রাজস্থলী অনাথের পরিচালকের পাশাপাশি বন্য প্রাণীদের সেবক ভদন্ত উঃ খেমাচারা মহাথের

81

হারাধন কর্মকার, রাজস্থলীঃ-রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া এলাকার ডাকবাংলা আগা পাড়া বৌদ্ধ কল্যান অনাথালয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও নাইক্যছড়া দৃষ্টি নন্দন বৌদ্ধ বিহারের বিহার অধ্যক্ষ উঃ খেমাচারা মহাথের অনাথ ছাত্রদের পরিচালকের পাশাপাশি বন্যপ্রানীদের ও একজন পরম সেবক। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়। অধিকাংশ শিকারীরা পাখিসহ বন্যপ্রানী শিকার করে মেরে ফেলেন খাওয়ার জন্য। এতে করে পার্বত্য চট্টগ্রামে দিন দিন বন্যপ্রানী বিলুপ্তের পথে। কিন্তু বাঙ্গালহালিয়া আগা পাড়া বৌদ্ধ কল্যান অনাথালয়ে গেলে দেখা মিলে ভিন্ন শিক্ষনীয় চিত্র।
গত কয়েক বছর ধরে দেখা মিলে দৈনিক প্রভাতে ও পরন্ত বিকালের দিকে আশ্রম প্রাঙ্গণে বিভিন্ন ধরনের পাখিদের কিচিমিচি। তাদের মুখের বুলিতে যেন শুনাযায় প্রচন্ড ক্ষুধাত্ত পাখি গুলো। দৈনিক প্রভাতে ও বিকালে প্রায় দুই থেকে তিনশতটি পাখিকে পাউরুটি, বিস্কুট টুকরো টুকরো করে খাবার দিয়ে থাকে গুরু ভান্তে উঃ খেমাচারা মহাথের। এতে করে এক মানবতার দৃষ্টান্তর স্থাপন করেছেন ভদন্ত উঃ খেমাচারা মহাথের। বর্তমানে আশ্রমটিতে থেকে তিন পার্বত্য জেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের ছাত্ররা আবাসিক ভাবে থেকে লেখা পড়া করার সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের ভরনপোষণ, স্থানীয় স্কুলে ভর্তিসহ যাবতীয় দেখভাল করেন ভদন্ত উঃ খেমাচারা মহাথের। যিনি সকলের কাছে একজন গুরু ভান্তে নামে সু-পরিচিত।
বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আদোমং মারমা জানান, উঃ খেমাচারা মহাথের একজন প্রকৃত ধর্মীয় সাধক, যিনি বিগত ৫ দশকের অধিক সময় ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে এমনকি বৌদ্ধ ধর্মীয় বাণীর আলো এবং মানবতার জয়গান মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে নিরলস ভাবে কাজ করছে। যিনি রচনা করেছেন অসংখ্য ধর্মগ্রন্থ, রচনা করেছেন বহুবৈদিক সংগীত। যাঁর হাজার হাজার ভক্ত শীর্ষ রয়েছে বাংলাদেশ সহ দেশের বাহিরে। যিনি একজন মানবতার পুজারি হিসাবে তাঁর কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করে আসছেন।
কে এই ভদন্ত উঃ খেমাচারা মহাথের ?
রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নে নাইক্যছড়া পাড়ার স্বর্গীয় পিতা-পাইউখই মারমা ও স্বর্গীয় মাতা-রেডাক মা মারমার গর্ভে জন্মগ্রহন করেন এই ভদন্ত উঃ খেমাচারা মহাথের। খেমাচারা মহাথের জানান, ১৯৬৪ সনে নিজ জম্মস্থান নাইক্যছড়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেনী হইতে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত ছিলাম। ১৯৬৬ সনে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত রাইখালী কারিগর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। ১৯৬৭ সনে চট্রগ্রাম শহর লাভলেইন রোডস্থ ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেনী শেষ করে। ১৯৬৮ সন হইতে ১৯৭০ সন পর্যন্ত চট্রগ্রাম শহর চেড়াগী পাহাড় মোমিন রোড কদম মোবারক মিউনিসিপালিটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যায়নরত ছিলেন। তখন থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রাম শুরু হয়। চট্টগ্রাম শহরে প্রতিটি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে হয়। তার মধ্যে আমিও একজন। যেহেতু আমি ঐ স্কুলের ছাত্র ছিলাম। ১৯৭১ সালের শেষের দিকে পিতা-মাতার অনুরোধ বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা অধ্যায়ন করতে মায়ানমার যেতে হয়। ধর্মীয় শিক্ষা অধ্যায়ন করে আধ্য মধ্যম পরিক্ষা অংশগ্রহণে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে উত্তীর্ণ হয়। ১৯৮৯ সনে নিজ জম্ম ভুমি বাংলাদেশে ফিরে এসে পুনঃ রায় সাধারণ শিক্ষায় অধ্যায়ন করি। ১৯৮৩ সনে বাঙ্গালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস এস সি পাশ করি। দীক্ষা শুরু, প্রয়াত উঃ চান্দবাসা মহাস্থবির নিকট থেকে। শ্রামন্য জীবন, শ্রামন্য জীবন অবস্থায় উভয় ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষা গ্রহন করেন। সামাজিক প্রতিষ্ঠানে উঃ খেমাচারা মহাথের অবদান বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন মুলক কার্যক্রমের পাশাপাশি বাঙ্গালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং বাঙ্গালহালিয়া সরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা দাতা ও একাধিক গভর্নিং বোর্ডের সভাপতি, নাইক্যছড়া আগা পাড়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ, বান্দরবান পার্বত্য ভিক্ষু পরিষদের আজীবন উপদেষ্টা এবং মানব সেবায় উদ্যোগি হয়ে নিজ পদক্ষেপে বাঙ্গালহালিয়া আগা পাড়া বৌদ্ধ কল্যান অনাথালয় টি ১৯৮২ সনে প্রতিষ্টি করেন। মানবসেবায় অবদানে ২০১৩ সনে মায়ানমার সরকার কর্তৃক উপাধি প্রদান করেন মহাসদ্ধম জ্যোতিকা ধ্বজা উপাধিতে ভূষিত। উঃ খেমাচারা মহাথের। রাঙ্গামাটি জেলার সংসদ সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির দীপংকর তালুকদার এমপি বলেন আসলে উঃ খেমাচারা মহাথের একজন প্রকৃত মানব সেবক। প্রতি বছরে নাইক্যছড়া আগা পাড়ায় ভান্তের আচারিয়া গুরু পুজা আয়োজন করেন বিহারের দায়ক-দায়িকারা। পুজায় তিন পার্বত্য জেলার হাজার হাজার দায়ক -দায়িকাদের সমাগম ঘটে। বিশেষ করে নাইক্যছড়া আগা পাড়া বৌদ্ধ বিহার টি একটি দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধ বিহারের রুপান্তরিত করেছেন উঃ খেমাচারা মহাথের।