পাহাড়ে উদ্যোক্তাদের ছয় অভাবঃ পুঁজি, প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা, যোগাযোগ, বাজারজাত ও সংরক্ষণ

415

সুজন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, বিলাইছড়িঃ-পাহাড়ে উদ্যােগতাদের কৃষি পণ্য, নানা পণ্য ও কাঁচা মালামাল ও নিত্যদিনের পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে ছয় অভাব রয়েছে-পুঁজি, প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা, যোগাযোগ, বাজার জাত ও সংরক্ষণের সু-ব্যবস্থা।
পুঁজি:-পাহাড়ে পাহাড়িদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে পুঁজি। কোন কিছু করতে গেলে পুঁজির জন্য বড় সমস্যায় পড়েতে হয় উদ্যোগতাদের। খামার, পশু পালন ও বাগান চাষাবাদ ও ব্যবসা ও নানা কারণে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করার আগ্রহ থাকলেও তারা করতে পরছেনা একমাত্র পুঁজির জন্য। বেশিরভাগ মানুষের রেজিষ্ট্রিকৃত জমি না থাকার কারণেও ব্যাংক থেকে বড় ধরনের ঋণের সুবিধা পাচ্ছেন না বলেও জানা যায়।
প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা:-কিছু জনের হয়তো অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ থাকলেও বেশির ভাগ জনের হয়তো কোন প্রশিক্ষন নাই। সব ক্ষেত্রে আধুনিক পদ্ধতি কি, কিভাবে মালামাল ক্রয় বিক্রয়, সংরক্ষণ, বাজার জাত ও পরিচর্চা করবেন তাদের তেমন কোন অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা নেই। তাই সব বিষয়ে সবক্ষেত্রে সবার কিছু না কিছুই জানার প্রয়োজন। এজন্য অবশ্যই প্রয়োজন ভালো প্রশিক্ষণ।
পরিকল্পনা:- স্থান কাল পাত্র ভেদে কোথায় কি করবেন, কোন সময়ে কি করলে, কবে করলে ভালো হয় বা না হয় এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বেশ পরিকল্পনা দরকার। কোথায় কি ঘাটতি রয়েছে বা আছে এইসব বিষয়ে আগে-বাগে দরকার সঠিক পরিকল্পনা।
যোগাযোগ:-মালামাল ও নিত্যদিনের পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে একমাত্র প্রধান সমস্যা হচ্ছে যোগাযোগ। কোনো কোনো জায়গায় যোগাযোগের সুব্যবস্থা না থাকার কারণে পরিবহন ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভীষন অসুবিধা পড়তে হয় বলে জানান মাল ক্রেতা-বিক্রেতারা।
বাজারজাত :-যে কোন ধরনের পণ্য এবং বিশেষ করে কাঁচা মাল বা অন্য কোন মালামাল প্রধান অন্তরায় হলো বাজার জাত করা। কোনরকমে কাধে করে, লেবার নতুবা ছোট নৌকা কিংবা বোট দিয়ে বিক্রয়ের জন্য গ্রামে, বাজারে নিয়ে আনলে বিভিন্ন কারণে হয়তো চাহিদা মোতাবেক বাজারজাত করা যায় না। আর কাঁচামালের ক্ষেত্রে হয়তো কাপ্তাই বা রাঙ্গামাটি পৌঁছালে আরতের মত বিক্রয়ের সু- ব্যবস্থা না থাকার কারণে এমনিতেই কমদামে বিক্রয় করতে হচ্ছে বলেও জানান তারা।
সংরক্ষণঃ-বিশেষ করে কাঁচা মালামালের বেলায় স্থানীয়ভাবে বাজারজাত বা বিক্রি করতে না পারলে সংরক্ষণের জন্য ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায় এমনকি জেলা পর্যায় পর্যন্ত কোল্ডস্টোরেজ বা হিমাগার নাই। তাই সংরক্ষণের সুবিধা নয় বলে স্থানীয়ভাবে পানির দামে বিক্রয় করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, কাঁচামালের বেলায় এমনিতেই জুমে ও পাহাড়ে পঁচে যায়। শহরে নিতে হলেও এরকম সুনির্দিষ্টভাবে সংরক্ষণের কোনো সু- ব্যবস্থা নেই।
মূলতঃ পাহাড়ে দূর্গম এলাকা বা কোনো কোনো এলাকা যোগাযোগ ব্যবস্থা সুবিধা নয় বলে এবং পরিবহন, জ্বালানি ও লেবার খরচ বেশি হাওয়ার কারণে শহর থেকে আসেনা তেমন ব্যবসায়ী বা ক্রেতা। তেমনিভাবে মালামাল ও পণ্য বিক্রয় করতেও চরম অসুবিধা। যা কম দামে বা পানির দামে বিক্রয় করে দিতে হয় বা এমনিতেই ফেলেই বা রেখেই দিতে হয় বা বাধ্য হয়ে দিতে হয় স্থানীয় সিন্ডিকেট পাইকারি ব্যবসায়ী বা ক্রেতাদের কাছ থেকে।
তাই বিশেষ করে পাহাড়ে উদ্যোগতারা উৎপাদন, বুনন, ক্রয়-বিক্রয়ে নানান রকম পণ্য ছাড়াও উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য এমনিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নার্য্য মূল্য পাচ্ছে না। যার ফলে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ্য যে, বিশেষ ক্ষেত্রে উৎপাদিত ও উৎপন্ন পণ্য ক্রয়-বিক্রয় আদান-প্রদান বাদেও কৃষিতে পাহাড়ে আদি কৃষি এখনো বিদ্যামান রয়েছে। তাই উৎপাদিত কৃষি পণ্য আদা, হলুদ, মরিচ, কলা থেকে শুরু করে নানা রকমের শাকসবজি দেশে চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। কিন্তু যারা মথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপন্ন করেছেন তারা বিক্রয়ের সঠিক মূল্য ও সংরক্ষণের সু-ব্যবস্থা না থাকার কারণে পঁচে যাচ্ছে অনেক পণ্য।
তাই এইসব বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি আমাদের সকলের সু-দৃষ্টি প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।