পার্বত্য তিন জেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ‘স্মার্ট ভিলেজের’ হাতছানি

634

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধিঃ-প্রত্যন্ত গ্রামকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দৃষ্টিনন্দন গ্রামে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, চিকিৎসা, কৃষি, বিশুদ্ধ পানি, যোগাযোগসহ প্রায় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে।
ইতোমধ্যে খাগড়াছড়ির দু’টি গ্রামকে স্মার্ট ভিলেজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে উদ্বোধন করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে রামগড় উপজেলার দাতারাম পাড়া এবং খাগড়াছড়ি জেলা সদরের ঠাকুরছড়া এলাকার চরপাড়া।
সোমবার (১২ অক্টোবর) সকালে চরপাড়া স্মার্ট ভিলেজ উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা। এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই সামাজিক সেবা প্রকল্পের সমন্বয়ক ডা. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা পত্নী বিশিষ্ট কন্ঠশিল্পী অনামিকা ত্রিপুরা, প্রকল্প ব্যবস্থাপক মতিউর রহমান, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের খাগড়াছড়ি ইউনিটের সহকারী প্রকৌশলী খুরশেদ আলমসহ স্থানীয় পাড়া কর্মী, জনপ্রতিনিধি ইউনিসেফের প্রতিনিধি ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে খাগড়াছড়িতে দু’টি, রাঙ্গামাটিতে দু’টি এবং বান্দরবানে দু’টি করে মোট ৬টি গ্রামকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ‘স্মার্ট ভিলেজ’ এ রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আর এর আওতায় গ্রামগুলোতে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, যোগাযোগ ও পরিবহন, প্রত্যেক পরিবারের জন্য টয়লেট স্থাপন, গবাদি পশু পালন, স্ট্রিট লাইট, বিদ্যুৎ সরবরাহ, কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, লাইব্রেরি, খেলার মাঠ, পার্ক, কমিউনিটি ট্যুরিজম সম্প্রসারণ, সমবায়, সাংস্কৃতিক চর্চার সরঞ্জামাদিসহ ৩১টি বিষয়ে কাজ করা হবে। এতে পিছিয়ে থাকা গ্রামগুলো সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আধুনিক গ্রামে পরিণত হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেন, বিভিন্ন দেশের ধারণা কাজে লাগিয়ে আমরা স্মার্ট ভিলেজ তৈরির বিষয়টি বাস্তবে রূপ দিচ্ছি। আমরা যেভাবে গ্রামগুলোকে আধুনিক করার চিন্তা করছি তার সঙ্গে স্থানীয়দের অংশগ্রহণ খুবই জরুরি। এতে গ্রাম ও গ্রামের মানুষগুলোর যেমন ভাগ্য বদলাবে তেমনি অন্য দেশের মতো এইসব গ্রামগুলো দেখতে পর্যটকরা আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই সামাজিক সেবা প্রকল্পের সমন্বয়ক ডা. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, এটি আমাদের পাইলট প্রকল্প। আমরা নির্বাচিত গ্রামগুলোকে ধাপে ধাপে সব সুযোগ-সুবিধার আওতায় নিয়ে আসবো। একটি আধুনিক গ্রামে যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকে আমরা চেষ্টা করবো সবটা দিতে। এমনকি গ্রামের প্রত্যেকটি ঘরের মানুষদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে সাবলম্বী করার বিষয়টিও আমাদের প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে।
স্মার্ট ভিলেজগুলোকে সমবায় ভিত্তিক সঞ্চয়ী কার্যক্রম পরিচালনা, গ্রামের তরুণদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করাসহ জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এতে বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখির বাসস্থান সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায়ও গ্রামগুলো ভূমিকা রাখবে।
খাগড়াছড়ির নির্বাচিত দু’টি গ্রামে ৬৫টি করে পরিবার রয়েছে। খাগড়াছড়ি চরপাড়ায় মোট জনসংখ্যা ৩৩০ জন এবং রামগড় দাতারাম পাড়ায় ৩৫৭ জন। ইতোমধ্যে গ্রামগুলোতে কৃষি উপকরণ ও বিভিন্ন প্রকার সবজি বীজ বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে আভ্যন্তরীণ রাস্তা, সিঁড়ি ও ড্রেনের কাজ চমান। এইসব গ্রামগুলোর অধিকাংশ বাসিন্দার কৃষি এবং দিনমজুর নির্ভর।
স্মার্ট ভিলেজের আওতায় গ্রামের অবকাঠামো স্বতন্ত্র রেখে পর্যটকদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ইকো ট্যুরিজমের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও কমিউনিটিকেন্দ্রিক ট্যুরিজম সম্প্রসারণ হবে বলে জানানো হয়। গ্রামগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপর দেওয়া হয়েছে বাড়তি জোর। এ নিয়েও রয়েছে বেশ কিছু পদক্ষেপ।