খাগড়াছড়িতে পাড়াকেন্দ্র পরিদর্শনে পার্বত্য সচিব শফিকুল আহাম্মদ, প্রয়োজনে আরো অর্থ বরাদ্দের আশ্বাস

378

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ-খাগড়াছড়িতে ইউনিসেফে ১৬০০টি পাড়াকেন্দ্রে পাঠদান চলছে ৯টি উপজেলায়। পার্বত্য সচিব মোঃ শফিকুল আহাম্মদ পাড়াকেন্দ্র দেখে সন্তেুাষ প্রকাশ করেছেন, প্রয়োজনে আরো অর্থ বরাদ্দের আশ্বাস প্রদান করেছেন। এদিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য অঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়নে ইউনিসেফের অধীনে ১৬০০টি পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে যথারীতি মতো ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান করা হচ্ছে। পাড়াকেন্দ্রে নিয়োগকৃত শিক্ষকগণের সংখ্যা ১৫৯৯জন, আওতাভূক্ত পরিবারের সংখ্যা: ৯২৩৪৪। পাড়াকেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৯৯টি। এদিকে ইউনিসেফের অফিস সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি জেলায় আওতাভুক্ত পরিবারের সংখ্যা হচ্ছে ৪,৬২,৭২০ যার মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ২,৩১,৬৬০জন এবং মহিলার সংখ্যা ২,৩০,০৬০জন। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পাড়াকেন্দ্রের আওতায় ৩-৬ বছর বয়সী মোট ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যাঃ ১৯,৩৬৬ জন। এখানে জন স্বাস্থ্য সম্মত লেট্রিন ব্যবহারকারী পরিবার সংখ্যা ৭১,১০৫ (৭৭%)। খাগড়াছড়ি ইউনিসেফের অধীনে নিরাপদ পানি সরবরাহ করে যাচ্ছে। নিরাপদ পানি ব্যবহারকারী সংখ্যা ৬৯,২৫৮ (৭৫%)। ইপিআই কার্যক্রম পরিচালিত হয় এমন পাড়াকেন্দ্রের সংখ্যা ৪৫০টি। পার্বত্য খাগড়াছড়িতে প্রতিটি শিশুদের টিকা দেওয়া হচ্ছে ১০০% হারে সারা উপজেলায়। তবে প্রতিটি পাড়াকেন্দ্রে শিশুরা টিকা গ্রহণ করে যাচ্ছে বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন ইউনিসেফ কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে শিশুদের টিকা গ্রহণের হার ৯৮% বলে অফিস সূত্রে জানিয়েছেন। পার্বত্য জেলায় প্রতিটি পাড়াকেন্দ্রে আয়রন ট্যাবলেট প্রদান করা হচ্ছে শুধুমাত্র কিশোরীদের সংখ্যা ৯৮%। আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণকারী গর্ভবর্তীর সংখ্যা ৯৫%। আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণকারী দুগ্ধদানকারী মায়ের সংখ্যা ৯৪%। জন্মনিবন্ধিত শিশুর (০-১৮ বছর) সংখ্যা ১,৩২,৪২৫ জন।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য অঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউনিসেফের অধীনে বর্তমানে চলমান সময়ের (এপ্রিল/২০২০খ্রি:সেপ্টেম্বর/২০২০খ্রি:) কার্যক্রম সমূহ:- বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যবস্থাপনায় পাড়াকেন্দ্রের শিশুদের পাঠদান বন্ধ থাকায় ইউনিসেফের সহায়তায় বিকল্প ব্যবস্থায় “আমার শিশু ঘরে থাকে ঘরে শিখে” কার্যক্রম পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, এনডিসি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন। ফলে পাড়াকর্মী/মাঠ সংগঠকগণ পাড়াকেন্দ্রের শিশুদের অভিভাবকদের উদ্ধুদ্ধ করে নিজ নিজ বাড়িতে শিশুদের পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন। এর জন্য শিশুর বাড়িতে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে এবং নিয়মিত রিপোর্টিং করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে ও পাড়াকর্মী ও মাঠসংগঠকদের মাধ্যমে সকল শিশুকে (১৯,৩৬৬জন) উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ বিস্কুট শিশুদের বাড়িতে পৌঁছানো ও নিয়ম মোতাবেক খাওয়ানো নিশ্চিত করে যথাযথভাবে রিপোর্ট প্রদান করা হচ্ছে।
এদিকে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সাজেকের কিছু দুর্গম এলাকায় হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের নির্দেশনা মোতাবেক ৪০ কার্টুন উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ বিস্কুট সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান এর নিকট হস্তান্তর করেছে বলে জান গিয়েছে। ইউনিসেফের সহায়তায় সম্প্রসারিত ৮২টি পাড়াকেন্দ্রের নির্মাণ কাজের মধ্যে ৭৬টি ১০০%, ৩টি ৭৫%, ৩টি ৫৫% কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে অফিস সূত্রে জানা গেছে।
অন্যদিকে, ১৬০০টি পাড়াকেন্দ্রের পাড়াকর্মীদের মাধ্যমে পাড়া পর্যায়ে কিশোরী/গর্ভবর্তী ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের নিকট আইএফএ ট্যাবলেট বিতরণ ও খাওয়ানো নিশ্চিত করা হয়েছে। ইউনিসেফের সহায়তায় করোনা পরিস্থিতিতে পাড়া পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাড়া ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দেওয়াল লিখন/বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন প্রকার লিফলেট ও পোষ্টার বিতরণ এবং পাড়া পর্যায়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে জনগনকে সচেতন করা হচ্ছে। ইউনিসেফের সহায়তায় সামাজিক আচরণ পরিবর্তন বিষয়ে স্বল্প উপস্থিতিতে ৯০ জন মহিলা হেডম্যান/কার্বারী ও ৬০ ভান্তে ৩০ পুরুহিতদের উপস্থিতিতে কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে।
