লামায় মসজিদের মাসিক চাঁদা বকেয়া থাকায় সমাজের কবরে কবর দিতে দেয়নি সভাপতি ও সমাজ সদ্দার

99

লামা প্রতিনিধিঃ-লামার বদুঝিরি মসজিদের মাসিক চাঁদা বকেয়া থাকায় সমাজের বাসিন্দা মোঃ ইরফানের (২৯) মরদেহ কবরস্থানে দাফন করতে দেয়নি মসজিদের সভাপতি আক্কাস আলী ও সমাজ সদ্দার গফুর। ঘটনাটি ঘটেছে বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বদুঝিরি এলাকায় বুধবার সকাল আড়ে ৮টায়। ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার ঘটনাস্থালে এসে সমাজের কবর থেকে দূরে আরেকটি কবরে অন্য মসজিদ থেকে ইমাম এনে ইরফানকে দাফন করা হয়।
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় বছর আগে একটি সামাজিক বিয়ের দাওয়াত না দেওয়াকে কেন্দ্র করে ইরফানের শশুর কবির আহম্মদের সাথে বাগ্বিতান্ড হয় সমাজ সদ্দার ও বদুঝিরি মসজিদ কমিটির সভাপতি সাথে। এ বাগবিতান্ডের পর থেকে মসজিদের মাসিক টাকা নেয়নি মসজিদের সভাপতি। বিভিন্ন মাধ্যমেও মসজিদের মাসিক চাঁদার টাকা কবির আহম্মদ দিতে চাইলেও তার কাছ থেকে টাকা নেয়নি। এর মাঝে কবির আহম্মদের মেয়ের জামাই মোঃ এরফান দীর্ঘদিন টাইফয়েড ও জন্ডিসে ভোগে গত মঙ্গলবার কক্সবাজার হাসপাতালে মারা যায়। রাতেই ইরফানকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসে বদুরঝিরির শশুর বাড়িতে। বুধবার সকাল আটটায় ইরফানকে কবর দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলে এতে বাঁধা দেয় বদুঝিরি মসজিদের সভাপতি মোঃ আক্কাস ও সমাজ সদ্দার মোঃ গফুর। তারা সমাজের কবরে দাফন করতে না দেওয়ায় সমাজের দুইপক্ষের মধ্যে বাগ্বিতান্ড বেঁধে যায়। দেড়ঘন্টা ধরে এ বাগবিতান্ড চলে। পরে এলাকার ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ কামাল উদ্দিন এসে সমাজের দুই পক্ষকের বাগবিতান্ড থামিয়ে সমাজের কবর থেকে কিছু দূর দূরে উজির আলীর কবরে ইরফানের মরদেহ দাফন করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।
এদিকে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) মোঃ কামাল উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমার এলাকার বদুঝিরি গ্রামের বাসিন্দা মোঃ ইরফানের মরদেহ সমাজের কবরস্থানে কবর দিতে বাঁধা প্রদান করার সংবাদ আমি শুনে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থালে যাই। গিয়ে দেখি মসজিদ কমিটির সভাপতি মোঃ আক্কাস উদ্দিন ও সমাজের সদ্দার মোঃ গফুরসহ আরো কয়েকজনে কবর দিতে বাঁধা দিচ্ছে। তখন তাদের অভিযোগ শুনে জানতে পারলাম ইরফানের শশুরের কাছ থেকে মসজিদের চাঁদার টাকা বকেয়া রয়েছে। যদি এ বকেয়া টাকা নগদ দিলে সমাজের কবরে দাফন করতে দিবে। আমি তাদের অনেক বুঝানোর পরও তারা না মানলে সমাজের কবরের কিছু দূরে উজির আলীর কবরে দাফন করার সিদ্ধান্ত দিই। আমার এলাকার পুয়াংবাড়ি মসজিদের ইমাম মালেক হুজুকে নিয়ে এসে ধর্মীয় নিয়মে ইরফানকে দাফন করা হয়।
ইরফানের শশুর মোঃ কবির আহম্মদ বলেন, গত দেড় বছর আগে সমাজের জালালের ছেলের বিয়েতে আমাকে সামাজিক বিয়ের দাওয়াত না দেওয়ায় তখনকার সভাপতিকে এর কারণ জানতে চাই। এ নিয়ে আমার সাথে তখনকার সভাপতি সাথে কথা কাটাকাটির ঝগড়া হয়। সেই থেকে তারা আমার কাছ থেকে মসজিদের মাসিক চাঁদা নেয়না। আমি বারবার দেওয়া চেষ্টা করি সমজিদের মাসিক টাকা দেওয়ার জন্য। তারা নেয়নি। বর্তমান মসজিদ কমিটির সভাপতি মোঃ আক্কাস উদ্দিন পূর্বের কমিটির সূত্র ধরে বুধবার আমার মেয়ের জামাইকে সামাজিক কবর দিতে দেয়নি। পরে আমাদের ওয়ার্ডে মেম্বার কামাল উদ্দিনের সহায়তায় ওয়ার্ডের পুয়াংবাড়ি মসজিদের ইমাম নিয়ে এসে সমাজের কবর থেকে একটু দূরে উজির আলীর কবরে দাফন করেছি।
এ ব্যাপারে বদুঝিরি মসজিদ কমিটির সভাপতি মোঃ আক্কাস উদ্দিন বলেন, আমার মসজিদ কমিটির দায়িত্ব নেওয়ার পূর্ব থেকে কমিটির সভাপতির সাথে তার বিরোধ রয়েছে। তাকে সমাজ থেকে বাহির করে দেওয়া হয়। আমি দুই মাস আগে ইরফান ও তার শশুর কবির আহম্মদকে ডেকে সমাজে ঢুকার পরামর্শ দিই। তাদের আমি বলেছি, নতুন করে সমাজে ঢুকতে হলে ভর্তি ফিস ৩০০টাকা আর মাসে মসজিদের সমাজের চাঁদা বাবদ একশত টাকা দিতে হবে। তারা এ শর্ত মেনে সমাজে ভর্তি হবে বলে আমাকে জানায়। এর মাঝে কবির আহম্মদের জামাই ইরফান অসুস্থ হয়ে মারা গেলে তারা আমাদেন না জানিয়ে সমাজের কবরে দাফনের জন্য প্রস্তুতি নিলে আমরা বাঁধা দিই। তবে, আমরা বলেছি, সমাজের কবরে দাফন করলে মসজাদের পূর্বের সকল বকেয়া ট্কা দাফনের আগে দিয়ে দিতে হবে। পরে তারা বকেয়া টাকা দিতে না পারায় পাশের আরেকটি কবরে ইরফানের মরদেহ কবর দেওয়া হয়।