করোনায় বিপর্যস্ত রাঙ্গামাটির পর্যটন খাত দিশেহারা ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা

140

মোহাম্মদ সোলায়মান, রাঙ্গামাটিঃ-মহামারী করোনার থাবায় বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে রাঙ্গামাটির পর্যটন ব্যবসা। করোনার শুরু থেকে বিভিন্ন সময়ে দফায় দফায় লকডাউন ও বিধিনিষেধের কারণে রাঙ্গামাটির পর্যটন ব্যবসায় ধ্বস নামে। মাঝখানে ধকল কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করলেও গেল ডিসেম্বর মাসে অমিক্রনের বিস্তার বেড়ে যাওয়ায় আবারো মুখ থুবড়ে পড়েছে জেলার পর্যটন খাত। পর পর কয়েকটি মৌসুমে মার খেয়ে পর্যটন ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। এতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ব্যবসা মন্দা হওয়ায় পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ অবস্থায় পর্যটন খাতে বড় ধরনের ধ্বস নামার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। ধ্বস ঠোকাতে এ খাতে প্রণোদনার দাবি উঠেছে।
পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির অর্থনীতি অনেকটা পর্যটন নির্ভর। সম্ভাবনাময় এ খাতে জড়িয়ে পড়েছে বহু ব্যবসায়ী ও শ্রমিক। পর্যটকদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আবাসিক হোটেল, রিসোর্ট, হোটেল, রেষ্টুরেন্ট, টুরিষ্ট বোর্ট, টুরিষ্ট গাইড, উপজাতীয় বস্ত্র বিতান ও বেসরকারী পর্যটন স্পট। এছাড়াও স্থানীয় অটোরিক্সা চালক, মৌসুমী ফল ব্যবসায়ীরাও অনেকটা নির্ভর করে পর্যটকদের উপর। এসব ব্যবসার সাথে ব্যবসায়ীরা ছাড়াও জড়িয়ে আছে তিন হাজারের অধিক কর্মচারী।
২০২০ সালে দেশে করোনার বিস্তার শুরু হবার পর থেকে ধাক্কা লাগে রাঙ্গামাটির পর্যটন ব্যবসায়। ঈদু পুজা, বিজয় দিবস সহ শীতের ভরা মৌসুমে মার খায় রাঙ্গামাটির পর্যটন ব্যবসা। পর্যটক না আসায় ধারাবাহিক মন্দা চলে এ খাতে। ফলে ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের অনেকে ব্যবসা পরিবর্তন করেছে। বন্ধ হয়ে গেছে বহু রেস্টুরেন্ট ও হোটেল। ক্ষতির খাতায় হিসেব লিখছেন স্থানীয় উপজাতীয় বস্ত্র বিতানগুলো। এসব খাতের কর্মীরা কাজ হারিয়ে অনেকে মানবেতর জীবন যাপরন করেছে।
রাঙ্গামাটি টুরিষ্ট বোট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রমজান আলী জানান, ১৫০ শতাধিক পরিবার জড়িত রয়েছে টুরিষ্ট বোটের সাথে। গত দুই বছর যাবৎ পর্যাপ্ত পর্যটক না আসায় এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। সরকার এ খাতে প্রণোদনা না দিলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি।
শহরের অটোরিক্সা চালক সেলিম জানান, পর্যটক না থাকায় ভাড়া পাচ্ছে না অটোরিক্সা চালকরা। এখন আর অটো চালিয়ে সংসার চালানো যাচ্ছে না। একইভাবে হাতাশার কথা জানালেন উপজাতীয় বস্ত্র বিক্রেতা বাবুল চাকমা। তিনি বলেন, বেচাবিক্রি বলতে কিছুই নেই। প্রতিদিন দোকানখুলি কতটাকা লস হলো সে হিসেব লেখার জন্য। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা ছেড়ে দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
রাঙ্গামাটি চেম্বার অব কমার্স সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদু জানান, করোনার পর থকে রাঙ্গামাটি সার্বিক ব্যবসা বাণিজ্য মন্দা চলছে। বিশেষ করে পর্যটন ব্যবসায় মারাত্মক ধ্বস নেমেছে। এ খাতের উদ্যোক্তরা পুঁজি হারাতে বসেছে। শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। তিনি জানান ইতোমেধ্য বহু শ্রমিক রাঙ্গামাটি ছেড়ে গেছেন। এ খাতে সরকারী প্রণোদনা সহ উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান তিনি।