লামায় ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিসের জনভোগান্তির প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি

165

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামাঃ-লামা উপজেলায় ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিস পূর্ণবহাল, স্থায়ী রেজিস্ট্রেশন অফিসার নিয়োগ প্রদান, রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমে এল.আর ফান্ডের নামে ৩% টাকা আদায় বন্ধ এবং ভূমি হস্তান্তর রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমে জটিলতা নিরসনের দাবীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট লামা উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
বুধবার (১৮ নভেম্বর ২০২০ইং) বেলা সাড়ে ১১টায় লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রেজা রশীদের মাধ্যমে উপজেলার শতাধিক মানুষের স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপি সূত্রে জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধিমালা ১৯০০ এর ২০ বিধিবলে বান্দরবান পার্বত্য জেলার রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তার দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের উপর অর্পিত। বান্দরবান জেলা প্রশাসক পুরো জেলায় ভূমি হস্তান্তর রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম পরিচালনায় ক্ষমতা হস্তান্তর করে প্রতিটি উপজেলায় রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা নিয়োগ করে এই কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। লামা উপজেলায় জেলা প্রশাসকের পক্ষে ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করতেন। গত ৩০শে জুলাই ২০২০ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক অফিস আদেশ মূলে জেলা প্রশাসকের পক্ষে রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কিত যাবতীয় কাজ সূচারু রূপে সম্পাদন করার জন্য বিভিন্ন কর্মকর্তাগণকে দায়িত্ব প্রদান করেন। লামা উপজেলায় একজন সহকারী কমিশনারকে সপ্তাহে ২ দিন উপজেলায় অবস্থান করে রেজিস্ট্রেশন কার্য সম্পাদন করার জন্য দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এই আদেশের কারণে লামা উপজেলার জনসাধারণের ভূমি হস্তান্তর রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কিত কার্যক্রমে জন ভোগান্তি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিকট উপজেলায় ৫ দিন অবস্থান করে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পাদন করার দাবী জানানো হয়। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন শাখার গত ১৬ই নভেম্বর ২০২০ ইং তারিখের এক অফিস আদেশে লামা উপজেলা এলাকার স্থাবর সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পাদন করার জন্য নিয়োজিত সহকারী কমিশনারকে প্রত্যাহার করে জেলা সদরে গিয়ে দলিল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আদেশ প্রদান করা হয়েছে।
সাবেক মহকুমা এই লামা উপজেলা সদর থেকে বান্দরবান জেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটারের অধিক। লামা সদর থেকে জেলা সদরে গমন করতে হলে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া ও চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া-সাতকানিয়া উপজেলা হয়ে বান্দরবান জেলা সদরে উপস্থিত হতে হয়। ক্রেতা বিক্রেতাকে ভূমি হস্তান্তর দলিল সম্পাদন করতে জেলা সদরে গমন ও অবস্থানে বিপুল পরিমাণ আর্থিক এবং সময়ের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মানুষের প্রয়োজনে ভূমি হস্তান্তর রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের এই ভোগান্তি দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে জন হয়রানির সৃষ্টি হয়েছে। বান্দরবান জেলার অন্যান্য উপজেলার ন্যায় লামা উপজেলায় অবস্থান করে ভূমি রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পাদন করার জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষে কর্মকর্তা নিয়োগের যথাযথ নির্দেশ দানের জন্য জনস্বার্থে স্মারকলিপি মূলে আবেদন করা হয়।
আরো বলা হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জনবান্ধব সরকার এবং প্রশাসন দেশের ১৮ কোটি মানুষের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। জেলা সদরে অবস্থান করে লামা উপজেলার রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার মো. কায়েসুর রহমান ভূমি রেজিস্ট্রেশন দলিল সম্পাদনে দলিলে উল্লেখিত মূল্যের উপর ৩% টাকা জনতা ব্যাংক, বান্দরবান শাখার সঞ্চয়ী হিসাব নং- ০৬৩৩০০২০৩৩০৯৪ এ জমা করে জমা স্লিপ রেজিস্ট্রেশন আবেদনের সাথে সংযোজন করার জন্য সকল দলিল লিখকদের মাধ্যমে মৌখিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তাহার দায়িত্বপালন কালীন সময় বাধ্যতামূলকভাবে এই টাকা নির্ধারিত হিসাবে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরকারীদের জমা দিয়ে দলিল কার্যক্রম সম্পাদন করতে হয়। এছাড়াও রেজিস্ট্রেশন অফিসের অফিস সহকারীদের দাবী মোতাবেক দলিল প্রতি অতিরিক্ত টাকা প্রদান করে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম করতে হয়। সঞ্চয়ী হিসাব নং- ০৬৩৩০০২০৩৩০৯৪ এর মাধ্যমে আদায়কৃত টাকা সরকারি কোন হিসাবে বা তহবিলে জমা হয় না। এই টাকা আদায়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্য কোন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নাই। ৩% টাকার মধ্যে বায়না নামা সম্পাদনের সময় ১.৫% এবং সাফ কবলা দলিল সম্পাদনের সময় ১.৫% জমা করতে হয়। সরকারি বিধি বিধানের বাহিরে গিয়ে চাপ প্রয়োগ করে এই ভাবে টাকা আদায় করার কারণে স্থাবর সম্পত্তি ক্রেতা বিক্রেতাগণ আর্থিক ক্ষতিসহ চরম হয়রানীর সম্মুখীন হচ্ছেন। সরকারি রাজস্বের বাহিরে এই ভাবে ৩% টাকা আদায় বন্ধ করার সদয় নির্দেশ দানে স্মারকলিপিতে আবেদন করে সচেতন নাগরিক সমাজ।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন, সাংবাদিক মুহাম্মদ কামালুদ্দিন, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, এস.কে খগেশ প্রতিচন্দ্র খোকন, বেলাল আহমদ, মোঃ ইলিয়াছ আরমান, কামরুল ইসলাম মহসিন, মোরশেদুল আলম, মোঃ চান মিয়া সহ প্রমূখ।
সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন বান্দরবান জেলার সাধারণ সম্পাদক এম রুহুল আমিন বলেন, ১৯২০ সালে লামা থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। সাবেক মহুকুমা ও ১২ দিনের জেলা ছিল লামা উপজেলা। বান্দরবান জেলার এক-তৃতীয়াংশ মানুষের বসবাস লামা উপজেলায়। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা থেকে ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিস প্রত্যাহার করা নেয়ার বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক। লামার ২ লাখ মানুষের সাথে উপহাস করেছে বান্দরবান জেলা প্রশাসক। এর.আর ফান্ডের নামে অবৈধ আয় গতিশীল রাখতে বান্দরবান জেলা প্রশাসক এই কাজ করেছে। আমরা নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অনতিবিলম্বে ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিস পূর্ণবহাল করা দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায় লামার মানুষ গণ আন্দোলনে যেতে পারে। তার সকল দায়দায়িত্ব জেলা প্রশাসককে নিতে হবে।