লামায় বালু সিন্ডিকেটের কারণে বিলীন হচ্ছে কৃষকের বসতবাড়ি ও ফসলের মাঠ

115

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামাঃ-লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কাম্মারঝিরি বিল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী বালু সিন্ডিকেট। বেপরোয়া বালু উত্তোলনের কারণে ভেঙ্গে যাচ্ছে কৃষকের ফসলের মাঠ, পাহাড় ও বসতবাড়ি। বিলের মাঝখানে গর্ত করে বালু তোলায় কাম্মারঝিরি এলাকার কৃষক ফজল করিম এর ৩ কানি ফসলের মাঠ ও পাহাড় ভেঙ্গে গেছে বলে জানিয়েছেন। এই বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে বিচার দিয়েও কোন প্রতিকার না পাওয়ার কথা জানালেন ওই কৃষক।
অপরদিকে বালুবোঝাই ভারি ট্রাকসহ অন্য যানবাহন চলাচলের কারণে এলাকার গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারিভাবে বালু তোলার কোন অনুমোদন নেই এবং বালু উত্তোলনের কোনো ইজারা না থাকলেও প্রভাবশালী মহল সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবাধে এ বালু উত্তোলন এবং রমরমা বাণিজ্য করে যাচ্ছে।
ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের কাম্মারঝিরি এলাকার মৃত মোস্তাক আহাম্মদ এর ছেলে ফজল করিম মনু (৫৭) জানান, বিলে তার জমির পাশ থেকে একই এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে ফয়জুল আজিজ (৫৪) তার ছেলে জকরিয়া (৩২), সাইফুল ইসলাম (২৯), সিরাজুল ইসলাম (২৫) ও মৃত আবু তাহের এর ছেলে নুরু ছিদ্দিক (৩২) কয়েকটি সেলু মেশিন লাগিয়ে অবাধে বালু তুলছে। তাদের কোন সরকারি অনুমোদন নেই। অবাধে বালু তোলার কারণে তার ৩ কানি ফসলের মাঠ ও পাহাড় ভেঙ্গে গেছে এবং আরো জমি বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এ থেকে সরকারও হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। এদিকে বালু উত্তোলনের খবর পত্রিকায় প্রকাশ হলে মাঝে মধ্যে দু’একটি অভিযান চালানো হলেও অভিযানের একদিন পরই তারা আবারও একইভাবে বালু উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে। বালু সন্ত্রাসীদের কবল থেকে ঘরবাড়ি বসতভিটা ও কৃষিজমি রক্ষার দাবিতে এলাকায় বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন এলাকাবাসী।
ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বগাইছড়ি, উত্তর মালুম্যা, দক্ষিণ মালুম্যা, কাম্মারঝিরি, হারগাজা, বড়ছন খোলা, খালখুইল্যা পাড়া, লাইল্যা পাড়া, কুমারী, সাপেরগারা, ফাঁসিয়াখালী ছড়া, কমিউনিটি সেন্টার সহ এই ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩০টির অধিক স্পট থেকে বালু উত্তোলন হয়। স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ করেছেন কাম্মারঝিরি বিল সহ এইসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। তারা বালু উত্তোলন বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেন।
কাম্মারঝিরি এলাকায় সরজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বিলের মাঝখান থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বিলের মাঝখান থেকে বালু উত্তোলনের ফলে দেখা দিয়েছে প্রচন্ড ভাঙ্গনের। বেশ কিছু জমি ও পাহাড় ইতিমধ্যে ভেঙ্গে গেছে।
এই বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় বালু উত্তোলনকারী ফয়জুল আজিজ এর সাথে। তিনি বলেন, আমাদের বালু তোলার সরকারি অনুমোদন নেই। জীবিকার কারণে আমরা কয়েকজন বালু তুলছি।
ফাঁসিয়াখালীর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, এই বিষয়ে ফজল করিম পরিষদে একটি বিচার দিয়েছিল। সময়ের কারণে তার সমাধান করা সম্ভব হয়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবান এর পরিদর্শক আব্দুস সালাম বলেন, সংঘবদ্ধ বালু উত্তোলনকারীদের বিষয়ে পরিবেশ আইনে মামলা করা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা।
দ্রুত বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোস্তফা জাবেদ কায়সার।