ডেস্ক রিপোর্টঃ-সারা দেশে নির্মিত ও নির্মাণাধীন জাতির পিতার ম্যুরাল-ভাস্কর্যের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক সশস্ত্র পুলিশের টহলের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে হাই কোর্টকে জানানো হয়েছে।
পুলিশ মহাপরিদর্শকের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টহল ও গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে।
অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (কনফিডেনশিয়াল) মো. হায়দার আলী খানের স্বাক্ষরে পাঠানো প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১ হাজার ২০১টি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে; নির্মাণাধীন আছে আরও ১৯টি।
প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মুজিবর্ষের মধ্যে জেলা উপজেলা সদর দপ্তরে জাতির পিতার ম্যুরাল স্থাপনের যে নির্দেশনা ছিল তার অগ্রগতি জানিয়ে আগামী ২১ জানুয়ারি আরেকটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের ভাস্কর্যবিরোধী অবস্থান এবং কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে গত ৭ ডিসেম্বর হাই কোর্ট বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও ভাস্কর্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়।
সেই সঙ্গে আগামী এক মাসের মধ্যে জেলা-উপজেলা সদরে জাতির জনকের ম্যুরাল স্থাপনের অগ্রগতির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রতিবেদন দিতে বলে।
সে নির্দেশেই মন্ত্রিপরিষদ, গণপূর্ত সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের পক্ষ থেকে জাতির পিতার ম্যুরাল- ভাস্কর্য স্থাপন এবং এর নিরাপত্তা বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়, যা মঙ্গলবার আদালতে উপস্থাপন করা হল।
গত বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে আদালত বলেছিল, একাত্তরের যে দিনটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, সেই ৭ মার্চকে ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ ঘোষণা করে এক মাসের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া মুজিববর্ষের মধ্যেই দেশের সব জেলা-উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করতে হবে।
সেদিন আদালত এই আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের দেওয়া একটি প্রতিবেদন গত বছর ৭ ডিসেম্বর আদালতে দাখিল করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সেটি আদালতে উপস্থাপন করেন। রিটকারী আইনজীবী আইনজীবী বশির আহমেদও সে সময় শুনানিতে যুক্ত ছিলেন।
বাস্তবায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের ম্যুরাল তৈরির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ৩৮০টি উপজেলা এবং ৬৩টি জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে স্থাপন করে সম্মুখভাগে জাতির পিতার ম্যুরাল স্থাপন করেছে।
এছাড়া আদালতের নির্দেশে মন্ত্রিসভা ইতোমধ্যে ৭ মার্চকে ‘ঐতিহাসিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদের করা রিটে ৭ মার্চকে কেন ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল হাই কোর্ট।
এছাড়া একাত্তরের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্থানে, যে মঞ্চে ভাষণ দিয়েছিলেন, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ, মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল যেস্থানে সেই স্থানে মঞ্চ পুনঃনির্মাণ কেন করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছিল রুলে।
৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের সময় বঙ্গবন্ধুর ‘স্পিচ মোডের’ (তর্জনি উচিয়ে ভাষণের সময়কার ভঙ্গি) ভাস্কর্য নির্মাণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়।
সেই রুলের শুনানিতে রিট আবেদনকারীর সম্পূরক আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট ৭ মার্চকে ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেয়।