পর্যটক বরণে প্রস্তুতঃ ঈদে করোনার ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় রাঙ্গামাটি পর্যটন কেন্দ্রগুলো

294

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙ্গামাটিঃ-মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে গত দুই বছর ঈদ কেটেছে মানুষ ঘরবন্দি হয়ে। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। সংক্রমণ কমায় এরই মধ্যে জনজীবন অনেকটা স্বাভাবিক। তাই আসছে ঈদুল ফিতর ঘিরে রাঙ্গামাটি পর্যটনখাত ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
এরইমধ্যে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত রয়েছে জেলার আবাসিক হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট, পর্যটন কেন্দ্র ও রিসোর্টগুলো। করোনা বিধিনিষেধ না থাকায় অনেকে এবার ঈদের ছুটিতে দেশের বাইরে ভ্রমণের পরিকল্পনাও করছেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় ঈদের এই লম্বা ছুটিতে যান্ত্রিক জীবনের একটু ক্লান্তি দুর করতে বিনোদনের খোঁজে মানুষ ছুটে আসছেন পাহাড় হ্রদ ঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক লীলাভুমি রাঙ্গামাটিতে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২ বা ৩ মে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে। এবার ঈদে ৫ মে ছুটি নিলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টানা ৯ দিনের ছুটি পাবেন। একই পরিস্থিতি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও। ফলে ঈদ কেন্দ্রিক লম্বা ছুটির সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রমোদ ভ্রমণে সময় কাটাবেন।
আঁকাবাঁকা ও উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ বেয়ে রাঙ্গামাটি শহরে এসে পর্যটনের ঝুলন্ত সেতু, শুভলং ঝর্না, পলওয়েল, রাজবন বিহার, জেলা প্রশাসনের বাংলো, আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কের কাপ্তাই হ্রদের গড়ে উঠা বেসরকারী পর্যটন বেরান্নে, বড়গাঙ, রান্ন্যাতুগুন এবং আদিবাসী শান্ত সবুজ গ্রাম ও তাদের জীবন যাত্রা, নৌ ভ্রমনসহ নানান স্পটে ঘুরে দেখেন পর্যটকরা। এছাড়াও রাঙ্গামাটি শহরের বাইরে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকে মনোরম পর্যটন স্পট, কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে উঠা আকর্যনীয় পর্যটন স্পট, কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, কর্ণফূলী পেপার মিলস্ ও কাপ্তাই জাতীয় উদ্যোন ইত্যাদি।আর এসব স্পটে পর্যটক বরণে নেয়া হয়েছে বাড়তি প্রস্তুতি। পাশাপাশি থাকার হোটেলেও তাদের দায়িত্ব সেরে নিয়েছে।
রাঙ্গামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দিন সেলিম জানান, শহরে ৫৩টি আবাসিক হোটেল রয়েছে। হোটেলগুলোতে প্রায় পাঁচ হাজার অর্ডার রাখা যায়। করোনাকালের কঠিন সময়ে হোটেলগুলো দুঃসহ সময় পার করেছে, অনেকেই হোটেল বন্ধও রেখেছে। আশা করছি, এ মৌসুমে সবাই কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াবে।
রাঙ্গামাটি পর্যটন ঘাটের ব্যবস্থাপক রমজান আলী জানান, এর মধ্যেই বেশির ভাগ বোটই প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ সেরে নিয়েছে। কেউ রং করেছে, কেউ সিট বা সিটের গদি বদলেছে। অনেকেই লাইফ জ্যাকেট কিনেছে নতুন করে কিংবা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে নিয়েছে। সব মিলে প্রস্তুতি কমবেশি সবাই নিয়ে রেখেছে।
রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, ঈদের পর দীর্ঘ ছুটি থাকায় ভালো ব্যবসা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের অধিকাংশ রুম বুকিং হয়েছে। আশা করছি, বাকিগুলোও এই দুই-একদিনের মধ্যে বুকিং হয়ে যাবে। বছরের এ সময়টার জন্য আমরা এমনিতেই প্রস্তুত থাকি। এ বছরও ব্যতিক্রম হবে না। তবে ঈদের পর পর্যটকদের বাড়তি চাপ থাকবে। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে পরবর্তী টানা পাঁচ-সাতদিন এ চাপটা থাকতে পারে।
এদিকে ঈদে রাঙ্গামাটিতে প্রচুর পর্যটক আসবে বলে ধরণা করা হচ্ছে। তাই পর্যটকরা যেন কোনো রকম হয়রানি শিকার না হয় সে বিষয়ে নজর রেখেছে পুলিশ প্রশাসন। পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
আর এই নয় দিনে ঈদের ছুটিতে ভ্রমণ পিপাসুরা আগমন ঘটবে পাহাড়ে, এ আনন্দ ভাগাভাগি করতে সবাই ছুটবে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। ছুটিতে কাপ্তাই হ্রদ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙ্গামাটিতে ছুটে আসবেন পর্যটকেরা। দীর্ঘদিন করোনার কারণে মন্দা কাটিয়ে আবারও পাহাড়ের পর্যটন অর্থনীতি চাঙা হবে এমনটাই আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।