কচুরিপানায় ছেয়ে গেছে কাপ্তাই হ্রদের অভ্যন্তরের বিস্তীর্ণ এলাকা, নৌ চলাচল বিঘ্নিত, জেলেরাও পড়েছে বিপাকে

295

মিল্টন বাহাদুর, রাঙ্গামাটিঃ-হুমকিতে পড়েছে দেশের বৃহত্তম কাপ্তাই হ্রদের পরিবেশ। রাঙ্গামাটির অভ্যন্তে কচুরিপানায় ছেয়ে গেছে হ্রদের বিস্তীর্ণ এলাকা। কচুরিপানার জঞ্জালে মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে কাপ্তাই হ্রদের পানি। কচুরিপানা পঁচে গলে হ্রদের পানিকে দূষিত করে তুলেছে। এ অবস্থায় হ্রদের পানি ব্যবহার করে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
জরজমিনে দেখা যায়, কাপ্তাই হ্রদের অভ্যন্তরে প্রায় ১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে কচুরিপানার। হ্রদে জমে থাকা কচুরিপানার জঞ্জালের কারণে শহরের অভ্যন্তরে নৌ চলাচলও বিঘ্নিত হচ্ছে। দৃশ্যত, কাপ্তাই ও রাঙ্গামাটি শহর ঘিরে থাকা এই হ্রদটি এখন কচুরিপানারই দখলে। জঞ্জালের কারণে সাপ ও মশাও এখানে আবাস গড়ে তুলেছে। বেড়েছে এসবের উপদ্রবও।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিগত বর্ষা মৌসুমে সীমান্ত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কচুরিপানা এসে হ্রদে একাকার হয়ে যায়। এ ছাড়া হ্রদে জেলেরাও মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করায় আগ্রাসন ঘটে কচুরিপানার। আর দিন দিন হ্রদের পানি কমতে শুরু করায় কচুরিপানার কারণে হ্রদের পানি দেখা যায় না। শহরের কয়েকটি এলাকায় কচুরিপানার কারণে মনে হয় বিশাল এলাকা জুড়ে মাঠ।
দীর্ঘ ৫/৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে কচুরিপানার জঞ্জাল এখানে স্থায়ী সমস্যায় রূপ নিয়েছে। ফলে রাঙ্গামাটি শহরের সাথে নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থাও অচল হবার উপক্রম। সেই সঙ্গে রাঙ্গামাটি শহরের তবলছড়ি এলাকা, আসামবস্তি এলাকা, মাঝেরবস্তির শান্তি নগর, পুরাতন বাস ষ্টেশনের বাইতুশ শরফ, পুরাতন হাসপাতাল এলাকা, জেল রোড কন্ট্রেকটর পাড়াসহ কাপ্তাই হ্রদের অন্যান্য এলাকার অবস্থাও একই রূপ ধারণ করেছে। এইসব এলাকায় দূর দেখলে থেকে মনে হয় বিশাল মাঠ। এই সমস্ত এলাকায় আসতে পারে না কোন নৌকা ও ইঞ্জিন চালিত বোট।
আর পাহাড়ি এলাকার অধিবাসীদের পানীয় জল এবং যাবতীয় ব্যবহার্য পানির জন্য কাপ্তাই হ্রদের পানি ব্যবহৃত হয়। ফলে হ্রদের পানি বিশুদ্ধ না থাকায় এবং পানি বিশুদ্ধকরণের ব্যবস্থা না থাকায় এখানকার মানুষ বাধ্য হয়ে দূষিত পানি ব্যবহার করছে।
অপরদিকে দুর্ভোগে পড়েছে নৌ যানে যাতায়াতের সাধারণ মানুষেরা। হ্রদের পানিতে কচুরিপানা জমাট বেধে থাকায় বড় নৌযান কোন মতে চলতে পারলেও ছোট নৌযান চলাচল তীব্র বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। অপর দিকে জেলেরাও পড়েছে বিপাকে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দিনের পর দিন এই করুন অবস্থার সৃষ্টি হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোন উদ্যোগ গ্রহন না করায় দিন দিন কচুরীপানার জঞ্জাল বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে মৎস্যজীবি ও নৌ যানে চলাচলরত মানুষের দূর্ভোগও বেড়ে যাচ্ছে।
এব্যাপারে আসামবস্তী এলাকার বাসিন্দা দীলিপ কুমার দাশ জানান, আসামবস্তী এলাকার আনাচে কানাচে কচুরীপানার জঞ্জালে ছেঁয়ে গেছে পুরো এলাকা। এলাকার সাধারন মানুষ কাপ্তাই হ্রদে গোসল ও অন্যান্য কাজে হ্রদের পানি ব্যবহারের কারণে শরীরে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তেমনী নদী পথে যোগাযোগেরও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
ইঞ্জিন চালিত নৌযান করে বাজারে কাঁচা মালামাল বিক্রি করতে আসা শান্তি রঞ্জন চাকমা ও কিনা চাঁন তংচঙ্গ্যা জানান, কাপ্তাই হ্রদের কচুরিপানার যানজটের ফলে ২মিনিটের স্থান পৌছাতে এখন সময় লাগে ১/দেড় ঘন্টা। এতে বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে আসা আমাদের কাঁচা শাকসবজি পথে মধ্যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া দু’মিনিটের পথ অতিক্রান্ত করতে বহু ইঞ্জিন চালিত নৌকার প্রায় ১০ থেকে ১৫ লিটার তেল খরচ হচ্ছে। বহু ইঞ্জিন চালিত নৌযানের পাখা কচুরিপানার কারনে ভেঙ্গে যাচ্ছে। তাই দ্রুত কচুরিপানা অপসারণের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
রাঙ্গামাটির শহরের আনাচে কানাচে কাপ্তাই হ্রদে কচুরী পানার জঞ্জালের কথা স্বীকার করে পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে কচুরিপানা কাপ্তাই হ্রদের আনাচে কানাচে বিশাল এলাকা জুড়ে অবস্থান করার কারনে সহজে কিছু করা যাচ্ছে না। আর এসব কচুরিপানা পরিষ্কার করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। প্রকল্পের অর্থ ছাড়া ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে পরিষ্কার সম্ভব নয়। তবে এই কচুরিপানার সমস্যা সমাধানের জন্য ইতিমধ্যে উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। এর জন্য সরকারের কাছে অর্থ বরাদ্ধ চাওয়া হবে বলে তিনি জানান।