ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রাঙ্গামাটির ফিশারী বাঁধ

96

মো.সোহরাওয়ার্দী সাব্বির, রাঙ্গামাটিঃ-রাঙ্গামাটি শহরের ফিশারী সড়ক সংযোগ বাঁধটি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। চলতি বর্ষায় ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে। রাঙ্গামাটি শহর রক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সংযোগ দিতে বাঁধটি নির্মিত হয় ১৯৬৪ সালে। কিন্তু বাঁধটি নির্মাণের পর এ পর্যন্ত একবারও সংস্কার করা হয়নি। ফলে কাপ্তাই লেকের ভাঙ্গন ও মাটি ধসে যাওয়সহ নানাভাবে মারাত্মক ক্ষতিসাধিত হচ্ছে এ বাঁধটি। দুপাশে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি, মাঝখানে সারি সারি গাছের পাহারায় নয়নাভিরাম ফিঁশারী সংযোগ সড়ক বাঁধ। পর্যটকদের চোখ জুড়ানো এই বাঁধটি ঝুঁকিতে থাকলেও সংষ্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি শুরু থেকেই।
রাঙ্গামাটি জেলা শহরের ফিশারীঘাট থেকে ট্রাক টার্মিনাল পর্যন্ত নির্মিত ওই বাঁধটি শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাঁধটি রাঙ্গামাটি শহরের দুটি অংশকে সংযুক্ত করে রেখেছে। কাপ্তাই লেকের পানি বাড়লে লক্ষ্য করা যায় বাঁধের বিভিন্ন স্থানে লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত কান্ট্রিবোট, ট্রলার, নৌকায় মালামাল ওঠানামা করা হয়ে থাকে। এতে বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভেঙে গেলে রাঙ্গামাটি শহরের দুই অংশে বিভক্ত হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
এদিকে বাস টার্মিনালে বাস রাখার জায়গায় না পেয়ে রাঙ্গামাটি শহরের ঝুঁকিপূর্ণ ফিশারী বাঁধে রাখছে বাস গুলো। এখানে বাস আর মালবাহী ট্রাক গুলো প্রতিনিয়ত রাখায় বাঁধটি আরও ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যেকোনো মুহূর্তে বাঁধটি ভেঙ্গে পড়ে বিলীন হয়ে শহরের অভ্যন্তরীন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এখানকার সচেতন মহল।
বাঁধটিকে ঘিরে উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যটন বান্ধব কাগজে কলমে নানা প্রকল্প নেয়ার বুলি আওড়ালেও মুখ থুবড়ে পড়েছিল সেটি। সংস্কারের অভাবে রাঙ্গামাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ এ সংযোগ সড়কটির উভয়পার্শ্বে বেশ কয়েকটি স্থানে ফাটল, বড় বড় গর্ত তৈরি এবং ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে সড়কের অতিরিক্ত চাপ ও সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে পড়া বা ধ্বসে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে প্রতিনিয়ত। সাম্প্রতিক সময়ে ফিসারী বাঁধটি সংস্কার নিয়ে রাঙ্গামাটি শহরে বসবাসরত নাগরিকদের মধ্যেও চরম উদ্বেগ, উৎকন্ঠা এবং স্থানীয় প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে বেশ আলোচনা হওয়ার পর অবশেষে ফিসারী বাঁধটি সংস্কারের কাজ করছে রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ। নির্মান করা হয় তিনটি রির্টানিং ওয়াল। এর পর আর কোনো কাজ করেনি এক বছরেও। রিটানিং ওয়াল নির্মান করলেও এখনো ভরাট করা হয়নি মাটি। যার ফলে ঝুকি কমেনি ফিশারী বাঁধের। মাটি ভরাট না করলে বাঁধের ভাঙ্গনরোধ কখনো সম্ভব নই।
এই বিষয়ে রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছালেহী সাথে কথা বললে তিনি বলেন, রাঙ্গামাটির বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কাজ চলমান। ধাপে ধাপে সকল সড়কের নির্মান কাজ শেষ করা হবে। রাঙ্গামাটি ফিসারী সংযোগ সড়কটির কাজ চলমান। বাকি যেটুকু কাজ এখনো শেষ হয়নি তা অতিদ্রুত শেষ করা হবে।
রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গামাটি ফিসারি সংযোগ সড়ক বাঁধটির দু’পাশের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১২শ’ মিটার। এর মধ্যে রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগ বর্তমানে বাঁধটির একপাশে ৬শ’ মিটারের মধ্যে শুধু ২শ’ মিটার অর্থাৎ যেসব জায়গা অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে সেসব স্থানে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের সূত্রে আরো জানিয়েছে, এ সড়কের মোট ঝুকিঁপূর্ণ ৪টি স্পটে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। এ রিটেইনিং ওয়ালগুলো হচ্ছে মূল সড়ক থেকে ৩৩ ফুট দূরত্বে। এখানে প্রতি ২.৪ মিটার পর পর ১২ মিটার উচ্চতার পাইলিং ফাউন্ডেশন হবে এবং রিটেইনিং ওয়ালের উচ্চতা হচ্ছে ৫ মিটার। এই ওয়ালগুলো মূল সড়কের লেভেল থেকে ১ মিটার নিচে। ফিশারি সংযোগ সড়কটির সংস্কার কাজে ব্যয় হচ্ছে ৪ কোটি টাকা। ইতিপূর্বে সড়কটির দুইপাশে বৃক্ষ ছিল প্রায় ৫০৬টি আর বর্তমানে কেবল সড়কের দুই পাশের বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে মাত্র ৩০০টি। সেগুলোও এখন বেশ ঝুঁকিতে।
বাঁধ সংস্কারের কাজ রাঙ্গামাটি পৌরসভা, এলজিইডি, উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইসিবি সহ উন্নয়ন মূলক সংস্থা কে দেওয়ার কথা থাকলে ও পরবর্তীতে সড়ক ও জনপদ বিভাগ কে দেওয়া হয়।
শহরবাসীরা বলছেন, বাঁধ রক্ষায় জেলার যে সমস্ত উন্নয়ন সংস্থা আছে তারা এগিয়ে এলে রাঙ্গামাটি শহরের এই গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ সংস্কার করে বড় ধরনের ক্ষযক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
বাঁধ রক্ষা সর্ম্পকে রাঙ্গামাটির একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনে সভাপতি মাসুদ রানা রুবেল বলেন, রাঙ্গামাটি শহরের সর্বোচ্চ সুন্দর স্থান বহনকারী ফিশারীর বাঁধটি এমনিতেই করুন পরিস্থিতিতে রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে ভেঙ্গে পড়ে বিলীন হয়ে শহরের পুরো যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ সংস্কার কাজ তো এখন আর চলছে না। লক্ষ্যণীয় যে, প্রায় সময় সেখানে ট্রাক পার্কিং করে রাখা হয়, আবার অনেক সময় মালামাল আনলোড করা হয় এই বাঁধেই। এককথায় বলতে গেলে, “মরার উপর খরা”। অথচ পাশেই রয়েছে বাস ও ট্রাক টার্মিনাল।
তিনি বাঁধে সকল প্রকার যানবাহন পার্কিং কড়াকড়িভাবে নিষিদ্ধ করে দিয়ে, এই বাঁধটি বাঁচানোর সহ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়ার বিশেষভাবে দাবি জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি।
উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালের দিকে কর্ণফুলী নদীর উপর বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মানের ফলে পুরাতন রাঙ্গামাটি শহরসহ অন্যান্য এলাকা জলমগ্ন হয়। এতে বর্তমান জেলা প্রশাসক বাংলো, জেলা প্রশাসনের কার্যালয়সহ অন্যান্য সরকারী দপ্তরগুলো রিজার্ভ বাজার এলাকাসহ অন্যান্য স্থানে স্থানান্তর করা হয়। ওই সময়ে রিজার্ভ বাজার ও তবলছড়ির সাথে বনরুপার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সুবিধার জন্য ৭৮০ মিটার দৈর্ঘ্যর সংযোগ বাঁধ দেয়া হয়। যা বর্তমানে ফিসারী বাঁধ সংযোগ সড়ক হিসেবে পরিচিত। এই বাঁধটি একদিকে শহরের একমাত্র সংযোগ বাঁধ সড়ক হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে পর্যটন শহর হিসেবে বাঁধটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য শোভামন্ডিত করেছে।