মধুমঙ্গল তনচংগ্যার স্বপ্নভঙ্গঃ গাছের আম গাছে পঁচে নষ্ট হচ্ছে

144

ঝুলন দত্ত, কাপ্তাইঃ-মহামারী করোনা এবং কঠোর লকডাউনে আমার সব স্বপ্নকে ভেঙ্গে তছনছ করে দিল, এবছর গাছে আমের আশানুরূপ ফলন হওয়ার ফলেও এই পরিস্থিতিতে গাছের আম গাছে পঁচে নষ্ট হচ্ছে। ঋন পরিশোধ কিভাবে করব বুঝতে পারতেছিনা। এক বুক হতাশা নিয়ে কথাগুলো বললেন, কৃষক মধুমঙ্গল তনচংগ্যা। তিনি আবার পেশায় একজন শিক্ষক। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার ব্যাপ্টিস্ট মিশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে ২০১১সালে দুর্গম রাঙ্গামাটি সদর জীবতলী এলাকায় ১০একর জায়গার ঘরে তোলেন আমের বাগান। বিভিন্ন প্রজাতির ৭শ’ হতে ৮শ’ আমের গাছ রয়েছে তাঁর এই বাগানে।
মঙ্গলবার (৬ জুলাই) সকালে তাঁর বাগানে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে। তিনি জানান এই বাগান করতে ব্যাংক ঋণ এবং বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের নিকট হতে সর্বমোট দশ লক্ষ টাকা দেনা হয় তাঁর। চন্দ্রঘোনা রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র হতে ১০ প্রজাতির আমের চারা সংগ্রহ করে রোপন করি। তৎমধ্যে বারি-১,২,৩,৪,৭,৮,১১, হাড়িভাঙ্গা, মল্লিকা, রূপালি জাতের চারাও রয়েছে। নিজেসহ সাত জন শ্রমিক নিয়ে বাগান পরিচর্যা করি। এদের পরিশ্রমিক খানাদানা বাবদ প্রতিদিন গড়ে ৭শ হতে ১ হাজার টাকা খরচ হয়। এরফলে এইবছর তাঁর বাগানে প্রচুর আমের ফলন হয়েছে। ফলন দেখে মনটা ভরে গিয়েছিল এবং আশা করেছিলাম আম বিক্রয় করে প্রায় ৭-৮লক্ষ টাকা বিক্রয় করতে পারবো। ইতিমধ্যে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আমও বিক্রয় করেছি। কিন্তু একের পর এক লকডাউন, পরিবহন বন্ধ থাকার ফলে আম বিক্রয় বন্ধ হয়ে গেছে। কোন ব্যবসায়ী আর আম ক্রয় করতে আসছেনা। গাছের আম ফেঁটে গাছে পঁচে নষ্ট হচ্ছে।
সরজমিনে আম বাগানে গিয়ে দেখা মিলে সারিতে সারিতে আম গাছে ঝুলছে আবার অনেক আম খাঁচায় ভরানো, তবে বেশী ভাগ আম পচে নষ্ট হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। শখের কৃষক মধু মঙ্গল তনচংগ্যা আরোও জানান, যে পরিমানে আম বিক্রয়ের কথা ছিল তা আর বিক্রয় করতে পারি নেই। লকডাউন দেওয়ার ফলে সকল পরিবহন ও ব্যবসায়ীদের যাতায়াত বন্ধ থাকায় আমার ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে।
সহকর্মীর বাগান থেকে আম নিতে আসা কাপ্তাইয়ের শিক্ষক মোঃ ইসমাইল হোসেন ও মোঃ নাজমুল জানান, মধু মঙ্গল তঞ্চঙ্গ্যা একজন সফল শিক্ষক ও সখের কৃষকও বটে। তিনি স্কুল শেষে বাগান নিয়ে পড়ে থাকে। লকডাউনের ফলে তার গাছের অনেক আম বিক্রয় করতে না পারায় তাঁর ক্ষতি হয়েছে।
কাপ্তাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সামসুল আলম চৌধুরী জানান, এই বছর কাপ্তাইয়ে আমের ভালো ফলন হয়েছে, সপ্তাহ দুই এক আগে যারা গাছ হতে আম পেড়ে বিক্রি করেছে তারা স্থানীয়ভাবে এবং বাহিরের বেপারিদের কাছে আম বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন, কিন্তু যারা চলতি সপ্তাহে কঠোর লকডাউনে আম পেড়ে বিক্রি শুরু করেছেন তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। কারন পরিবহন সংকটে বাহিরের বেপারি এবং পর্যটকরা কাপ্তাইয়ে আসতে পারছেন না।