনের যুদ্ধ বিমান ও মর্টারের গোলার আওয়াজ পাইনি বলে স্থানীয়রা জানান।
এ বিষয়ে বিজিবির বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, যুদ্ধ বিমান জিরো পয়েন্ট দিয়ে রাতের বেলা কয়েকটি গোলা নিক্ষেপ করে মায়ানমারের অভ্যন্তরে। তবে এতে বাংলাদেশের কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তিনি খবর পাননি।
বাজার ব্যবসায়ীরা কিছুটা সহনশীল হলেও চাকমা ও তঞ্চঙ্গা নৃ-গোষ্টির লোকজন আতঙ্ক গ্রস্থ হয়ে পড়ে।
বাইশফাঁড়িও উত্তরপাড়ার থেকে পরীক্ষার কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিতে যাওয়া অংপ্রু তংচঙ্গা,আয়সা বেগম ও শারমিন আক্তার বলেন,তারা ভয়ে ভয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন।কেননা রাতে পড়ার সময় মিয়ানমারের যুদ্ধ বিমান থেকে গোলার শব্দ তাদের আতংকিত করলেও কিছুটা সহনীয় ছিলো। কেননা বাড়ির সবাই পাশে ছিলো।কিন্তু সকালে গোলাগুলির আওয়াজ ভেদ করে কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় অনেক ভয় তাদের তাড়া করে।
তুমরু কেন্দ্রিয় জামে মসজিদের খতিব মৌলানা নুরুল আজিম বলেন, শুক্রবার সকালের গোলার আওয়াজে তার এবং তার মুসল্লীদের মনে চরম আতংক। বুক কেঁপে উটে তাদের। তার মসজিদটি তুমরু সীমান্তের সাথে মাত্র দেড়শ গজ। বাইশফাঁড়ি ওয়ার্ড়ের গ্রাম পুলিশ আবদুজ্জাবার বলেন, তিনি রাতদিন এ সব গোলার শব্দ শুনেন আর ভাবেন। তবে শনিবার সকাল থেকে নতুন করে গোলাগুলির আওয়াজ যেন নতুন আতংক তার মাঝে।নো ম্যানস-ল্যান্ডে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা দিল মোহাম্মদ জানান, আজকেও (শনিবার ২৪ সেপ্টেম্বর) বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। আসলে এ ‘গুলিখেলার’ শেষ কবে হবে, তার কোনও হিসেব নেই। আমাদের শিবিরের শিশু ও নারীরা ভয়ে থাকে। আর আমরা গোলাগুলির শব্দ শুনতে শুনতে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি।
নো ম্যানস-ল্যান্ডে দায়িত্বে থাকা বিজিবির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে জানান, সীমান্তের অবস্থা খুব খারাপ। এখানে লোকজনের চলাচলে সতর্ক করা হয়েছে। জরুরি কাজ না থাকলে এখানকার লোকজনকে ঘোরাফেরা না করতে বলা হয়েছে।