রাহুল বড়ুয়া ছোটন, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামাঃ-পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেছেন, তিন পার্বত্য জেলায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। আধুনিক বান্দরবান বির্নিমানে সকল উন্নয়ন প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনুমোদন দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পার্বত্য অঞ্চলের বিষয়ে আলাদা নজর রয়েছে তাঁর। যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তিন পার্বত্য জেলা তথা বান্দরবান জেলা। শেখ হাসিনা ‘স্বপ্ন দেখান, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন’।
শনিবার (২ জুলাই) সকালে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বান্দরবানের লামা উপজেলার মাতামুহুরী নদীর উপর রুপসীপাড়া-শিলেরতুয়া সড়কে ১৮৪ মিটার আর সি সি গার্ডার ব্রীজের উদ্বোধন শেষে এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে পার্র্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি এমন মন্তব্য করেন।
এসময় তিনি আরো বলেন, বান্দরবানসহ ৩ পার্বত্য জেলায় এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে আর এই প্রকল্প গুলো বাস্তবায়ন হলে পার্বত্য এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড গুলো সকলের দৃশ্যমান হবে এবং প্রান্তিক জনগণ এর সুবিধা ভোগ করবে।
পার্বত্য মন্ত্রী আরো বলেন, পাহাড়ের একটি বাড়িও অন্ধকারে থাকবে না। প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হবে। দুর্গম পাহাড়ি গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলো এত দিন সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে রাতের আঁধারে ডুবে থাকতো, এখন তাদের ঘরেও আলো জ্বলবে। সেই আলোয় ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারবে। এত দিন যেটি তাদের কাছে স্বপ্নের মতো ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিতকরণ কর্মসূচির আওতায় বিদ্যুৎবিহীন দুর্গম পাহাড়ি পল্লীর বাসিন্দাদের ঘরে ঘরে এই সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘স্বপ্ন দেখান, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন’।
পার্বত্য মন্ত্রী আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যান্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্প-২য় পর্যায়” প্রকল্পের অধিনে নতুন করে লামা উপজেলার গজালিয়া ও রূপসীপাড়া ইউনিয়নে ২ হাজার ৭শত ৯৩টি পরিবারকে সোলার হোম সিস্টেম বিতরণ করা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে বান্দরবানের ৭টি উপজেলায় ৭টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, প্রতিটি উপজেলায় ৫০ শয্যা হাসপাতাল, জেলা সদরে ২০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল, জেলা সদর সহ ৭টি উপজেলায় মোট ১৪টি কলেজ, ১টি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিটি এলাকায় কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন করে ইউএনডিপি পরিচালিত ২১০টি স্কুলকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকারি ঘোষণা করেছেন এবং ৭১৪ জন শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়েছে।
তিনি এলাকাবাসীকে অনুরোধ করে বলেন, সরকার কর্তৃক প্রদানকৃত সকল উন্নয়ন সামগ্রীর সঠিক ব্যবহার ও সংরক্ষণ করতে হবে। নতুন করে মহামারি করোনা ও পাহাড়ে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। করোনা ঠেকাতে সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে ও ম্যালেরিয়া মোকাবেলায় সবাইকে মশারির সঠিক ব্যবহার করার অনুরোধ করেন।
পরে মন্ত্রী বান্দরবানের লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে ১৪ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর ও উদ্বোধন করেন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সোলার প্যানেল ও ঢেউটিন বিতরণ উপলক্ষে এক সভায় যোগ দেন।
এসময় মন্ত্রী স্থানীয় বাসিন্দাদের ৬২৫টি সোলার হোম সিস্টেম, ২০ বান টেউটিন, ৭০ জনকে কৃষি প্রণোদন এবং ২০টি সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রী প্রদান করেন।
এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য বাস্তবায়ন মো. হারুন-অর রশীদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল, লামা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামাল, লামা পৌর মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম, পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য মোজাম্মেল হক বাহাদুর, সদস্য ফাতেমা পারুল, গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মারমা, স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্র্বাহী প্রকৌশলী মো. জিলল্লুর রহমান, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মো.ইয়াছির আরাফাত, সহকারী প্রকৌশলী ত্রিদিপ ত্রিপুরাসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।