খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় ইউপিডিএফের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

138

ডেস্ক রিপোর্টঃ-নানা কর্মসূচি ও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমার দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানা যায়।
শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) ইউপিডিএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল দলীয় পতাকা উত্তোলন, অস্থায়ী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ইত্যাদি। এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে নানা শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন টাঙানো হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় এক বর্ণিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় রঙবেরঙের পতাকায় সাজানো হয় অনুষ্ঠানস্থল।
‘শত শহীদের আত্মবলিদানে চেতনার অগ্নিমশাল প্রজ্জ্বলিত, সকাল ৯টায় অগ্রণী শিশু-কিশোর কেন্দ্রের সদস্যসহ গণসংগঠনের নেতা-কর্মীরা, শহীদ পরিবারবর্গ ও শুভাকাঙ্খী-সমর্থকসহ বিভিন্ন এলাকার জনসাধরণ অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন।
পরে অনুষ্ঠানস্থলে ‘উই শ্যাল ওভার কাম’ গানটি সুরে সুরে গেয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়। এ সময় পার্টির ২২ বছরের প্রতিরোধ সংগ্রামকে স্মরণীয় করে রাখতে ২২ বার ব্যান্ডের আওয়াজ বাজাতে বাজাতে পতাকা উত্তোলন করা হয়।
এরপর ২২ বছরে জনগণের জন্য রক্ত দিয়ে লড়াই সংগ্রামে সাহসিকতার সাথে ভুমিকা রেখে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় ইউপিডিএফের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি সদর ইউনিটের প্রধান সংগঠক অংগ্য মারমা, সদস্য সুনাম চাকমা ও বিজয় মারমা। অগ্রণী শিশু-কিশোর কেন্দ্র থেকে পুষ্প স্তবক অর্পণ করেন জয়া চাকমা, তিশা চাকমা, অর্পিতা চাকমা, শহীদ পরিবারে পক্ষ থেকে পুষ্প স্তবক অর্পণ করেন শহীদ অনিমেষ চাকমার সহধর্মিণী মিন্টি চাকমা ও শহীদ রিগেন চাকমার সহধর্মিণী যবনীকা চাকমা, তিন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্প স্তবক অর্পণ করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিপুল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক রিপন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নীতি চাকমা এবং নারী সমাজের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রিকো দেওয়ান, রেখী খীসা প্রমুখ।
শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের পর শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন ইউপিডিএফের জেলা ইউনিটের সংগঠক অনি চাকমা, সদর ইউনিটের সংগঠক অংগ্য মারমা।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ২২ বছর অতিক্রম করা সহজ ছিল না। শাসকগোষ্ঠীর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন, গ্রেফতার, হত্যা, অপহরণ, গুমের শিকার হয়েও ইউপিডিএফ দমে যায়নি। শাসকগোষ্ঠীর সকল ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে ইউপিডিএফ তার লক্ষ্য অটল রয়েছে এবং জনগণের মুক্তির জন্য পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
বক্তারা আরও বলেন, জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে বাধা সৃষ্টি করতে শাসকগোষ্ঠী একদিকে নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে মদদ দিয়ে খুন, গুম, অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। শাসকগোষ্ঠীর এই অন্যায়-অবিচার ও জাতি ধ্বংসের নীলনক্সার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইউপিডিএফ-এর পতাকাতলে সমবেত হয়ে আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানান।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সমবেত সকলের সম্মূখে পার্টি ও তিন গণসংগঠনের নেতা-কর্মীরা পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকারহারা নিপীড়িত জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে পরিচালিত পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ের অবিচল থাকার অঙ্গীকারসহ ৫টি বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন। প্রতিজ্ঞাপত্র পাঠ করান ইউপিডিএফ সদর ইউনিটের সংগঠক অংগ্য মারমা।
পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা।
খাগড়াছড়ি সদর ছাড়াও জেলার দীঘিনালা, মহালছড়ি, গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, ফেনী-তবলছড়ি, মানিকছড়ি, রামগড়, লক্ষ্মীছড়ি; রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী, কুদুকছড়ি, নান্যাচর, লংগদু, সাজেক এবং বান্দরবানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে।