পাহাড়ের আলো ডেস্কঃ-পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির এখনো যেসব বিষয়ে সমাধান হয়নি তা সংঘাত নয় বরং আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি।
বুধবার (২ ডিসেম্বর) পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৩তম বর্ষপূর্তিতে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমাসহ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পার্বত্য মন্ত্রী জানান, সংঘা, সংঘর্ষের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব না। জীবন মানের দিক দিয়ে দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনও পিছিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে নানা কর্মসূচী বাস্তবায়িত করছে সরকার।
মন্ত্রী আরও বলেন, শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভূমি। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কাজ প্রায় শেষ দিকে। এই কাজ সম্পন্ন হলে পাহাড়ের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন পার্বত্য মন্ত্রী। তিনি পার্বত্য এলাকায় উন্নয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সমস্যা সমাধানে পারস্পরিক আস্থা রাখার আহবান জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য শান্তি, আমাদের লক্ষ্য উন্নয়ন। আমরা যারা শান্তি চাই, হাতে হাত লাগিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছি। পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে অভিযোগ বা ব্লেম নয়, কোন জায়গায় বাধা আছে বা কোথাও কোনো সমস্যা হলে কিভাবে সমাধান করা যায় সেটি দেখতে হবে। সমস্যা যেমন আছে সমাধানও আছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের যে শান্তি চুক্তি হয়েছে সেটি আজ ২৩ বছরে পদার্পণ করল। শান্তি চুক্তিতে ৭২টি ধারা ছিল, তার মধ্যে আমরা ৪৮টি ধারা পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করেছি, ১৫টি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে, আর ৯টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভূমি। এই ভূমি নিয়ে কথা বলছে, তার মধ্যে আমরা ২০১৭ সালে সংশোধিত আকারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সংসদে ভূমি কমিশন আইন পাস করেছি। ফলে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করার কাজটি করতে আমাদের কয়েকবার চেয়ারম্যান পরিবর্তন করতে হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি। এতে ভূমি নিষ্পত্তির জন্য কিছু বিধি-বিধান, আইন-কানুনের বিষয় রয়েছে। তাই আমরা ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করেছি। ভূমি মন্ত্রণালয় এটি নিয়ে কাজ করছে।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর হতে অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের আয়তন প্রায় ১৩ হাজার ২৯৫ বর্গ কিলোমিটার। এই অঞ্চলের লোকসংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ। চাকমা, মারমাসহ অনেক উপজাতি এখানে বসবাস করেন। বিগত ১০ বছরে পার্বত্য অঞ্চলের যুবকদের শিক্ষাসহ প্রভৃতি উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
তিনি বলেন, অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু একটি আলাদা বোর্ড গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। যা তৎকালীন ভূমি প্রশাসন ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত রাঙ্গামাটি সার্কিট হাউজ সমাবেশে ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাঙ্গামাটির বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার অবশ্যই রক্ষা করা হবে মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এ অঞ্চলের উন্নয়নে নানা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুই প্রথমবারের মত পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রীদের মেডিকেল, প্রকৌশল ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোটায় ভর্তির সুযোগ করে দেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও সমাজভিত্তিক সুযোগ সৃষ্টিতে ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বরে পদ সংরক্ষণ নীতিমালা বঙ্গবন্ধু সরকার সমর্থন করেন। সেখানে উপজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা নির্ধারিত হয়েছিল।