আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবঃ কাপ্তাইয়ে ২০ বছরে ৭টি সিনেমা হল বন্ধ

253

ঝুলন দত্ত, কাপ্তাইঃ-আকাশ সংস্কৃতির দৌরাত্ব আর দর্শকের অভাবে গত ২০ বছরে বন্ধ হয়ে গেছে কাপ্তাই উপজেলার ৭টি সিনেমা হল। অথচ এই কাপ্তাই উপজেলা এক সময় রাঙ্গামাটি জেলার মধ্যে বিনোদনের সেরা স্থান হিসেবে বিবেচিত হতো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৯০ দশক পর্যন্ত কাপ্তাই উপজেলা ছিল জেলার সব চেয়ে উন্নয়নশীল এলাকা। সমগ্র উপজেলায় ছিল ৭-৮টি সিনেমা হল। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছিল বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন।
প্রায় সারা বছর জুড়েই এসব সংগঠনের কোন না কোন অনুষ্ঠান চলত। অথচ সময়ের সাথে সাথে একে একে বিনোদনের সব মাধ্যমই বন্ধ হয়ে গেছে।
১৯৮৮ সালে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালনাধীন “অলিম্পিয়া” সিনেমা হল বন্ধের মাধ্যমে উপজেলার বিনোদন অঙ্গনে ধস নামে।১৯৯০ সালে বন্ধ হয়ে যায় কাপ্তাই নতুন বাজারে অবস্থিত “লোটাস” সিনেমা হল। ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্থ হয়ে পড়ে চন্দ্রঘোনা কেপিএমের আওতাধীন “চান্দিমা সিনেমা হল”। প্রায় একযুগ সিনেমা হলটি বন্ধ থাকার পর ২০০৩ সালে বিপুল অর্থ ব্যয়ে সিনেমা হলটি পুনরায় চালু করা হলেও দর্শকের অভাবে একমাসের মাথায় হলটি আবারও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। ১৯৯৯ সালে বিধ্বস্থ হওয়া বাঙ্গালহালিয়ার “শান্ত সিনেমা হলটি” আর চালু করা হয়নি। ২০০২ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয় রাইখালীর “উর্মি সিনেমা হল”। এরপর বন্ধের তালিকায় যুক্ত হয় মিতিঙ্গাছড়ির “বজ্রঙ্গনা” সিনেমা হলটি। সর্বশেষ দর্শকের অভাবে ২০০৬-২০০৭ সালের দিকে বন্ধ করে দেওয়া হয় কাপ্তাই নতুন বাজারে অবস্থিত “বনলতা” সিনেমা হলটি। পরবর্তীতে দীর্ঘ অনেক বছর অতিবাহিত হলেও এ পর্যন্ত এসব সিনেমা হল চালানোর আর কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এলাকার প্রবীন নাট্য ব্যক্তিত্ব ইসমাইল ফরিদ জানান, আকাশ সংস্কৃতি আর ইন্টারনেটের বদৌলতে মোবাইলের মাধ্যমে এখন হাতে হাতে নতুন ছবি গুলো চলে আসে। তাই মফস্বল এলাকার সিনেমা হলে বসে ছবি দেখার সময় কোথায়।তবে তারা এও বলেন, হলে বসে ছবি দেখার মজাই আলাদা।যা মোবাইলে অথবা টিভিতে দেখে পাওয়া যায়না।
কাপ্তাই সঙ্গীতাঙ্গনের পরিচিত মুখ বিশিষ্ট বাউল শিল্পী রফিক আশেকী জানান, আমার শিশুকাল, যৌবন কাল বেড়ে উঠা কাপ্তাই প্রজেক্ট এলাকা। স্কুল ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের সাথে কাপ্তাই অলিম্পিয়া, নতুনবাজার বনলতা সিনেমা হলে কত ছবি দেখেছি, আজ সব স্মৃতি সব অতীত।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাব জানান, এক সময় সপ্তাহে ২ বার সিনেমা হলে যেতাম বন্ধু বান্ধব এবং পরিবার পরিজন নিয়ে, সেই সময় ভালো মানের সামাজিক ছবি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হতো, হল ভর্তি দর্শক হতো। কিন্তু বর্তমানে ভালো মানের ছবির অভাব, ঘরে ঘরে টেলিভিশন, ক্যাবল নেটওয়ার্কের প্রভাবে কাপ্তাইয়ের সমস্ত হল বন্ধ হয়ে গেছে।
আকাশ সংস্কৃতির এই যুগে আমাদের বিনোদনের অন্যতম উপাদান সিনেমা হল গুলো যদি আবারোও চালু করা যেতো তাহলে এই শিল্পের সাথে জড়িতরা আবারোও এই খাতে বিনোয়গ করার উৎসাহ পেতো বলে মনে করছেন এই সেক্টরে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।