কাপ্তাই কর্ণফুলি নদীতে গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে দুই পর্যটক নিহত

93

কাপ্তাই প্রতিনিধিঃ-রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ের সীতাঘাট এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে গোসল করতে নেমে পানিতে তলিয়ে গেছে ২ জন পর্যটক। কাপ্তাই নৌবাহিনীর ডুবরী দল ২ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে লোকাস বৈদ্য নামে একজনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করলেও অপূর্ব সাহা নামে অপর জনকে উদ্ধারে তৎপরতা চালিয়ে নিখোঁজের ১৫ ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার (১২ মে) সকাল সাড়ে ৬টায় অপূর্ব সাহার মৃত দেহ কাপ্তাইয়ের সীতাঘাট এলাকার কর্ণফুলি নদী হতে উদ্ধার করেছে কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স এর কর্মীরা। অপর একজনকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার শাহীন আলম। উদ্ধারকৃত অপূর্ব সাহা (১৯) চট্টগ্রাম মহানগর মাদারবাড়ী এলাকার মৃত অরুপ সাহার ছেলে। তাঁর পৈতিক বাড়ী ফেনীতে হলেও তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের মাদারবাড়ী এলাকায় বসবাস করে আসছেন।
বন্ধুরা জানায় বুধবার (১১ মে) বেলা তিনটার দিকে কর্ণফুলী নদীতে গোসল করতে নামে ৬ বন্ধু। বন্ধুদের সাথে গোসল করতে নেমে তার মধ্যে ৬ জনই পানিতে তলিয়ে যায়। এর মধ্যে তিনজন কোন ভাবে পাড়ে উঠতে সক্ষম হয়।
খবর পেয়ে কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ৩টা ১০ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে এসে মুমূর্ষ অবস্থায় একজনকে উদ্ধার করে কাপ্তাই উপজেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। বর্তমানে সেই সুস্থ আছেন বলে জানান উপজেলা সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এদিকে ঘটনার সংবাদ পাবার সাথে সাথে বিকেল ৪টা ৩৯ মিনিটে লেফট্যানেন্ট কমান্ডার ফয়জুল ইসলাম মন্ডলের নেতৃত্বে এবং লেঃ কমান্ডার সেলিম রেজাসহ ৮ সদস্যের একটি নৌ বাহিনী ডুবুরি দল সীতার ঘাট এলাকায় কর্নফুলি নদীতে নিখোঁজ পর্যটককের সন্ধ্যানে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন এবং বিকেল ৫টায় একজনকে মৃত উদ্ধার করেন।
জানা যায়, চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা থেকে ৬ জন পর্যটক কাপ্তাইয়ে বেড়াতে এসে কর্ণফুলী নদীতে গোসল করতে নামে। পরে দুজনকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। নৌবাহিনী, ডুবুরি নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান চালিয়ে নিখোঁজের ১৫ ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার (১২ মে) সকাল সাড়ে ৬টায় অপূর্ব সাহার মৃত দেহ কাপ্তাইয়ের সীতাঘাট এলাকার কর্ণফুলি নদী হতে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
প্রথমদিন মৃত উদ্ধারকৃত ১৯ বছর বয়সী যুবক লোকেস বৈদ্য, চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার শাকপুরা গ্রামের অপু বৈদ্যের ছেলে। সেই চট্টগ্রাম ইসলামিয়া কলেজে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন। বর্তমানে সে তার পরিবারসহ সদরঘাটে বসবাস করছেন। তার বাবা মৎস্য অধিদপ্তরে চাকরি করেন।
রাতে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান এবং কাপ্তাই সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওশন আরা রব এর উপস্থিতিতে চন্দ্রঘোনা থানা পুলিশ মৃত লোকেশ বৈদ্যের লাশ তাঁর পরিবারের সদস্যদের হাতে হস্তান্তর করেন।
কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর পরিদর্শক নুরুল করিম বলেন, ৬ বন্ধু কাপ্তাইয়ে বেড়াতে কর্ণফুলী নদীতে গোসল করতে নামে তাদের মধ্যে ৪ জন সাতঁরিয়ে পাড়ে উঠতে পারলেও ২ জন নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। একজনকে উদ্ধার করলেও অপরজনকে বৃহস্পতিবার (১২ মে) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ৯নং শিলছড়ি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ সরোয়ার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার (১২ মে) সকাল সাড়ে ৫টায় জেলেদের মাছ ধরার রশির টানের সাথে ভেসে উঠে নিখোঁজ অপূর্ব সাহার লাশ। পরে সাড়ে ৬টার দিকে কাপ্তাই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে লাশটি উদ্ধার করে চন্দ্রঘোনা থানা পুলিশ এর নিকট হস্তান্তর করেন।
এদিকে ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর পরই কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান ও কাপ্তাই সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রওশন আরা রব ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং উদ্ধার কার্যক্রম তদারকি করেন। এই সময় চন্দ্রঘোনা ও কাপ্তাই থানার পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার কার্যক্রমে সহায়তা করেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে যোগাযোগ করা হলে চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, নিহত অপূর্ব সাহার পরিবারের পক্ষ হতে কোন রকম আপত্তি না থাকায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা নিয়ে তাঁর লাশটি তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর একই এলাকায় গোসল করতে নেকে একজন পর্যটক নিখোঁজ হয়। সাতার না জানা পর্যটকদের কাপ্তাই হ্রদের পানি না নামার নিষেধ থাকলেও বেড়াতে আসা পর্যটকরা হ্রদে গোসল করতে নেমে বিপদ ডেকে আনছে।