তিনদিনের ছুটিতে বিলাইছড়ির ন-কাটাছড়া ঝর্ণা দেখতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড়

133

কাপ্তাই প্রতিনিধিঃ-গত ১৮ আগস্ট বৃহস্পতিার শুভ জন্মাষ্টমি উপলক্ষে সরকারি ছুটি ছিল। এর পরদিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। টানা তিন দিনের ছুটিতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত দৃষ্টি নন্দন ন-কাটাছড়া ভ্রমণ করতে ভীড় করেন। পাথরের খাড়া পাহাড়ের প্রায় ৫শ ফুট উপর থেকে ন-কাটাছড়ায় ঝর্ণার পানি ঝুপঝুপ করে নিচে পড়ছে। ঝর্ণার পানিতে ভিজতেই পর্যটকদের এত ভীড়। নারী পুরুষ শিশু কিশোর এমনকি অনেক বয়ষ্ককেও দেখা গেছে ন-কাটাছড়ায় ভিজতে সীমাহীন কষ্ট স্বীকার করে বিলাইছড়ি যাচ্ছেন।
ন-কাটাছড়াটি অত্যন্ত দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত। ১৭বার পাহাড়ি ঝর্ণা পেরিয়ে এবং বিপজ্জনক পাহাড়ী চড়াই উৎরাই ডিঙ্গিয়ে তবে পৌঁছতে হয় ন-কাটাছড়া ঝর্ণায়। গত ১৯ আগস্ট সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট এবং কাপ্তাই উপজেলা থেকে দুই শতাধিক পর্যটক ন-কাটাছড়া ঝর্ণা পরিদর্শনে এসেছেন। ঢাকার রামপুরা থেকে আগত মিনহাজুল আবেদীন জানান তিনি পরিবার এবং বন্ধুসহ ৪০ জন সদস্য নিয়ে ন-কাটাছড়া ঝর্ণা দেখতে এসেছেন। কাপ্তাই উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারন সম্পাদক ঝুলন দত্ত জানান তাঁরা শিল্পকলা একাডেমীর দেড় শতাধিক সদস্য দুটি বড় ইঞ্জিন বোর্টে চড়ে ঝর্ণা পরিদর্শনে এসেছেন। যাতায়াতে কষ্ট হলেও ঝর্ণা পরিদর্শন করে এবং দীর্ঘ সময় ঝর্ণার পানিতে ভিজতে পেরে আগত সব পর্যকট বেজায় খুশি।
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান জানান, উপজেলার ২নং কেংরাছড়ি ইউনিয়নের অত্যন্ত দূর্গম ৯ নম্বর ওয়ার্ডে এই ন-কাটাছড়া ঝর্ণা অবস্থিত। প্রায় প্রতিদিন ঝর্ণা দেখতে পর্যটকরা আসছেন। ন-কাটাছড়া ঝর্ণা ছাড়াও আরো দুটি ঝর্ণা বিলাইছড়ি উপজেলায় রয়েছে। সেগুলো আরো দূর্গম স্থানে অবস্থিত। অনেকে বিলাইছড়ি ভ্রমণে এসে উপজেলা প্রশাসন পরিচালিত নীলাদ্রি রোসোর্টে অবস্থান করেন। পূর্ব অনুমতি সাপেক্ষে সকলের জন্য নীলাদ্রিতে অবস্থানের সুযোগ রয়েছে বলেও তিনি জানান।
বরিশাল থেকে আগত আশরাফুন্নেসা নামক একজন স্কুল শিক্ষিকা জানান তারা ২৫ জন শুক্রবার সকাল ৮টার সময় কাপ্তাই জেটিঘাট থেকে ইঞ্জিন নৌকা রিজার্ভ নিয়ে বিলাইছড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। সকাল ১০টার সময় তারা পৌঁছেন বাঙ্গালকাটা ঘাট নামক স্থানে। সেখান থেকে ২০ মিনিট হেটে পৌঁছেন বিলাইছড়ি ডেবারমাথায়। এখানে ন-কাটাছড়া ভিসিএফ এর আওতায় কমিউনিটি বেইজড ইকো ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত ভিসিএফ ও যুব ভলান্টারি দলের অনুমতি সাপেক্ষে ৬শ টাকায় গাইড নিয়ে ন-কাটাছড়া ঝর্ণার উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হয়। তারা প্রত্যেকে ১০ টাকায় একটি বাঁশের লাঠি নিয়ে পাহাড়ী পথ ও ছড়ায় আবার যাত্রা শুরু করেন। ৪০ মিনিট হেটে একই ছড়া (ন-কাটাছড়া) ১৭বার পার হয়ে ঝুঁকি নিয়ে অবশেষে কাঙ্খিত সেই ঝর্ণার কাছে যান। ঝর্ণা দেখে সবাই অবাক। এত সুন্দর। বাহ্ কি চমৎকার। একেকজন একেক রকমের মন্তব্য করতে লাগলেন। পাথুরে পাহাড়ের প্রায় ৫শ ফুট উপর থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঝুপঝুপ করে ঝর্ণার পানি পড়ছে। সবাই ঝর্ণার নিচে ভিজতে লাগলেন। পানি অত্যন্ত ঠান্ডা। দীর্ঘ হাটা পথের ক্লান্তি শীতল পানির পরশে মুহুর্তে দুর হয়ে যায়। ঝর্ণার পানিতে ভিজে পর্যটকরা পরম আনন্দ পান। প্রায় দুই ঘন্টা একনাগাড়ে সবাই পানিতে ভিজেন। এরকম আনন্দ আর কোথাও পাওয়া যায়নি বলেও পর্যটকরা অভিমতে জানান।
বিলাইছড়ি উপজেলার ২নং কেংরাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল মারমা এবং ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার রিপন চাকমা জানান, ন-কাটাছড়া ঝর্ণা পরিদর্শন করতে প্রতিদিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। সাধারন জনগণ ছাড়াও সরকারি উচ্চ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা এবং দুর দুরান্ত থেকে অনেক জনপ্রতিনিধিও ঝর্ণার পানিতে ভিজতে নিয়মিত আসছেন। ঐ জায়গাটি যাতায়াতে বর্তমানে অনেক সমস্যা। আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হলে আরো বেশি সংখ্যক পর্যটক ন-কাটাছড়া ঝর্ণা পরিদর্শন করতে বিলাইছড়ি আসবেন বলেও তারা আশা প্রকাশ করেন।