আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক পেল পাহাড়ের সন্তান মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা

171

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ-মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা। পিতা বরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও মা সবিতা রাণী ত্রিপুরা। ছোটকাল থেকেই সম্পৃক্ত সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সমাজ আন্দোলনকামী নানা সংগঠন ও উদ্যোগের সাথে। তারমধ্যে ছাত্রত্ব থাকাকালীন বাংলাদেশে ত্রিপুরা ছাত্র সমাজের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী সামাজিক ও অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন ত্রিপুরা স্টুডেন্টস্ ফোরাম, বাংলাদেশ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে, বর্তমানে ত্রিপুরা সমাজের অভিভাবক সংগঠন ‘বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ (বিটিকেএস)’র সাহিত্য ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক, স্থানীয় স্বনামধন্য এনজিও সংস্থা ‘জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিনিয়ত লেখেন নিজের মাতৃভাষা ককবরক, বাংলা ও ইংরেজীতে। সম্পাদনা করেছেন উল্লেখযোগ্য সংকলন, উন্নয়ন জার্নাল ও সাময়িকী। প্রকাশিত সাময়িকী ও গ্রন্থের সংখ্যা ৪০টি। লেখার ক্ষেত্র’র মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ছড়া, কবিতা ও প্রবন্ধ।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তিন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক পেয়েছেন। প্রথমবারের মতো গত রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এ পদক তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
তিনি বলেন, এখন থেকে প্রতি দুবছর অন্তর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মাতৃভাষার সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন ও বিকাশে অবদানের জন্য এ পদক দেয়া হবে।
এদিন মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান ও ‘মাতৃভাষা পদক ২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চার দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সরাসরি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের এই গৌরব সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছি। ভাষার অধিকার, পৃথিবীর সব হারিয়ে যাওয়া ভাষা সংরক্ষণ ও ভাষা গবেষণার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। এখানে ভাষা যাদুঘর করা হয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা সম্মানজনক প্রতিষ্ঠান।
জাতীয় পর্যায়ে মাতৃভাষার সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন ও বিকাশে অবদানের জন্য এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক-২০২১ পেয়েছেন জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষা সংরক্ষণে অনন্য অবদানের জন্য খাগড়াছড়ির জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা পান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উজবেকিস্তানের গবেষক ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ ও লাতিন আমেরিকার আদি ভাষাগুলো নিয়ে কাজ করা বলিভিয়ার অনলাইন উদ্যোগ অ্যাক্টিভিজমো লেংকুয়াস এ বছর বাংলাদেশ সরকারের এ সম্মাননা পেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন। মূল প্রবন্ধ ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু’ উপস্থাপন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে এতে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী, জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জিনাত ইমতিয়াজ আলী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি বিয়াট্রিস কালদুন।
মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা পেশা ও লেখালেখির কল্যাণে দেশের বিভিন্ন জনপদের পাশাপাশি গিয়েছেন ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে।
এদিকে বাংলাদেশে পাহাড়িদের মধ্যে সর্বপ্রথম ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক’ অর্জন করায় মথুরা বিকাশ ত্রিপুরাকে ত্রিপুরা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর বিশিষ্টজনরা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন- তাঁর এ স্বীকৃতি অর্জন আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের বিষয়। এ প্রথম ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক’ প্রদানে শুভ সূচনার জন্য খাগড়াছড়ির সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন পেশাজীবির মানুষ বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে ধন্যবাদ জানান।