অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিতে খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অনেক কর্মকর্তা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ

993

নন্দন দেবনাথ, খাগড়াছড়ি থেকে ফিরেঃ-অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে চলছে খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্ত কর্তার যোগ সাজসে, রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি দেখিয়ে নিজেদের দাপটে চালিয়ে যাচ্ছে এই সেবা কার্যক্রম। ঠিকাদারী কাজে অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছে অনেক কর্মকর্তা। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর হতে জনগন সেবা না পেলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তা রাজনৈতিক কর্তা ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় শত শত কোটি কোটি টাকার মানুষ বনে গেছে কর্মকর্তারা। খাগড়াছড়ি ৮টি উপজেলার বিশুদ্ধ খাবার পানির নিশ্চিতায় কথা থাকলেও পাহাড়ের দুর্গম এলাকার মানুষেরা ছড়া, ঝর্ণা, কুয়া, চেঙ্গী নদীসহ বিভিন্ন নদ নদীর পানি পান করে নিজেদের জীবনধারণ করছে। এই অবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, স্থানীয় সরকার বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও ভূক্তভোগীরা। খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর পদোন্নতিতেও উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। নলকুপ মেকানিক ব্লক পোষ্টের পদ থেকে পদোন্নতি দিয়ে বিশাল অংকের টাকার লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ উঠেছে উপ-প্রকৌশলী (নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে) সোহরাব হোসেন এক ছত্র ছায়ায় খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদকে ম্যানেজ করে তিনটি উপজেলার পানি সরবরাহ প্রকল্প, বাজার পানি সরবরাহ প্রকল্প, নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পসহ বিভিন্ন সময়ে আরো অন্যান্য প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুটি মন্ত্রনালয়ের কাজের ধরণ একই হওয়াতে একটি প্রকল্পের কাজ করে অন্য প্রকল্পের কাজের পুরো টাকাই আত্মসাৎ করেছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুয়া বিল ভাউচার বানিয়ে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন সোহরাব হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন। তাদের এই দুর্র্নীতির ভুয়া বিল ভাউচারগুলো তদন্ত করলে উঠে আসবে তাদের অবৈধ সম্পদের তথ্য।
অবৈধ ভাবে দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থান করার কারণে নিজে যেমন অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন, তেমনি নিকট আত্মীয় স্বজনের নামে পাহাড়ের অনেক সম্পদ ক্রয় করার তথ্যও পাওয়া গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানের বরাবরে দেয়া এক আবেদনে বলা হয়, অবৈধ ভাবে দীর্ঘদিন একই জেলায় কর্মরত থেকে এবং অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে একই সাথে ২টি জেলার দায়িত্বে থাকার কারণে শত শত কোটি টাকা উপার্জন করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন। তার স্ত্রী পুত্রের নামের দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তৎমধ্যে খাগড়ছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলায় এক নাগারে ৬০০-৭০০ একর জমির উপর বাগান বিলাস স্থাপন করেছেন। জেলা শহরে শালবন এলকাায় প্রায় ৫০ একর, ইসলামপুর এলাকায়, পিয়ন কোয়াটারের পাশে, জিরো মাইল বিসিক এলাকায় তার জমি রয়েছে বলে অভিযোগে উঠে এসেছে। এছাড়া বান্দরবান নিলাচল এলাকায়ও তার নিজস্ব সম্পত্তি রয়েছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়, কুমিল্লার শাসনগাছা বুড়িচং রাস্তার পাশে বিলাস বহুল বাড়ি, ঢাকায় ফ্ল্যাটসহ অনেক অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। বিপুল নগদ অর্থ ও তার এবং তার আত্মীয় স্বজনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে। এতো একজন নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে তিনি দীর্ঘদিন চাকুরী করলে কখনোই এতো সম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব নয়। দুর্নীতি ও আত্মীয়করণের মাধ্যমে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্তা ব্যক্তিদের চোখে ধুলো দিয়ে নিজের সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
