প্রভাবশালী সংগঠন রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন, ইস্তেহারের দাবি ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দদের

রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড’র ১১তম ব্যবস্থাপনা কমিটি নির্বাচন-২০ইং

279

শাহ আলম, রাঙামাটি: রাঙামাটি জেলার অর্থনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা বৃহত্তর ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী সংগঠন ‘‘রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির লিমিটেড’’ এর আগামী ১৫ই ডিসেম্বর ইস্তেহারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নিয়ে বর্তমান কমিটি ও সাধারণ সদস্যসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সমিতির নির্বাচনের সময় অতি সন্নিকটে চলে এলেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ-প্রার্থীরা এখন পর্যন্ত (এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত) কেউ নির্বাচনী ইস্তেহার ঘোষণা করেননি। এতে করে শুভংকরের ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে বলে সমিতির সাধারণ সদস্য ও কাঠ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। নির্বাচনে ইস্তেহার না থাকা মানে, অনেকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকার সামিল বলে উল্লেখ করেছেন। নির্বাচনী ইস্তেহার ইস্যুতে বর্তমান কমিটি সহ কাঠ ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে শহরে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। প্রতীক পেয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। আগামী ১৫ ডিসেম্বর ২০ইং তারিখে ১১তম ব্যবস্থাপনা পরিষদ এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাঙ্গামাটির বাণিজ্যিক এলাকা বনরুপাসহ ও পৌর এলাকায় ব্যানার, পোস্টার আর ফেষ্টুনে ছেয়ে গেছে। তবে যত্রতত্র ব্যানার, পোস্টার আর ফেষ্টুন লাগানোর কারনে শহরের সৌন্দর্য্য হ্রাস পেয়েছে। এ নিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করেছেন।

রাঙ্গামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড’’ এর বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আবু এ প্রতিবেদককে জানান, নির্বাচনে ইস্তেহার ঘোষণা করা, না করা প্রার্থীদের একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে সমিতির বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি কি করবে বা কি করার আছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ইস্তেহার ঘোষণা করলে, কর্মকর্তা ও কর্যকরি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কোন সমস্যা হলে এবং কার্যে ব্যতয় ঘটলে বা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে তখন সাধারণ সদস্যরা ইস্তেহার বা তাঁর দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে কথা বলার অধিকার সংরক্ষণ করবে কিন্তু পদপ্রার্থী এ পর্যন্ত ইস্তেহার ঘোষণা করে নাই। এটি খুব দু:খজনক। সমিতির সাধারণ সদস্যদের পক্ষ থেকে তিনি সর্বশেষ বলেন, আমরা যাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবো তাদের কাছে জোর দাবী ব্যবসায়ীক সমস্যা সমধান, আশার আলো ও নতুন নতুন স্বপ্ন সম্বলিত ব্যবসায়ীক দিক নির্দেশনাসহ অবিলম্বে নির্বাচনী ইস্তেহার ঘোষণা করা হউক।

নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক বেশ কয়েকজন কাঠ ব্যবসায়ী বলেন, একটি নির্বাচনে ইস্তেহার থাকাটা জরুরী। ইস্তেহার ছাড়া একটি সংগঠন কিংবা সদস্যদের উন্নয়নে শুভংকরের ফাঁকি থাকার সম্ভাবনা থাকে। নির্বাচনে ইস্তেহার না থাকলে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত নেতৃবৃন্দদের কোন স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা থাকে না। নিজেদের ইচ্ছেমত সংগঠন পরিচালনা করার চেষ্টা ও প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে। যা পরবর্তীতে সমিতি ও সদস্যদের মধ্যে নীতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমরা ব্যবসায়ীরা চাই নির্বাচনে প্রার্থীরা তাদের ইস্তেহার ঘোষণা করুক। এটি আমাদের দাবি।

রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড’’ এর ১১তম ব্যবস্থাপনা বার্ষিকী নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মোঃ জমির উদ্দিন জানান, আমরা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষথেকে প্রার্থীদের ১৫টি ব্যানার লাগানো অনুমতি দিয়েছি এবং শহরের যত্রতত্র ব্যানার, পোস্টার আর ফেষ্টুন না লাগানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। কিন্তু আমরা আভিযোগ পেয়েছি অনেক প্রার্থী যত্রতত্র ব্যানার, পোস্টার আর ফেষ্টুন লাগিয়েছেন। এটি নির্বাচনী আচারণ বিধি লঙ্গন ও দু:খজনক। আমরা ইতিমধ্যে প্রার্থীদের নির্দেশনা দিয়েছি যাতে যত্রতত্র ব্যানার, পোস্টার আর ফেষ্টুন খুলে ফেলা হয়। অন্যথায় নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্গনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, ০৯ টি পদ নিয়ে ১২সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হবে। চলতি মাসের ০৫ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবারের নির্বাচনে ‘‘রাঙ্গামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড’’ এর নির্বাচনে ০৯টি পদের বিপরীতে ২৬জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেনি। নির্বাচন যথা সময়ে ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে সচেতন মহল বলছেন, গণতান্ত্রিক নিয়মে এখানে যে নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু যখন সংগঠন বা প্রার্থীদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা বা উন্নয়নের কোন দিক নির্দেশনা বা ইস্তেহারই নেই সেখানে নির্বাচনের প্রতিদ্ধন্ধীতার ইচ্ছে প্রকাশ ঘটছেনা। তাই সাধারন সদস্য এবং ব্যবসায়ীরাও তাদের উন্নয়নে অনিশ্চিত দিকেই থাকছে।

যেসব পদে নিয়ে ১১তম বার্ষিকী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে:
১) সভাপতি, ২) সহ-সভাপতি, ৩) সাধারণ সম্পাদক, ৪) সহ-সাধারণ সম্পাদক, ৫) অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক, ৬) সমাজ সেবা ও উন্নয়ন সম্পাদক, ৭) তথ্য ও প্রচার সম্পাদক, ৮) দপ্তর সম্পাদক, ৯) কার্যনির্বাহী সদস্য। [বি: দ্র: নির্বাচনে প্রত্যেক পদের জন্য ১জন করে নির্বাচিত হবে কিন্তু কার্যনির্বাহী সদস্য পদে ৪জন।]

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারীর নাম ও প্রতীক:
সভাপতি পদে হাজী মোঃ আনেয়ার মিয়া বানু (হারিকেন), মোঃ আজম খান (চেয়ার) ও মো: আবু ইউসুফ ভূইয়া (বাইসাইকেল)। সহ-সভাপতি পদে হাজী হাবিবুর রহমান চৌধুরী (হরিন) ও মো: আনোয়ার খান (রিক্সা)। সাধারণ সম্পাদক পদে মো: শাওন ফরিদ (আনেয়ার) ও কাজী মো: শহিদুল্লাহ (দেওয়াল ঘড়ি)। সহ- সাধারণ সম্পাদক পদে মো: জহির আলম (টেলিভিশন), নুর মোহাম্মদ (ফুটবল) ও বখতেয়ার হোসেন মুরাদ (বৈদ্যুতিক পাখা )। অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক পদে মো: শহিদুল্লাহ কাজল (শাপলা), ও বখতেয়ার উদ্দিন চৌধুরী (তালা চাবি)। সমাজসেবা ও উন্নয়ন সম্পাদক পদে মো: জহির উদ্দিন তালুকদার (টেবিল) ও মো: লোকমান হাকিম হীরা (চশমা)। তথ্য ও প্রচার সম্পাদক পদে মো: জসিম উদ্দিন (টেলিফোন) ও মোঃ নুরুল ইসলাম (বই)। দপ্তর সম্পাদক পদে মো: জাহিদুল ইসলাম তালুকদার (মাছ), মোঃ আবদুল মোনাফ (দোয়েল পাখি) ও মানিক রতন নাথ (তারা)। কার্য্যকরী সদস্য পদে মোঃ মোজাহেরুল ইসলাম ওয়াসিম (আম), অর্পন সাহা (মোরগ), মোঃ ইকবাল আহমেদ (চাকা), নুর হোসেন রানা (কলসি), মোঃ আলমগীর (গরুর গাড়ী), মোঃ আরফান আলী প্রজাপতি, মোঃ খুরশেদ (বালতি)।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সমিতির প্রত্যেক প্রার্থীকে বিজয়ী হতে হবে। সমিতির সর্বমোট সদস্য সংখ্যা সর্বমোট ৪৩০জন। তারা সকলেই ভোটার বলে জানানো হয়।

উল্লেখ্য: রাঙ্গামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি লিমিটেড এর মাধ্যমে রাঙ্গামাটি জেলার হাজার হাজার ব্যবসায়ী ও শ্রমিক আসবাবপত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এ ব্যবসা সমিতির রাঙামাটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে অধিকাংশ সদস্যই অভিযোগ করেছেন যারা কাঠ ব্যবসার সাথে জড়িত নয় তাদেরকেও সদস্য করায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।