রাঙ্গামাটিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনাঃ শিল্পীদের তালিকা প্রনয়নে অসঙ্গতির অভিযোগ জেলা শিল্পকলা একামেডির বিরুদ্ধে

297

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙ্গামাটিঃ-সঠিকভাবে তালিকা না হওয়াতে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদেয় প্রণোদনা অনুদান থেকে বঞ্চিত হয়েছেন রাঙ্গামাটির কিছু সংখ্যক প্রকৃত শিল্পী ও কলাকুলশীরা। রাঙ্গামাটির সঙ্গীতশিল্পী ও কলাকুলশীদের পাশে-পাশি যাদের আগে কখনো সাংস্কৃতিক অঙ্গণে দেখা যায়নি সেই ধরনের নামের তালিকা উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর প্রদেয় প্রণোদনা তালিকায়। এভাবে যদি রাঙ্গামাটি জেলা শিল্পীকল্পা একাডেমি থেকে তালিকা প্রনয়ন করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে প্রকৃত শিল্পী ও কলাকুলশীরা সাংস্কৃতিক অঙ্গণ থেকে উৎসাহ হারিয়ে যাবে বলে অভিযোগ করে মন্তব্য করেছেন রাঙ্গামাটির স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা।
জানা যায়, করোনাকালীন সময়ে রাঙ্গামাটি জেলার করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় অসচ্ছল সংস্কৃতিসেবীদের প্রণোদনা প্রদানের উদ্যোগ নেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারাই ধারাবাহিকতায় প্রথম ধাপে রাঙ্গামাটিতে পাঁচ হাজার টাকা করে পান ৯০ জন সংস্কৃতিসেবী। দ্বিতীয়ধাপে তালিকা আসে মোট ১১৬জন সংস্কৃতিসেবীর নামের তালিকা।
সঙ্গীতশিল্পী পুন্য শংকর চাকমা বলেন, দীর্ঘবছর ধরে শিল্পকলা, জেলা পরিষদ শুরু করে সরকারি-বেসরকারি প্রোগ্রামে গান গেয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার তালিকায় আমার নাম নেই। যদিই তালিকায় উঠার যোগ্যতা হয়নি তাহলে সরকারি-বেসরকারি প্রোগ্রামে আমাকে ডাকা হয় কেন। প্রকৃত শিল্পীরাই প্রণোদনা পেলে আমিও খুশি হতাম। তবে পরবর্তীতে যাতে প্রকৃত ও সঠিকভাবে তালিকা করা হয় তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান তিনি।
গণমাধ্যমকর্মী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তি নন্দন দেবনাথ বলেন, জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে যতবারই যায় তখনি অনুসিনথিয়া চাকমা তালিকা হওয়ার সুযোগ নেই বলেন। শুধু তাই নয়, আগের বারে যে তালিকা হয়েছে সেখানে অধিকাংশ সংস্কৃতিসেবী নয়। প্রতিবারেই তার নিজস্ব পছন্দের ছোটখাটো অনুষ্ঠানে গান করা শিল্পীদের তালিকা করেন তিনি।
হিলর প্রোডাকশনের সাংগঠনিক সম্পাদক নিপায়ন চাকমা বলেন, তালিকা হয়েছে শুনেছি মাত্র। কিন্তু কখনো আমাদের সংগঠনের সদস্যদের নামের তালিকা চাওয়া হয়নি এবং কেউ আসেনি। যারা তালিকা করেন তারাই তাদের পছন্দের পরিচিতদের তালিকায় অর্ন্তভূক্ত করেন মাত্র। এত বছর সাংস্কৃতিক অঙ্গণে কাজ করেও আমাদের সংগঠনের সদস্যদের নামের তালিকা উঠে না।
সঙ্গীত শিল্পী রূপেশ চাকমা বলেন, আমি প্রণোদনা চাচ্ছি তা নয়। কথা হচ্ছে রাঙ্গামাটির প্রকৃত সংস্কৃতিসেবীরা বাদ পড়েছে। অনেকে আছেন, যারা সবেমাত্র সাংস্কৃতিক অঙ্গণে কাজ করা শুরু করেছেন তারাই প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা পাচ্ছে অথচ প্রকৃত শিল্পীরাই বাদ পড়েছে। যা খুবই দুঃখজনক।
গণমাধ্যমকর্মী ও সঙ্গীত শিল্পী মিল্টন বাহাদুর গুর্খা বলেন, দীর্ঘ ১০ থেকে ১২ বছর আগে থেকে সাংস্কৃতিক অঙ্গণে কাজ করে আসছি। বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রোগ্রামে গান করার সুযোগ হয়েছে। বলতে গেলে যখন রাঙ্গামাটির সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অবস্থা ভালো ছিলোনা। তখন আমরাই এই সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে ধরে রেখেছিলাম। বর্তমানে পেশা বদলানোর কারণে সময় হয়ে উঠেনা। তবুও মাঝে মধ্যে সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামে গান করছি। কিন্তু আমাদের মূল্যায়ন করা হয়নি তাই করোনাকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হলাম।
জেলা প্রশাসক একে এম মামুনুর রশিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার শিল্পী ও কলাকুশলীদের তালিকা করেছে জেলা শিল্পকলা একাডেমি। যারা যারা বাদ পড়েছে কিংবা আরো কিভাবে তালিকা করা যায় তা জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার জানবেন। জেলা প্রশাসন শুধুমাত্র মাধ্যম হয়ে প্রণোদনার চেক বিতরণ করেছে মাত্র।
অপরদিকে রাঙ্গামাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমি জেলা কালচারাল অফিসার অনুসিনথিয়া চাকমা বলেন, দ্বিতীয়ধাপে যাদের তালিকা করা হয়েছিলো তখন সময় ছিল মাত্র তিনদিন। অল্পসময়ে যারা নামের তালিকা দিয়েছেন তাদের তালিকা পাঠিয়েছি। যাদের নাম তালিকায় আসেনি তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকা কারণে তালিকায় অর্ন্তভূক্তকরণ হয়নি। এতে আমার করার কিছু নেই।