ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীত রচয়িতা ও গায়ক বাপ্পি লাহিড়ী ও বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পরলোকগমন

94

ডেস্ক রিপোর্টঃ-চলে গেলেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও সুরকার বাপ্পী লাহিড়ী ও উপমহাদেশের বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বাপ্পী লাহিড়ী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।
গত বছর এপ্রিলে করোনা আক্রান্ত হয়ে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাপ্পী লাহিড়ী। কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে বাড়িও ফেরেন তিনি। আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে সোমবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
১৯৭০ থেকে ৮০-এর দশকে হিন্দি ছায়াছবির জগতে অন্যতম জনপ্রিয় নাম বাপ্পী লাহিড়ীর। হিন্দিতে ‘ডিস্কো ডান্সার’, ‘চলতে চলতে’, ‘শরাবি’, বাংলায় অমর সঙ্গী, আশা ও ভালবাসা, আমার তুমি, অমর প্রেম প্রভৃতি ছবিতে সুর দিয়েছেন। গেয়েছেন একাধিক গান। ২০২০ সালে তাঁর শেষ গান ‘বাগি-৩’ এর জন্য। কিশোর কুমার ছিলেন, বাপ্পীর সম্পর্কে মামা। বাবা অপরেশ লাহিড়ী ও মা বাঁশরী লাহিড়ী দু’জনেই সঙ্গীত জগতের মানুষ। ফলে একমাত্র সন্তান বাপ্পী ছেলেবেলা থেকেই গানের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। মা, বাবার কাছেই পান প্রথম গানের তালিম। মা-বাবা নাম দিয়েছিলেন অলোকেশ, কিন্তু জনপ্রিয়তা পান বাপ্পী নামে।
১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বাপ্পী। তার পর দীর্ঘদিন বাংলা ও হিন্দি ছবির গান গেয়েছেন। সুর দিয়েছেন। শরীরে প্রচুর সোনার গয়না পরতে ভালবাসতেন। বলতেন, ‘আমার ভগবানের নাম সোনা!’ ছিল গায়কীর নিজস্ব কায়দা, যা তাকে হিন্দি ছবির জগতে পরিচিতি দিয়েছিল। পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার এবং সম্মান।
বাপ্পী লাহিড়ী রাজনীতিতেও নেমেছিলেন। বিজেপি-তে যোগ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর কেন্দ্র থেকে ভোটেও লড়েছিলেন। কিন্তু রাজনীতিতে কখনওই স্বচ্ছন্দ বোধ করেননি বাপ্পী।
অন্যদিকে উপমহাদেশের বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আর নেই। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই।
দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন এই উপমহাদেশের বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
গত ২৬ জানুয়ারি অসুস্থ হয়ে পড়েন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। পরদিন তাকে গ্রিন করিডোর করে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছিল তার।
৫০ বছরেরও বেশি সময় বিভিন্ন ভাষার ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ছবির গানের পাশাপাশি বাংলা আধুনিক গান ও ধ্রুপদী সঙ্গীতেও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবর দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার সঙ্গীত শিক্ষার মূল কান্ডারি ছিলেন দাদা রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। ১৯৪৫ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রথম গান রেকর্ড করেন তিনি। কলম্বিয়া থেকে তার প্রথম রেকর্ড করা গান গিরীন চক্রবর্তীর কথায় ও সুরে ‘তুমি ফিরায়ে দিয়াছ’ ও ‘তোমার আকাশে ঝিলমিল করে’।
১৯৪৮ সালে প্রথমবার রাইচাঁদ বড়ালের সঙ্গীত পরিচালনায় প্লেব্যাক করেন, ছবির নাম ‘অঞ্জনগড়’। ওই একই বছরে আরও তিনটি আধুনিক গান রেকর্ড করে সঙ্গীতজগতে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেন ভবিষ্যতের কিংবদন্তি।
১৯৭১ সালে ‘জয়জয়ন্তী’ ও ‘নিশিপদ্ম’ ছবিতে গান গেয়ে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ১৯৯৯ সালে ‘লাইফটাইম অ্য়াচিভমেন্ট’-এর জন্য ভারত নির্মাণ পুরস্কার পান। ২০১১ সালে বঙ্গবিভূষণ সম্মান পান তিনি। ২০২২ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এতদিন সে সম্মান তাকে না দেওয়ায় অভিমানে পদ্মশ্রী প্রত্যাখান করেন উপমহাদেশের এই বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী।