ডেস্ক রিপোর্টঃ-দীর্ঘ সাত দশক ভারতীয় উপমহাদেশের সংগীতভক্তদের সুরের মায়াজালে বেঁধে রেখে চিরবিদায় নিলেন কিংবদন্তি শিল্পী লতা মঙ্গেশকর। উপমহাদেশের সংগীতের এই প্রবীণ মহাতারকার জীবনের অবসান হলো ৯২ বছর বয়সে।
কোভিডে আক্রান্ত হয়ে প্রায় চার সপ্তাহ মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন কোকিলকণ্ঠী এই শিল্পী। শেষ পর্যন্ত সব চেষ্টা ব্যর্থ করে পরলোকে চলে যান কিংবদন্তিতুল্য এ শিল্পী।
রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারী) সকালে সেখানেই তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে পিটিআই। ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের পাশপাশি এ খবর নিশ্চিত করেছেন ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এন সান্থানামাও।
গত শতকের চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শুরু করা লতা অল্প সময়েই হয়ে উঠেছিলেন অপরিহার্য একটি নাম।
গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার বলেছিলেন, “মাইকেল অ্যাঞ্জেলো মানেই যেমন চিত্রকলা, শেক্সপিয়ার মানেই যেমন ইংরেজি সাহিত্য, তেমনই ভারতীয় সিনেমার গান মানেই লতা মঙ্গেশকর।”
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে হাজারের বেশি সিনেমায় গান করেছেন লতা। ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষার পাশাপাশি বিদেশি ভাষাতেও তিনি গান করেছেন। অনেকের বিচারে ভারতের সর্বকালের সেরা সংগীত শিল্পীদের একজন তিনি।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে পর গত ১১ জানুয়ারি ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল লতা মঙ্গেশকরকে। করোনা ভাইরাসমুক্ত হওয়ার পর অবস্থার কিছুটা উন্নতিও হয়েছিল। কিন্তু পরে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। অবস্থার অবনতি হলে শনিবার তাকে আইসিইউতে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়।
শনিবার সন্ধ্যায় তাকে দেখতে হাসপাকতালে যান বোন আশা ভোঁসলে। বলিউডের আরেও অনেকেই ছুটে যান এই মহাতারকার খোঁজ নিতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই জানান শুভকামনা। কিন্তু সবাইকে শোকে ভাসিয়ে রোববার সকালে চিরবিদায় নিলেন এ শিল্পী।
সাত দশক ধরে দর্শক ও সমালোচক হৃদয় তৃপ্ত করে চলা সংগীতের এই মহাতারকা ১৯২৯ সালে ভারতের ইন্দোরে জন্মেছিলেন। কিন্তু তাঁর সংগীত ভারত ছাপিয়ে তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে বিশ্বসংগীতের দরবারে। লতা মঙ্গেশকর ২০০১ সালে ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ভারতরত্ন অর্জন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন।
ভারতরত্নলতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে টুইট করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উপমহাদেশের কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী ভারতরত্ন লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোক বার্তায় বলেন, এই সুর সম্রাজ্ঞীর মৃত্যুত উপমহাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হলো। তিনি আরও বলেন, লতা মঙ্গেশকর তাঁর কর্মের মধ্যদিয়ে চিরদিন এ অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এদিকে, কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে ভারত জুড়ে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার।
রবিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় লতার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। সর্বকালের অন্যতম সেরা এই সংগীত শিল্পীর সম্মানে ভারতের জাতীয় পতাকা দুই দিন অর্ধনমিত রাখা হবে।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে হাজারের বেশি সিনেমায় গান করেছেন লতা। ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষার পাশাপাশি বিদেশি ভাষাতেও তিনি গান করেছেন। অনেকের বিচারে ভারতের সর্বকালের সেরা সংগীত শিল্পীদের একজন তিনি।
আকাশ ছোঁয়া খ্যাতির পথে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। ১৯৮৯ সালে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে পাওয়া এই শিল্পীকে ১৯৬৯ সালেই পদ্মভূষণে ভূষিত করেছিল ভারত সরকার। ১৯৯৯ সালে তিনি পদ্মবিভূষণ এবং ২০০১ সালে সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ভারতরতœ দেওয়া হয় তাকে।