সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা ৪১, শনাক্ত ২২, আগুন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও নেভেনি

56

ডেস্ক রিপোর্টঃ-চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এখনো পুরোপুরি নেভেনি। কন্টেইনার ডিপো থেকে আগুনের ধোয়া বের হচ্ছে। বিস্ফোরণের ঘটনার পর দুই দিন পার হলেও টানা ৩৬ ঘণ্টা ধরে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ঘটনাস্থলে কাজ করছে সেনাবাহিনীও। কিন্তু এখনো আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
সোমবার (৬ জুন) সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ডিপোর ভিতরে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে ওপর থেকে এসব কনটেইনারে পানি ছিটাচ্ছে। রাসায়নিক মিশ্রিত পানি যাতে সমুদ্রে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য সেনা সদস্যরা কাজ করছে।
এদিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুনের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আগে ৪৯ বলা হলেও প্রকৃত সংখ্যা ৪১ বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সোমবার (৬ জুন) দুপুরে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
মো. মমিনুর রহমান বলেন, কন্টেইনার ডিপোতে আগুনের ঘটনার পর কিছু মরদেহ চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে একবার গণনা করা হয়। আবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও সেগুলো গণনা করা হয়। তাতে সংখ্যা বেড়ে ৪৯ হয়ে গিয়েছিল। আগের ৪৯ জনের তথ্য ভুল ছিল। আর শনাক্ত হয়েছে ২২ জনের লাশ। অন্যদিকে দগ্ধ ও আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে প্রায় ২০০ মানুষ। মৃতের স্বজনরা মরদেহগুলো ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিয়ে যেতে আকুতি জানিয়ে দৌঁড়ঝাঁপ করছেন।
রবিবার (৫ জুন) সন্ধ্যায় ৪৯ জন মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী। আহত অনেকের অবস্থা গুরুতর, মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, লাশের সারি আরও দীর্ঘ হতে পারে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
নিহত ফারুকের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিয়ে যাওয়ার আকুতিতে তার বাবা সাত্তার বলেন, আমারতো সব শেষ। আমার ছেলেটা কাজ করতে গিয়ে মরে গেল। এখন তার লাশটা নিয়ে যেতে চাচ্ছি। পোস্টমার্টম (ময়নাতদন্ত) ছাড়া লাশ নেওয়া যাচ্ছে না। ওকে কি আর পোস্টমার্টম করবে! শরীরে তো কিছুই নাই!
শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে লাগা আগুন এখনো জ্বলছে। আগুন নেভাতে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একযোগে কাজ করে চলেছেন।
সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের আরবান সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ টিমের প্রধান আরিফুল ইসলাম হিমেল বলেন, সকাল থেকেই আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। এখনও পুরোপুরি নেভেনি। কিছু কনটেইনারে এখনও আগুন জ্বলছে। সেনাবাহিনীর প্রায় ২০০ জনবল এখানে কাজ করছে।
ভয়াবহ এ দূর্ঘটনায় পরিচয় শনাক্ত হওয়া নিহত ২১ জন হলেন- বাঁশখালী উপজেলার ফরিদুল আলমের ছেলে মুমিনুল হক (২৪), মাহমুদুর রহমানের ছেলে মহিউদ্দিন (৩৪), দক্ষিণ বালিয়াপাড়ার সিহাব উদ্দিনের ছেলে হাবিবুর রহমান (২৩), চালিয়াপাড়ার আব্দুল আজিজের ছেলে রবিউল আলম (১৯), হাসান আলীর ছেলে তোফায়েল আহমেদ (২৩), আব্দুল রশিদের ছেলে আলাউদ্দিন (৩৫), নিজাম উদ্দিনের ছেলে আলাউদ্দিন (৩৫), নিজাম উদ্দিনের ছেলে সুমন (২৪), আবুল কাশেমের ছেলে ইব্রাহিম (২৭), মো. আসিফের ছেলে নয়ন (২২), দক্ষিণ হালিশহর এলাকার আব্দুল ছবুরের ছেলে হারুনুর রশিদ (৩৫), সামসুল হকের ছেলে মনিরুজ্জামান (৩২), সাত্তারের ছেলে ফারুক জমাদার (৫৫), আমিন উল্লাহ’র ছেলে শাহাদাত উল্লাহ (৩০), শাহ আলমের ছেলে শাহাদাত হোসেন (২৯), সোহরাব মিয়ার ছেলে তৌহিদুল হাসান (৪১), জাফর আহমদের ছেলে রিদুয়ান (২৪), আব্দুল সত্তার তরফদারের ছেলে শাকিল তরফদার (২২) চিত্তরঞ্জন চাকমার ছেলে নিপন চাকমা (৪৫), কামরুল মিয়ার ছেলে রানা মিয়া (২২), সোলাইমান মিয়ার ছেলে আফজাল (২০) ও আবু ইউসুফের ছেলে সালাউদ্দিন কাদের (৫০)।
বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ফায়ার সার্ভিসের ৯ সদস্যের মধ্যে ৮ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শহিদুল ইসলাম। শনাক্তকৃতরা হলেন- কুমিরা ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মো. রানা মিয়া, নার্সিং এটেনডেন্ট মনিরুজ্জামান, ফায়ার ফাইটার আলাউদ্দিন, ফায়ার ফাইটার শাকিল তরফদার, লিডার মিঠু দেওয়ান, সীতাকুন্ড ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, ফায়ার ফাইটার রমজানুল ইসলাম, লিডার নিপন চাকমা।
এদিকে পরিচয় শনাক্ত না হওয়া মরদেহ গুলোর ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চকবাজার জোনের সহকারী (এসি) কমিশনার শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পাঁচলাইশ থানা পুলিশ মরদেহের সুরতহাল তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) মর্গে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে মরদেহ শনাক্তের জন্য ডিএনএ সংগ্রহ করা হবে। যাদের স্বজন নিখোঁজ রয়েছেন তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।