লোডশেডিংঃ কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও রাঙ্গামাটিবাসী সেই বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত

116

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙ্গামাটিঃ-রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন স্থানে এলাকা ভিত্তিক লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। রোদ ও ভ্যাপসা গরমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে কোনো কোনো গ্রাহক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। অনেকে বিরক্তি প্রকাশ করছেন সামাজিক মাধ্যমে।
জানা গেছে, রাঙ্গামাটি শহরসহ উপজেলা গুলোর বিভিন্ন স্থানে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দোকানের মালামাল নষ্টের পাশাপাশি কমে গেছে বেচাকেনাও। আর সন্ধ্যায় লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। কোমলমতি শিশুসহ বয়স্ক লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
স্থানীয় জানান, গত মঙ্গলবার থেকেই টানা ৫-৬ বার লোডশেডিং হয়েছে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন এলাকায়। লোডশেডিংয়ের নিদিষ্ট সময় জানতে না পারায় পিবাকে পড়েছেন গ্রাহকরা। অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভ্রাট লেগেই আছে। এই ভাবে দুপুর, দুপুরের পর বিকেলে, সন্ধ্যায় রাতে ও ভোরে একাধারে চলছে লোডশেডিং। এক ঘন্টা, পৌনে এক ঘন্টা, আধা ঘন্টা করে ৩/৪ বার হচ্ছে লোডশেডিং। এতে ক্ষতি ও ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় লোকজনসহ হোটেল-মোটেল, মুদি ও খাবারসহ বিভিন্ন দোকানিরা। মালামাল নষ্টসহ বেচাকেনা কমে গেছে ব্যবসায়ীরা। লোডশেডিংয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটে ভূতুড়ে অবস্থা।
স্থানীয়রা আরো জানান, সারা দিনে কতবার বিদ্যুৎ যায়, তার হিসাব নেই। এক সপ্তাহ ধরে শুধু রাতে দিনে চার-পাঁচ ঘণ্টা ধরে লোডশেডিং হচ্ছে। রাতে গরমের কারণে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো পড়াশোনাও হচ্ছে না। আর বিলাস বহুল শপিংমল, বিপণী বিতানসহ ছোট-বড় মার্কেটগুলোতে বেচাকেনায় মন্দাভাব দেখা গেছে। এর সাথে রয়েছে বিদ্যুতের সাথে সংশ্লিষ্ট ছোট বড় দোকানগুলো। শুধু ব্যবসা ক্ষেত্রেই নয়, জনজীবনও বিপর্যস্ত বিদ্যুতের এমন বিপর্যয়ে।
এসময় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কাপ্তাই বাঁধের ফলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে তবুও আশা করেছিলাম রাঙ্গামাটিবাসী বিদ্যুতের সুবিধা পাবো কিন্তু কাপ্তাই হ্রদে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলেও রাঙ্গামাটিবাসী সেই বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত আমরা।
এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে ওয়েল্ডিং, ঝালাই, বিদ্যুৎচালিত মোটর, মেকানিকের যন্ত্রপাতি ও বিদ্যুৎনিভৃর কাজ ও ব্যবসায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীসহ শ্রমিকরা। বিদ্যুতে অভ্যস্ত মানুষ বহু বছর পর আবারও কেরোসিনের বাতি কিংবা মোমবাতি ব্যবহার করতে শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে রাঙ্গামাটির ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ।
রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজারের সিলিকন দোকানের মেকানিক সনজিব ধর জানান, লোডশেডিং আর প্রচন্ড গরমে মার্কেটের অবস্থা খুবই খারাপ। জেনারেটর দিয়ে কতক্ষণ থাকা যায়। আগের মতো এখন কাজও করতে পারছি না। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ইলেকট্রিক সামগ্রীও নষ্ট হচ্ছে। সঠিক সময়ে গ্রাহকদের মালামাল দিতে পারছি না। এতে করে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
এব্যাপারে রাঙ্গামাটি বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলী মো. জালাল উদ্দীন জানান, রাঙ্গামাটির আওতাধীন গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। তিনটি ৩৩/এবিপিএন কেন্দ্রের মাধ্যমে ১২টি এলোমিন কেবি ফিটারের সাহায্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে এই জেলায়। আমার আওতাধীন তিনটি উপকেন্দ্রের লোড ১৫ মেগাওয়াট। কিন্তু বর্তমানে আমরা পুরো লোডটা পাচ্ছিনা। তাই গড়ে ৪-৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, জানা গেছে গত কয়েক দিনের বৃষ্টি এবং পাহাড়ী ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদে ৩ ফুটেরও বেশি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রুলকার্ভ (পানির পরিমাপ) অনুযায়ী কাপ্তাই হ্রদে এই মুহুর্তে ৮৮ ফুট মীন সী লেভেল (এম এস এল) পানি থাকার কথা। কিন্তু হ্রদে এখন পানি রয়েছে ৯১.৪০ ফুট এম এস এল।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সুত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বর্তমানে ৩টি ইউনিট সচল রয়েছে। সচল ইউনিটগুলো হলো ২, ৩ ও ৫ নম্বর ইউনিট। এই তিনটি ইউনিট থেকে বর্তমানে ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে। উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই জাতীয় গ্রীডে সঞ্চালক করা হচ্ছে।
সুত্রে আরো জানা গেছে, রক্ষনাবেক্ষনের কাজে বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও ৪ নম্বর ইউনিটটি বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রস্তুত রয়েছে। হ্রদে পানি আরো বৃদ্ধি পেলে এবং জাতীয় গ্রীডের চাহিদা থাকলে ৪ নম্বর ইউনিটটিও বিদ্যুৎ উৎপাদনে চালু করা হবে।
পার্বত্যবাসীর অনেক ত্যাগের বিনিময়ে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পার্বত্যবাসীর ত্যাগের বিষয়টি মাথায় রেখে তৎকালীন সময়ে পার্বত্যবাসীকে বিদ্যুৎ সুবিধা নিয়ে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিলো তা মাথায় রেখে পার্বত্য এলাকায় লোডশেডিং আওতামুক্ত করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান স্থানীয় অভিজ্ঞ মহল।