নানিয়ারচর চেঙ্গী সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়েই পাহাড়ে যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচিত

511

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙ্গামাটিঃ-রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় দীর্ঘদিনের কাঙ্খিত চেঙ্গী সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে নানিয়ারচর উপজেলাসহ রাঙ্গামাটির অন্যান্য উপজেলার লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। বুধবার (১২ জানুয়ারী) সকালে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নানিয়ারচর উপজেলায় চেঙ্গী সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুটি উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
আর পার্বত্য অঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই চেঙ্গী সেতু উদ্বোধন হওয়ায় রাঙ্গামাটি জেলা সদরের সাথে নানিয়ারচর উপজেলার নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো। যা ভবিষ্যতে লংগদু উপজেলা হয়ে মাইনি নদীর উপর দুইটি দীর্ঘ সেতু নির্মানের মাধ্যমে মারিষ্যা পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করবে। এর ফলে পার্বত্য অঞ্চলের প্রত্যাশা পূরণ, প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাণ সঞ্চায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের পথে একধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। আর সেতু পেয়ে খুশি সাধারন মানুষ।
সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের তত্বাবধানে এবং ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়নের সকল সদস্যদের দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রকল্পটি নির্দিষ্ট সময়েই সেতুর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করা হয়।
রাঙ্গামাটি-নানিয়ারচর সড়কে চেঙ্গী নদীর ওপর নির্মিত ‘চেঙ্গী সেতু’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রাঙ্গামাটি নানিয়ারচর প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি, কক্সবাজার ১ আসনের এমপি সাইমুম সোরোয়ার, অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোঃ সাইফুর রহমান এনডিসি এফ ডব্লিউসি, পিএসসি, মহিলা সংসদ সদস্য বাসন্তি চাকমা, মোহাম্মদ সাইফুল আবেদীন, এনডিসি, পিএসসি, জিওসি ২৪ পদাতিক ডিভিশন চট্টগ্রাম, বিএ-৩৪৮১ মেঃ জেঃ মোহাম্মদ ফখরুল আহসান, বিএসপি, এনডিইউ, পিএসসি, জিওসি ১০ পদাতিক ডিভিশন রামু কক্সবাজার, বিএ-৪৭৭৬ ব্রিঃ জেঃ মোহাম্মদ ইমতাজ উদ্দিন এনডিসি, পিএসসি, ৩০৫ পদাতিক ব্রিগেড কমান্ডার রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা, বিএ- ৪৯০১ ব্রিঃ জেঃ মোহাম্মদ মনজুরুল ইসলাম এনডিসি, পিএসি ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনট্রাকশন ইষ্ট ব্রিগেড কমান্ডার চট্টগ্রাম, বিএ-৫৫০৯ কর্ণেল খন্দকার তারিকুল ইসলাম এফ ডাব্লিউ সি, পিএসসি, কর্ণেল জিএস, ডিজিএফআই রাঙ্গামাটি, ডেড কমান্ডার, বিএ-৫১৬৩ কর্ণেল মোহাম্মদ সাইফুর রহমান এস ইউপি, এ এফ ডাব্লিউ সি, পিএসসি, এডিজি ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ইষ্ট ব্রিগেড কমান্ডার চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) উপাচার্য ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, বিএ ৬৫০০ লেঃ কর্ণেল মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন দিদার পিএসসি, অধিনায়ক ২০ ইসিবি ডবলমুড়ি চট্টগ্রাম, নানিয়ারচর আর্মি জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (সিও) রুবাইয়াত হুসাইন পি এস সি, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন, রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহ আরেফিন, নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলি রহমান তিন্নিসহ পদস্থ কর্মকর্তারা।
সেনাবাহিনীর ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটেলিয়ান (ইসিবি) ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরের চেঙ্গী নদীর ওপর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য এই লেন সংখ্যা ২টি। যার মধ্যে ৭.৩ মিটার ক্যালেঞ্জওয়ে রয়েছে। এছাড়া ১০ স্প্যান ও ৯পিয়ার সম্বলিত এই সেতুটিতে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে সেতুর ২টি এ্যাবাটমেন্ট রক্ষাপ্রদ কাজ, ২.২ কিলোমিটার এপ্রাচ সড়ক এবং সড়ক বিভাগের একটি ডাক বাংলালো। এই সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ১২৭.৬১ কোটি টাকা।
দীর্ঘদিন একটি সেতুর অভাবে নদী পথে যাতায়াতে দূর্ভোগ পোহাতে হতো কয়েক লাখ মানুষকে। সেতুটি চালু হওয়ায় দীর্ঘদিনের যোগাযোগে ভোগান্তি কমলো। সেতু উন্মুক্ত হওয়ায় পাহাড়ের ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতির পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। তেমনী এ সেতুটি নির্মিত হওয়ায় রাঙ্গামাটি জেলা সদরের সাথে নানিয়ারচর, লংগদু, বাঘাইছড়ি, সাজেক এবং খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলা পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হয়ে উঠলো। পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে পাহাড়ে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল।