কাপ্তাইয়ের রাইখালীতে শতাধিক বছরের একটি গাছঃ যেন এক রহস্য লুকিয়ে আছে

264

ঝুলন দত্ত, কাপ্তাইঃ-কেউ বলছে অশ্বত্থ গাছ, কেউ বলছে বট বৃক্ষ, আবারোও কেউ বলছে কাঞ্চনা বাদি গাছ। যে, যেই নামে চিনুক বা জানুক না কেন একটি রহস্যময় বৃক্ষের সন্ধান পাওয়া গেছে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার ২নং রাইখালী ইউনিয়ন এর রাইখালী বাজার সংলগ্ন হিন্দু শ্মশান ঘাটে। কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে এই শশ্মান অবস্থিত। রহস্যময় এই গাছের বয়স নিয়েও নানা জনের নানা মত পাওয়া যায়।
স্থানীয় বয়োবৃদ্ধরা বলছেন, এই গাছের বয়স ৫শ বছরের কাছাকাছি, কেউ বলছে ৪শ বছর। কেননা, তাঁদের দাদুরাও ছোট বেলা তাদেরকে এই গাছের গল্প শুনিয়েছেন। এই গাছের আশেপাশে বৃহদাকার অনেক সাপ আছে বলে কথিত আছে। যেই সাপ পূর্নিমা রাতে নদীর এপার হতে ওপারে পাড় হয়ে আবার গাছটির কাছে চলে আসে। বছরের পর বছর ধরে কালের সাক্ষী হয়ে এই গাছটি রাইখালী বাজারকে নদী গর্ভের বিলীন হতে রক্ষা করে আসছেন।
গত শুক্রবার কথা হয়, রাইখালী বাজারের বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী ভোলা প্রসাদ ভট্টাচার্য্যের সাথে। তিনি জানান, ছোট বেলা হতে আমি এই গাছ দেখে আসছি, আমার বাবাও দেখেছেন এবং দাদুও নাকি এই গাছটি দেখেছেন। তাই ৪শ বা ৫শ বছরের অধিক হবে এই গাছ। ছোট বেলা গাছটির পাশে যেতে ভয় করতো। মনে হয়, গাছের মধ্যে কেউ লুকিয়ে আছে।
কাপ্তাই উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাইখালীর বাসিন্দা দীপক কুমার ভট্টাচার্য জানান, গাছটি স্থানীয়রা নানা নামে ডাকে। কেউ বলে বটগাছ, কেউ বলে অশত্থ গাছ। তবে এই গাছটি রাইখালী বাজারকে কর্ণফুলী নদীর করাল গ্রাস হতে রক্ষা করে আসছেন শত বছর ধরে। তিনি জানান, ৩শত বছর বা তার অধিক হবে এই গাছের বয়স।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্হার কর্মকর্তা রাইখালীর বাসিন্দা উইনুপ্রু মারমা জানালেন গাছটি নিয়ে একটি অজানা ইতিহাসের কথা। তিনি জানালেন, স্কুলে বা অন্য কোনও কাজে এ গাছটির পাশ দিয়ে হেঁটে বা সাম্পানে রাত-বিরাতে কতবার এদিক সেদিক গিয়েছি। রাতে গাছটির পাশ দিয়ে একা হাঁটলে কেমন জানি একটু হিম শীতল বাতাসের স্পর্শ পেতাম।
“মায়ানমার থেকে আসা একদল গুপ্তধন শিকারীর ধাওয়া খেয়ে একটা বৃহৎদাকারের সাপ (যেটাকে ধরতে পারলে গুপ্তধন পাওয়া যেতো) নাকি উপরের পাহাড় থেকে গাছটির বরাবর নদীর জলে ঝাঁপ দিয়েছিল। আর গাছটির গায়ে আঘাতের ফলে গাছ হতে রক্ত ঝরে ছিল। তিনি শুনালেন এ রকম গা ছম ছম করা রোমাঞ্চকর গল্প।
উইনুপ্রু মারমা আরোও বলেন, শ্রুতি হোক বা পুরাকথা যাই হোক বিষয়টার সত্যানুসন্ধানে যাওয়া মোটেও আমার আগ্রহের বিষয় নয়, স্বস্তির বিষয় হলো গুপ্তধন, বিরাটাকারের সর্প বা গাছ থেকে রক্তক্ষরণের গল্পসহ নানাবিধ অতিপ্রাকৃত কল্পনা বা বিশ্বাসের কারণে গাছটি এখন কিংবদন্তী। গাছ খেকোদের খপ্পড়ে পড়েনি, এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে
এ গাছটি। যার আঁচল আঁকড়ে ধরে আরো কয়েক প্রজাতির লতানো গাছ/গুল্ম, নানা রকমের জলজ-স্থলজ প্রাণী আর কীট-পতঙ্গ বেঁচে আছে। এটিও ছোট পরিসরে জীব-বৈচিত্র্যের এক অনন্য আধাঁর।
বৃক্ষটির ঠিক পার্শ্ববর্তী নিবাসী রাইখালী নিবাসী (বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী) মাসাং মারমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গাছটি নিয়ে এক পোস্ট এই প্রতিবেদকের চোখে পড়ে। তিনি লিখেন, “প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই সবার আগে গাছটা চোখে পড়তো. পুরো এলাকার রক্ষক হয়ে গাছটা টান টান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই কবে থেকেই, আমাদের বাসার সাথেই বলা চলে। আগে গাছটা অনেক বড়ো ছিলো। ১৯৮৮ এবং ৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ে বিকট শব্দে বড় বড় ২টি দেওয়াল পড়ে গিয়েছিল। সেই সময় গাছটির কিছু অংশ ভেঙে পড়ে। ছোট কালে গভীর রাতে জেলেদের মধুর কন্ঠে বাঁশির সুর ভেসে আসতো গাছের নিচে থেকে, অনেক ভালো লাগতো।
কাপ্তাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মধুসূদন দে জানালেন, গাছটির বয়স ৩শ থেকে ৪শ বছর হবে প্রায়। গাছটি একটি প্রাচীন ঐতিহ্য বলা চলে। এত বড় বৃক্ষ এখন আর দেখা যায় না সচরাচর।