লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের আবাদীয় পাহাড়ি জায়গা দখলের অভিযোগ

142

বান্দরবান প্রতিনিধিঃ-বান্দরবানের লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ নামের একটি কোম্পানীর বিরুদ্ধে সরকারী লীজ চুক্তি অমান্য করে জোর পূর্বক পাহাড়ে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি মুরুং ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের আবাদীয় জায়গা আগুনে পুড়ে জবর দখলের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের লাংকং মুরুং পাড়া কারবারী লাংকং মুরুং, রেংয়েন মুরুং পাড়া কারবারী রেংয়েন মুরুং ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়া কারবারী বৈসুরাম ত্রিপুরা যৌথভাবে পাড়াবাসীর পক্ষে এ অভিযোগ করেন।
এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজের ম্যানেজার মো. আরিফ হোসেন ও চট্টগ্রামের ১১০ নুর আহমদ সড়কের সাহিত্য নিকেতনের বাসিন্দা আবু ছৈয়দ চৌধুরীর ছেলে মাহামুদুল হাসানের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৩০-৩৫ জনকে বিবাদী করে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগও করেন তারা।
এদিকে আগুনে পুড়ে দেওয়ার কারণে একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে পাহাড়ের মাটির গুণাগুণ তেমনি ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য। সচেতন মহলের অভিমত, জায়গা জবর দখলকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় উভয় পক্ষের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। অভিযোগে জানা যায়, ৩০৩নং ডলুছড়ি মৌজার রাবার ৮৫ নং হোল্ডিংয়ের ১০৫৫/১৪ নং দাগের আন্দর ২৫ একর ও রাবার ৯৫নং হোল্ডিংয়ের ১০৫৫/১৫নং দাগের ২৫ একর পাহাড়ি জমি ৪০ বছর মেয়াদী চুক্তিতে লিজ নেয় লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ। কিন্তু কোম্পানী লীজ চুক্তি অমান্য করে সরকারি সংশ্লিষ্ট মৌজা হেডম্যান, সার্ভেয়ার, কানুগো অথবা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক জায়গা পরিমাপ পরিচিহ্নিত করে দখল বুঝে না নিয়ে কিংবা বাগান সৃজন না করে বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের জাল জালিয়াতি, প্রতারণা, অর্থ, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বাহিরাগত রোহিঙ্গা ভাড়াটিয়া ব্যবহার করে স্থানীয় মুরুং ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের পূর্ব পুরুষের শত বছরের দখলীয় আবাদীয় জায়গা, বাগান, গোচরণ ভুমি দখল শুরু করেছে। এতে মুরুং ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন জায়গা জবর দখলে বাঁধা প্রদান করলে মামলা দিয়ে উচ্ছেদ ও দেশ ত্যাগ করাসহ বিভিন্ন হুমকি দেন লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজের লোকজন। ইতিমধ্যে কোম্পানীর লোকজন জোর পূর্বক ৭৫ একর জায়গায় আগুন লাগিয়ে পুড়ে ছাই করে দিয়েছেন। এতে শুধু বিভিন্ন প্রাণী ধ্বংস হচ্ছে না, নষ্ট হয় পাহাড়ের মাটির গুণাগুণ, ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতিও।
অপরদিকে পাড়ার রেংওয়াই মুরুং (৩৫), অংহ্লাই মুরুং (২৭) ও চিলিট মুরুং (৩৮)সহ অনেকে জানান, আগুনে পুড়িয়ে দেয়া জায়গা যুগ যুগ ধরে বাপ দাদারা আবাদ করে ভোগ করার পর এখন তারাও ভোগ করে আসছিলেন। সম্প্রতি লামা রাবারের লোকজন তাদের লীজের জায়গা বলে দাবী করেন। তারা আরো বলেন, তিন পাড়ার লোকজনের এ জায়গা ছাড়া তাদের আর কোন জায়গা নেই। এ জায়গায় জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তিন পাড়ার বাসিন্দারা।
পাড়াবাসী আরোও অভিযোগ করে বলেন, লামা রাবার ইন্ড্রাষ্ট্রিজ কর্তৃপক্ষ বহিরাগত রোহিঙ্গা নিয়ে আমাদের আবাদীয় এবং ভোগ দখলীয় জায়গায় নতুন ভাবে বাগান সৃজনের জন্য বাঁশ, গাছ কেটে ফেলে আগুন লাগিয়ে পুড়ে ছাঁই করে দিয়েছে। আমরা বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, হেডম্যান ও পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ ও লুলাইং আর্মি ক্যাম্প কমান্ডারকে অবগত করে সুবিচার প্রার্থনা করেছিলাম। কিন্তু লামা রাবার কর্তৃৃপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় কারো কথা কর্ণপাত করছেন না। বিধায় নিজেদের ভিটেমাটি, বাগান, গোচরণ ভুমি ও পাড়াবন রক্ষার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছি। আমাদের জায়গার দখল ও হেডম্যান রিপোর্টও আছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজের ম্যানেজার আরিফ হোসেন বলেন, আমরা সরকার কর্তৃক প্রদত্ত লীজকৃত জায়গায় আগেও বাগান সৃজন করেছি, বর্তমানে ওই জায়গায় পূণরায় বাগান সৃজনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। ওখানে তাদের কোন জায়গা দূরে থাক কোন বসতিও নেই। প্রকৃত পক্ষে মুরুং ও ত্রিপুরাদের পাড়া আমাদের লিজকৃত জায়গা থেকে ৩-৫ কিলোমিটার দূরে। এছাড়া তাদের জায়গার দখল কিংবা বৈধ কোন কাগজপত্রও নেই। তারা অযুক্তিকভাবে আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন।
সরই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফরিদ উল্ আলম জানান, লামা রাবার ইন্ড্রাষ্ট্রিজের লোকজন মুরুং ও ত্রিপুরাদের জায়গায় আগুন লাগিয়ে পুড়ে দেওয়ার ঘটনা শুনার পর লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অপরদিকে অভিযোগের সূত্র ধরে গত মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রেজা রশীদ সরেজমিন পরিদর্শন করে বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বিরোধীয় জায়গায় দুই পক্ষকেই না যাওয়ার জন্য নিষেধ প্রদান করেন। এসময় স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। তবে বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ও এলাকার শান্তি শৃঙ্খলার স্বার্থে দুই পক্ষকে বিরোধীয় জায়গায় না যেতে কিংবা কাজ না করতে বলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।