দীঘিনালায় এবছর ভাল হয়নি জুমের ফসল

100

সোহেল রানা, দীঘিনালাঃ-খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় এবছর আশানুরুপ জুমের ফসল ভাল হয়নি। জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাব এবং অনাবৃষ্টির কারনে এ বছর ফলন ভাল হয়নি বলে মনে করছেন জুমচাষীরা। তাই পাহাড়ের চুড়ায় আদি পদ্ধতির এই চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন স্থানীয় জুম চাষিরা। দুর্গম পাহাড়ে বসবাসতর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এই মানুষগুলো জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল হলেও এ বছর ফলন ভাল না হওয়ায় খাদ্য সংকটের আশংকা করছেন তারা। এমন আশংকার মাঝেই শুরু হয়েছে জুমের ধান কাটা শুরু। তবে প্রতি বছর জুমের ধান কাটাকে ঘিরে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাসহ নানা প্রকার আয়োজন করা হলেও এ বছর জুমিয়া পরিবারগুলোর মাঝে দেখা যায়নি কোনো প্রকার উৎসাহ কিংবা উদ্দীপনা।
উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের দুর্গম মিলন কার্বরী পাড়ার কয়েকটি জুম ঘুরে দেখা যায়, জুমে ধানের পাশাপাশি রয়েছে, আদা, হলুদ, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙা, মারফা, তিল ও কলাসহ হরেক রকম ফসলাদি। প্রতি বছরেরর ন্যায় পরিবার পরিজনের বাৎসরিক খাদ্যের চাহিদা পুরনের লক্ষ্যে পাহাড়ের চুড়ায় এসব ফসলাদি রোপন করা হলেও এ বছর জুমে ফলেনি প্রত্যাশা অনুসারে কোনো ফসল। তাই জুমচাষের ওপর নির্ভরশীল দুর্গম এই পাহাড়ী গ্রামের প্রতিটি পরিবারের মাঝে রিবাজ করছে চরম হতাশা। এমন হতাশার মাঝেই শুরু হয়েছে জুমের ধান কাটা শুরু করেছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যমতে প্রাকৃতিক পরিবেশগত কারনেই এ বছর জুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমেছে।
মিলন কার্বারী পাড়ার জুমচাষী গুনতি ত্রিপুরা, মন্দাকিনি ত্রিপুরা ও কালাধন চাকমা জানান, জুমচাষের ওপর নির্ভর করেই আমাদের জীবন চলে। তাই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও জুমে ধানের পাশাপাশি হরেক রকম সবজিসহ মসলা জাতীয় ফসলের চাষাবাদ করেছিলাম। কিন্তু জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাব আর অনাবৃষ্টির কারনে এ বছর জুমের কোনো ফসলই ভাল হয়নি। একমাত্র সময়মত বৃষ্টি না হওয়ার কারনেই ধানে চিটা এবং সজবিসহ মসলা জাতীয় ফসলের গাছে মরক লেগেছে। তাই ফলন ভাল না হওয়ায় পাড়ার প্রতিটি জুমিয়া পরিবারের মাঝেই এ বছর খাদ্য সংকটে পড়ার আশংকা বিরাজ করছে বলে জানান তারা।
পাড়ার সাবেক ইউপি সদস্য হতেন ত্রিপুরা জানান, সনাতন পদ্ধতির এই চাষাবাদে আর জীবন চলে না। তারপরেও জীবন এবং জীবীকার প্রয়োজনে নিরুপায় হয়ে পাহাড়ের চুড়ায় স্বপ্ন বুনতে হয় আমাদের। আগের মত জুমে এখন আর কোনো ফসলই ভাল হয় না। ফলস ভাল না হলেই পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহার অর্ধাহারে কাটাতে হয় কষ্টের জীবন। তারপরেও আমাদের জুমিয়া পরিবারগুলোর প্রতি নেই সরকারের কোনো প্রকার সুদৃষ্টি। তাই আধুনিক চাষাবাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে জুমিয়া পরিবারগুলোকে কৃষি ঋনের আওতাভুক্ত করার দাবী জানান তিনি।
জুমে ফলন ভাল না হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওঙ্কার বিশ্বাস জানান, এ বছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩শত ৫০ হেক্টর পাহাড়ে জুমচাষ করা হলেও জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাব এবং অনাবৃষ্টির কারনে ধানসহ অন্যান্য ফসলাদির উৎপাদন ভাল হয়নি। গত বছর সমপরিমান জুমে চাষাবাদ করে প্রায় দেড় হাজার মেট্টিক টন ধান উৎপাদন করা হয়েছিল। এ বছর প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে না থাকায় ধানের চিটাগত কারনে জুমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেকে নেমে আসবে বলে জানান তিনি।