তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনঃ বান্দরবানে আইন লংঘন করে জুম পাহাড়ে আগুন লাগিয়েছে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ

140
??????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????

বান্দরবান প্রতিনিধিঃ-বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের উপজাতি পাড়ার লোকজনের চাষাবাদের পাহাড়ি জমিতে আইন লংঘন করে অন্যায় ভাবে আগুন লাগিয়েছে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ। তারা ব্যক্তিগত বন্দোবস্তির পাহাড়কে চুক্তির শর্ত না মেনে ‘প্রাতিষ্ঠানিক’ দেখিয়ে সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছেদের লক্ষ্যে এ ধরনের অমানবিক কাজ করেছে। এতে করে লাংকম ম্রো পাড়া, রেংয়েন ম্রো পাড়া এবং জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়ার ৩৬ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছে।’
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অনন্যা কল্যাণ সংগঠন (একেএস) কর্তৃক গঠিত তদন্ত দল তদন্ত শেষে প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
বৃহস্পতিবার (১৯ মে) দুপুরে বান্দরবান সদরের একটি রেস্টুরেন্টে এ সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তদন্ত দলের সদস্য সমাজ কর্মী ইয়াংগান ম্রো।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, একেএস এর নির্বাহী পরিচালক ডনাইপ্রু নেলী, বিএনপিএস এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক সঞ্জয় মজুমদার, ক্ষতিগ্রস্থ পাড়া সমূহের ডলুছড়ি মৌজা হেডম্যানের পক্ষে সচিব যোহন ত্রিপুরা, তিন পাড়া কার্বারী লাংকম ম্রো, রেংয়েন ম্রো এবং জয়চন্দ্র ত্রিপুরা।
সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২৬ এপ্রিল রাতে বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের দুটি ম্রো ও একটি ত্রিপুরা পাড়া এলাকায় প্রায় সাড়ে তিনশ একর জুম পাহাড়ে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের লোকজন আগুন লাগিয়ে বাগান পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় তিন পাড়ার ৩৬ পরিবারের ২৬০জন মানুষ চরম বিপাকে পড়েন। এ ঘটনায় তোলপাড় হয়। পরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) এর সহযোগিতায়ব বান্দরবানের এনজিও একেএস গঠিত চার সদস্যের তদন্ত দল ১৭ মে সরেজমিন তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। উক্ত তদন্ত প্রকাশ উপলক্ষে বান্দরবানে সাংবাদিক সম্মেলন করে এ বিষয়ে তথ্য জানানো হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, তদন্ত দলের তদন্তে প্রতীয়মান হয় যে, সরই এর তিন পাড়ায় পাহাড়ি জমিতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ জড়িত। তারা অন্যায় ও কোনো প্রকার অধিকার ছাড়াই ব্যক্তিগত বন্দোবস্তির জমিকে নিজেদের দেখিয়ে দখলের চেষ্টা হিসেবে এ অগ্নিসংযোগ করা হয়।
তদন্ত বিষয়ে প্রতিনিধি দলের সদস্য ইয়াংগান ম্রো জানান, তদন্তে দেখা গেছে ১৯৯৩-৯৪ সালে রাবার বাগান সৃজনের জন্য লামার সরই ইউনিয়নের ৩০৩নং ডলুছড়ি মৌজায় মোট ৬৪ ব্যক্তি ২৫ একর করে ১৬০০ একর রাবার চাষ করার জন্য ৪০ বছরের ইজারা (বন্দোবস্তি) নেয় বান্দরবান জেলা প্রশাসন থেকে। ইজারার চুক্তির ২৮টি শর্তের মধ্যে অন্যতম একটি হলো ইজারা নেয়ার ১০ বছরের মধ্যে রাবার বাগান সৃজন করা না হলে স্বয়ংক্রিয় (অটোমেটিক) ভাবে ইজারা বাতিল হয়ে যাবে। এছাড়া ইজারা হয় ব্যক্তির নামে, কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে ইজারা দেয়া হয়না। কিন্তু ইজারা নেয়ার পর ইজারা গ্রহিতারা সেখানে বাগান সৃজন করেনি। কিন্তু প্রায় ২৯ বছর পর লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তিন পাড়াবাসীর জুম চাষ করে আসা ৪০০ একর বনাঞ্চল দখল করার লক্ষ্যে গত ২৬ এপ্রিল রাত ১০টার পর ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে বাগানগুলো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
তদন্ত আরো দল জানায়, তদন্তকালে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড জমি ইজারা নিয়েছে দাবি করলেও প্রকৃত পক্ষে তাদের ইজারার দলিল দেখালেও জমির অবস্থান বা জমি কোথায় সেটা দেখাতে পারেননি। ইজারা চুক্তির শর্তমতে কোনো ভাবেই লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ইজারা জমি দাবি করতে পারেন না।