আর মুজিব বর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে প্রত্যেক পাড়ায় কিশোর-কিশোরীদের মাধ্যমে ৩৫টি করে মোট ৫৩১৩০টি বৃক্ষরোপন করা হয়েছে। ওয়াশ কার্যক্রমের আওতায় ৩২টি পানীয় জলের উৎস, ৩০টি শিশুবাদ্ধব লেট্রিন, ১০টি হ্যান্ডওয়াশ ষ্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপহার শিশুখাদ্য দূর্গম এলাকার ১১২৪০জন শিশুর মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। নিয়মিত ইপিআই কার্যক্রমে সকল পাড়াকর্মী তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছে। তাছাড়া ভিটামিন এ+ ক্যাম্পেইন পাড়াকর্মী ও মাঠসংগকগণ সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শতভাগ শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে। করোনা পরিস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের নিদের্শনা অনুযায়ী প্রত্যেক পাড়াকর্মীকে সবজি বীজ (৫ প্রকার), কৃষি উপকরণ, সুরক্ষা সামগ্রী (মাস্ক/গ্লাবস/ক্যাপ) ও আর্থিক প্রণোদনা (ইনসেনটিভ পাড়াকর্মী-২০০০/-, মাঠ সংগঠক-৩০০০/-) প্রদান করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের নিদের্শনা মোতাবেক পার্বত্য এলাকায় বিভিন্ন পাহাড়ের জীব বৈচিত্র ভরপুর উন্নত বাস্তুসংস্থান সমৃদ্ধ আর্থসামাজি পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট-২০৩০ অর্জনের লক্ষ্যে আমাদের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা/কর্মচারী/মাঠসংগঠক ও পাড়াকর্মীগণ জরীপ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলা, ইউনিয়ন ও ক্লাষ্টার পর্যায়ে ওরিয়েন্টেশান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এতে সিইজিআইএস কারিগরি সহায়তা প্রদান করছেন। খাগড়াছড়ি ইউনিসেফের সহায়তায় ২০টি কিশোর-কিশোরী ক্লাব পরিচালিত হচ্ছে। সপ্তাহে ২দিন পাড়াকেন্দ্রে কিশোর-কিশোরী ক্লাব পরিচালনা করে থাকে। এতে জীবন দক্ষতা বিষয়ে সেশন পরিচালনা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। মডেল পাড়াকেন্দ্র সমৃদ্ধ ২টি পাড়াকে স্মাট ভিলেজ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেছেন যা খাগড়ছড়ি সদর উপজেলার চরপাড়া ও রামগড় উজেলার দক্ষিণ দাতারাম পাড়ায় অবস্থিত। ইউনিসেফের সহায়তায় নবযোগদানকৃত পাড়াকর্মীদের ১৭দিন ব্যাপি মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে ৫০% প্রশিক্ষণার্থীদের উপস্থিতিতে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালক মোঃ মতিউর রহমান এর নির্দেশনা মোতাবেক ১৬০০ পাড়াকেন্দ্রে একযোগে জন্মনিবন্ধন দিবস উদ্যাপন করা হয়েছে। প্রতিবারের ন্যায় সকল পাড়াকেন্দ্রে বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস/সপ্তাহ উদ্যাপন করা হয়েছে। পাড়া পর্যায়ে বিশেষ উঠান বৈঠক ও শিশু কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে সঠিক নিয়মে হাত ধোঁয়ার কৌশল শেখানো এবং প্রত্যেক পাড়াকেন্দ্রে ইউনিসেফের সহায়তায় ১২টি করে সাবান সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানা যায়। দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে পাড়াকেন্দ্রের শিশুদের ক্লাস সেশান পাঠ পরিকল্পনা মোতাবেক পাড়াকেন্দ্রের ন্যায় বাড়িতে সঠিক ভাবে করা সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানা যায়। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে খাগড়াছড়ি ৯টি উপজেলার পাড়াকেন্দ্রের শিশুদের উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ বিস্কুট সঠিক নিয়মে খাওয়ানো ও পাড়াকর্মীদের প্রশিক্ষণ যথা সময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আগামীর কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলে সূত্রে জানা গেছে। ৩ পার্বত্য জেলায় আরো নতুন ৫০০ পাড়াকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে যাবতীয় শর্তাবলী, পাড়া সমূহ যাচাই/বাছাই পূর্বক চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানা যায়। করোনা পরিস্থিতি সামনে রেখে “আমার শিশু ঘরে থাকে ঘরে শিখে” কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্বল্প পরিসরে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ২২০ পাড়াকেন্দ্র সংস্কার/মেরামত করা হয়েছে। নিয়মিত উঠান বৈঠক ও বাড়ি পরিদর্শন অব্যাহত রয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্প্রসারিত ৬টি পাড়াকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। ইপিআই কার্যক্রম নিয়মিত রাখা, আয়রন ট্যাবলেট নিয়মিত ভাবে বিতরণ ও খাওয়ানো নিশ্চিত করা, শতভাগ জন্মনিবন্ধন করা বিশেষ করে ৪৫ দিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করা, বাল্যবিবাহ প্ররিরোধ করা সহ সর্বোপরি উপস্থিত সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা প্রদানের আশা করছি।
এদিকে খাগড়াছড়ি ইউনিসেফের প্রোগ্রাম অফিসার সোলাইমান চৌধুরী জানিয়েছেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে পাড়াকেন্দ্রের শিশুদের “আমার শিশু ঘরে থাকে ঘরে শিখে” কার্যক্রমের মাধ্যমে ইউনিসেফের পাঠদান কার্যক্রম যথারীতি মতো চলছে।