খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন স্থানে পিসিপি’র ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

147

প্রেস বিজ্ঞপ্তিঃ-খাগড়াছড়িতে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পালন করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় ছাত্র সমাবেশ ও আলোচনা সভার মাধ্যেমে এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২০ মে) সকালে পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আয়োজিত ছাত্র সমাবেশের বক্তারা এই আহ্বান জানান।
“৮৯ এর ছাত্র গণজাগরণের চেতনার মশাল জ্বালিয়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন বেগবান করুন” এই শ্লোগানে সকাল ৯টার দিকে দলীয় সঙ্গীত ‘পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রী দল’ গানের মধ্য দিয়ে পিসিপি’র পতাকা ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পিসিপি’র পতাকা উত্তোলন করেন অগ্রণী শিশু-কিশোর কেন্দ্র’র চৌকস টীম ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন পিসিপি জেলা সভাপতি সমর চাকমা। এরপর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
সমাবেশে পিসিপি’র জেলা সভাপতি সমর চাকমার সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক নরেশ ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফ এর খাগড়াছড়ি সদর ইউনিটের সংগঠক অংগ্য মারমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নীতি চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা দপ্তর সম্পাদক লিটন চাকমা।
সমাবেশে অংগ্য মারমা বলেন, সংবিধানে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়ার মধ্যদিয়ে এটা স্পষ্ট যে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের বেঁচে থাকার ও জীবনের নিরাপত্তার জন্য রাজনৈতিক দাবিকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্র সমাজের গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যে অচল অবস্থা তৈরী হয়েছে তা কাটিয়ে তুলতে ছাত্র সমাজকে বড় এক ঢেউ তুলতে হবে।
অংগ্য মারমা ৮৯’র চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আগামীতে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন চালিয়ে নিতে শপথ নেয়ার আহ্বান জানান।
অমল ত্রিপুরা বলেন, ৮৯’এ পিসিপি গঠনের পর ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে বাকরুদ্ধ অবস্থায় নিমজ্জিত । এ সংকটময় পরিস্থিতি থেকে জাতিকে মুক্ত করতে ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আন্দোলন এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নীতি চাকমা বলেন, ছাত্র সমাজের পাশাপাশি নারীরাও কাঁধে কাঁধ রেখে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। কল্পনা চাকমাকে অপহরণের মাধ্যমে নারীদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু নারীরা দমে যায়নি।
তিনি দুই যুগের অধিক সময় পার হলেও কল্পনা চাকমা অপহরণের সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং চিহ্নিত অপহরণকারীদের বিচারের দাবি জানান।
লিটন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র সমাজের ভূমিকা এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ছাত্র-যুব-নারীর ঐক্যবদ্ধ শক্তিই পারেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে।
সমর চাকমা বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে শাসকগোষ্ঠী অন্যায়-অত্যাচার, নির্যাতন, জেল-জুলুম ও হত্যা, গুম করেও পিসিপি’র আন্দোলন দমাতে পারেনি। বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পিসিপি লড়াই-সংগ্রামের গৌরবময় ৩২ বছর পূর্ণ করেছে। সকল ধরনের অন্যায়-অত্যাচারে বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এগিকে, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর আপোষহীন সংগ্রামের ৩২তম বার্ষিকীতে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে ছাত্র সমাাবেশ ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
“৮৯’র ছাত্র-গণজাগরণের চেতনার মশাল জ্বালিয়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন বেগবান করুন” এই শ্লোগানে পিসিপি’র পানছড়ি উপজেলা শাখা এই সমাবেশ ও র‌্যালির আয়োজন করে।