এদিকে তার বিরুদ্ধে অফিসের কর্মচারী নিয়োগ, প্রমোশন, বদলীসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে বিশাল অংকের টাকার লেনদেনেরও খবর পাওয়া গেছে। তিনি তার পছন্দ মত ব্যক্তিকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভালোভালে পোষ্টে বদলী করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কোন ব্যক্তি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর আইনে কোন পদে যেতে না পারলেও উচ্চ পর্যায়ে ম্যানেজ করে মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে তাকে সেই পদে বসানোর অভিযোগ উঠেছে। সেই পদে বসানোর কারণে যোগ্যতা সম্পন্ন লোকজন তার প্রাপ্ত পদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে সোহরাব হোসেন নিজে এতো বেশী দুর্ণীতি ও স্বজন প্রীতির আশ্রয় নিয়েছেন যে সহকারী পাম্প চালক পদে নিয়োগেও তার বিরুদ্ধে বিশাল অংকের টাকা উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। জেপি মারমা নামে একজন সহকারী পাম্প চালক খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে তার চাকুরী পাওয়ার আবেদন করেছে। তিনি তার অভিযোগে বলেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রনাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী পাম্প চালক পদে কিরন চন্দ্র চাকমা এর শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ গোপন করেছে সরকারী চাকুরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার তদন্ত সাপেক্ষে বাতিল করার আবেদন জানান।
অপরদিকে মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (ভোকেশনাল থেকে এসএসসি) মেকানিক জনস্বাস্থ্য প্রকৌমল অধিদপ্তর মহালছড়ি, খাগড়াছড়ি বর্র্তমানে ক্যাশিয়ার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর খাগড়াছড়ি বিভাগ গত ৬ জানুয়ারী ২০০০ খ্রিঃ তারিখে মেকানিক পদে প্রথম যোগদান করে। কিন্তু কোন রকম পদোন্নতি কমিটির গঠন ব্যতিরেকে পরীক্ষা-নীরিক্ষা ছাড়াই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সোহরাব হোসেন, নির্বাহী প্রকৌশলী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর খাগড়াছড়ি বিভাগ। বর্তমানে বান্দরবানে কর্মরত) জেলা পরিষদ খাগড়াছড়িকে ব্যবহার করে ১১মে ২০১১খ্রিঃ তারিখে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাঃ পদে পদোন্নতি নেয়, যা ২০১০ সরকারী নিয়োগ বিধি (জনস্বাস্থ্য) এর সাতে সম্পুর্ণ সাংঘর্ষিক। কারণ, নলকুপ মেকানিক পদটি “ব্লক” পদ হওয়ায় এবং মাঠ পর্র্যায়ে হওয়ায় নলকুপ মেকানিক পদ থেকে অন্য কোন পদে পদায়ন, পদোন্নতি বা অন্য পদে বদলীর কোন বিধান নেই।
বর্তমানে মোঃ জাহাঙ্গীর আলম অফিস সহঃ পদ থেকে ক্যাশিয়ার পদে আসীন হওয়ার জন্য খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুই কর্মকর্তা মোঃ সোহরাব হোসেন ও ইষ্টিমিটর আশরাফুল ইসলামের যোগ সাজস রয়েছে বেশী। মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ব্লক পোষ্ট থেকে একজনকে ক্যাশিয়ার পদে নিয়োগ বিধি অমান্য করেছে। এই কারণে খাগড়াছড়িসহ দেশের সকল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে রীতিমত অস্থিরতা বিরাজ করছে।
এখানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আইনে আছে ক্যাশিয়ার পদটি নুন্যতম এইচএসসি পাশ হতে হয়। কিন্তু খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে এসএসসি পাশ নলকুপ মেকানিককে ক্যাশিয়ার পদে নিয়োগ দিয়ে নিয়োগ বিধিকে অসম্মান করেছে। এই দুই কর্মকর্তা বিশাল অংকের উৎকোচ গ্রহণ করে অযোগ্যতা সম্পন্ন একজনকে ক্যাশিয়ার পদে নিয়োগ প্রদান করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আইনকে অমান্য করেছে বলে মনে করেন অফিসের অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী। একই পদের জন্য খাগড়াছড়িতে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে কর্মকত বিএ পাশ কর্মচারীও রয়েছে। পদোন্নতি হলে এমন কর্মচারীদের দেয়া প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু তা না করে একজন অযোগ্য ব্যক্তিকে নলকুপ ম্যাকানিক থেকে ক্যাশিয়ার পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে।
এই বিষয়ে ইষ্টিমিটর আশরাফুল ইসলামের ০১৯২৫৮৪৮৪২৪ ও ০১৭২৬৫৪৬২৪২ নাম্বারে গত ৭ সেপ্টেম্বও ২০২০ তারিখে অনেক বার যোগাযোগ করা হলে তিনি তার নাম্বারটি ব্যস্ত করে রাখেন। কেউ যাতে তার নাম্বারে যোগাযোগ করতে না পারে।
এদিকে অনিয়মের বিষয়টি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই খারাপ হয়েছে। নলকুপ ম্যাকানিক একটি ব্লক পোষ্ট এই পোষ্টে কখনো কাউকে পদোন্নতি দিতে পারে না। খাগড়াছড়িতে যদি এই বিষয়টি করে থাকে তাহলে আইন অমান্য করা হয়েছে।