স্ব-স্ব মাতৃভাষায় নিয়োগকৃত শিক্ষকদের দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে-মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু

88

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ-খাগড়াছড়িতে সেতু-এমএলই প্রকল্প, জাবারাং কল্যাণ সমিতি’র কর্তৃক আয়োজিত এবং এফডিসি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’র অর্থায়নে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাতৃভাষায় শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন, অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নির্ধারণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে জাবারাং কল্যাণ সমিতি’র সভাপতি এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু। এ সময় জাবারাং কল্যাণ সমিতি, সেতু-এমএলই প্রকল্প সমন্বয়ক বিনোদন ত্রিপুরা’র সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাবারাং কল্যাণ সমিতি, সেতু-এমএলই’র প্রজেক্ট অফিসার জোনাকি ত্রিপুরা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাতৃভাষায় শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন, অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নির্ধারণ বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা।
সেমিনারে উন্মুক্ত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাবের ফলে এ শিক্ষা কার্যক্রম শিশুদের জন্য বোঝা হতে পারে। শিক্ষকদের দীর্ঘমেয়াদী প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকায় এ জেলার আদিবাসী শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় পাঠদান ব্যাহত হবে। যা আমরা বিগত বছরগুলোতে দেখতে পেয়েছি। ২০১৯ সালে এ পাঠ্যক্রম প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হলেও অভিজ্ঞ শিক্ষকের আলোর মুখ দেখছে না মাতৃভাষায় পাঠদান কার্যক্রম। ফলে সরকারের এ প্রশংসনীয় উদ্যোগটির কোনো সুফল পাচ্ছে না পাহাড়ের তিন ভাষাভাষী ত্রিপুরা, চাকমা ও মারমা শিক্ষার্থীরা।
বক্তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে ২০১৭ সালে স্ব-স্ব মাতৃভাষায় পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত হলেও খাগড়াছড়িতে কর্মরত প্রাথমিক শিক্ষকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ না থাকায় এ উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছিল। ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে টানা তৃতীয়বারের মতো আদিবাসী শিক্ষার্থীদের হাতে মাতৃভাষায় রচিত পাঠ্যপুস্তক তুলে দেয়া হয়। তারা স্ব-স্ব মাতৃভাষার বই পেয়ে শিক্ষার্থীরাও উচ্ছ্বসিত। কিন্তু শিক্ষক সঙ্কটে বঞ্চিত হচ্ছে এসব শিক্ষার্থীরা। বছরের প্রথম দিন স্ব-স্ব মাতৃভাষায় রচিত বই হাতে পেলেও প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকায় পাঠদান কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত অনেকে।
তারা আরও জানান, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে ২০১৭ সালে স্ব-স্ব মাতৃভাষায় পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত হলেও খাগড়াছড়িতে কর্মরত প্রাথমিক শিক্ষকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ না থাকায় এ উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে। ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯সাল পর্যন্ত টানা তৃতীয়বারের মতো খাগড়াছড়িতে ত্রিপুরা, চাকমা ও মারমাদের মাতৃভাষায় রচিত পাঠ্যপুস্তক তুলে দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের হাতে।তখন স্ব-স্ব মাতৃভাষার বই পেয়ে শিক্ষার্থীরাও উচ্ছ্বসিত হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষক সংকট ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের অভাবে বঞ্চিত হচ্ছে এসব শিক্ষার্থীরা। তাই স্ব-স্ব মাতৃভাষায় পাঠদানকারী শিক্ষকদের দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পাঠদানের সুযোগ করে দেয়ার জন্য আহ্বান জানান বক্তারা। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, শিক্ষার গুণগত উন্নয়নের জন্য আমাদের সকলকে একসাথে কাজ করে যেতে হবে। স্কুলের কোমলমতী শিক্ষার্থীরা পহেলা জানুয়ারি থেকে তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষা সংবলিত বই হাতে পাবে। তারা তাদের স্ব-স্ব মাতৃভাষায় পাঠদান করতে পারবে। এর জন্য স্ব-স্ব মাতৃভাষায় নিয়োগকৃত শিক্ষকদের দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন বলে জানান তিনি।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ বশিরুল হক ভূঞা, জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের আহ্বায়ক নিলোৎপল খীসা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন প্রমুখ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: রবিউল ইসলাম, সদর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মনজুর মোর্শেদ,খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী, মহালছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মঈনুল ইসলাম, পানছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার সুজিত মিত্র চাকমা, সহকারী শিক্ষা অফিসার এডিন চাকমা, সদর উপজেলার রিসোর্স ইনস্ট্রাক্টর রিন্টু কুমার চাকমা, খাগড়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশা প্রিয় ত্রিপুরা, বাবলি ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধি ও ত্রিপুরা, চাকমা, মারমা ভাষা লেখকেরা উপস্থিত ছিলেন।