সকাল সাড়ে ৯ টার সময় পানছড়ি সদর এলাকায় অনুষ্ঠিত সমাবেশ শুরুতে শহীদ রমেল, তপন, এল্টনসহ সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
সমাবেশে পিসিপি’র পানছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি তৃষাঙ্কর চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক সুনীল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, পিসিপি’র সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক বরুন চাকমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য রুপসী চাকমা ও পিসিপি কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় ত্রিপুরা।
বিপুল চাকমার বলেন, শাসকগোষ্ঠীর কাজ হচ্ছে দমন-পীড়ন, নির্যাতন-মিথ্যা মামলা দিয়ে ছাত্র সমাজকে দমিয়ে রাখা, আর ছাত্র সমাজের কাজ হচ্ছে এগুলো তুচ্ছ মনে করে এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা। ছাত্র সমাজ যদি গর্জে ওঠে তাহলে কোন অপশক্তির সাধ্য নাই সেটাকে প্রতিহত করার।
তিনি আরো বলেন, আজকে ছাত্র সমাজের কাছে আহ্বান রেখে যেতে চাই, আপনারা পিসিপির পতাকাতলে সমবেত হোন, আসুন ছাত্র-গণআন্দোলনের মাধ্যমে জুম্ম জনগণের প্রাণের দাবি পূর্ণস্বায়ত্তশাসন কায়েম করি।
রূপসী চাকমা বলেন, আজকে সবক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে রয়েছে। ছাত্ররা যেখানে জাতির নেতৃত্ব দিচ্ছে, সমাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে সেখানে নারীদের অংশগ্রহন অত্যন্ত সীমিত। তাই নারীদেরকে সব বাধা অতিক্রম করে অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন সামিল হতে হবে। সমাজের অর্ধেক অংশ নারীরা আন্দোলনে এগিয়ে আসলে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হবে। কাজেই জাতির অস্তিত্ব ও মা-বোনের সম্ভ্রম রক্ষার্থে সমানতালে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
শুভাশীষ চাকমা বলেন, আজকে পিসিপি আপোষহীন লড়াই-সংগ্রামের ৩২ বছর পূর্ণ করলো। পিসিপি’র এত বছরের আন্দোলনে ছাত্র সমাজ ও জনগণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। জনগণের সমর্থনে পিসিপি দীর্ঘ ৩২ বছর আপোষহীনভাবে লড়াই চালিয়ে এসেছে, আগামীতেও লড়াই চালিয়ে যাবে। তিনি ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন, সমস্ত সীমাবদ্ধতার বেড়াজাল ভেঙে পিসিপির পতাকাতলে সামিল হয়ে ন্যায্য অধিকার আদায়ে নিজেদের আত্মোৎস্বর্গ করি। সমাবেশের পরে একটি র‌্যালি বের করা হয়।
অন্যদিকে একই শ্লোগানে দীঘিনালায় ছাত্র সমাবেশ করেছেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) দীঘিনালা উপজেলা শাখা। সমবেশে পিসিপি’র সাবেক সভাপতি ও ইউপিডিএফের দীঘিনালা ইউনিটের সমন্বয়ক মিল্টন চাকমা, সংগঠক সুজয় চাকমা, পিসিপির খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নিকেল চাকমা ও ছাত্র নেতা রিটেন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা এবং গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দীঘিনালা উপজেলা সভাপতি রিটেন চাকমা প্রমুখ।
আর বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এর ৩২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মহালছড়িতে পিসিপির উদ্যোগে এক ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
“আপোষহীন সংগ্রামের ৩২ বছর! ৮৯’র ছাত্র -গণজাগরণের চেতনার মশাল জ্বালিয়ে পূর্নস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন বেগবান করুন “এই স্লোগানকে সামনে রেখে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুমন্ত চাকমার সভাপতিত্বে ও জেলা অর্থ সম্পাদক শান্ত চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গনতান্ত্রিক যুব ফোরাম এর কেন্দ্রীয় সদস্য সুইচিং মারমা, পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিত চাকমা ও মহালছড়ি উপজেলা ইউপিডিএফ সমন্বয়ক দিগন্ত প্রমুখ।
এছাড়াও খাগড়াছড়ি জেলা গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় শাখার উদ্যোগে নিজ নিজ এলাকায় ছাত্র সমাবেশ ও আলোচনা সভা করা হয়েছে।