রাঙ্গামাটিতে সমিতি’তে চাকরী দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

418

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙ্গামাটিঃ-রাঙ্গামাটিতে একটি সমিতিতে চাকরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বেকার যুবক যুবতীসহ শতশত চাকরী প্রত্যাশীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এ অনিয়ম-অপরাধ মাসের পর মাস চলতে থাকলেও দেখার কেউ নেই।
সেই সুদূর বরগুণা জেলার একটি সমিতি যার নাম “উদয়ন সমাজ কল্যাণ সমিতি” নামে রাঙ্গামাটি শহরে টিটিসি রাস্তার মুখে এক বহুতল ভবনে অফিস খুলে বসানো হয়েছে এ প্রতারণার ফাঁদ। আর এ পাতানো ফাঁদে পা দিচ্ছেন অধিকাংশ দরিদ্র, অসহায় ও বেকার যুবক যুবতীরা।
উদয়ন সমিতির কর্পোরেট অফিস দেখানো হয়েছে ঢাকাস্থ ৪৩/১, নয়াপল্টন, ঢাকা-১০০০ এ। কিন্তু বাস্তবে সেখানে অফিস আছে কি না তাও সন্দেহ করছেন ভূক্তভোগীরা। কারন, সেই অফিসের কাগজে মুঠো ফোনের নাম্বার দেয়া থাকলেও বার বার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায় না।
পাশর্^বর্তী বান্দরবান পার্বত্য জেলা শহরের কালাঘাটা এলাকার বাসিন্দা তথাকথিত সাংবাদিক নাম ধারী বিপ্লব চাকমা নিজেকে তিন জেলা (রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি) জেলার জেলা ম্যানেজার দাবী করে এবং চট্টগ্রাম ও ঢাকার দু’একজনের সাথে যোগসাজস করে এ অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে গত মার্চ মাস ২০২০ইং দেশ ব্যাপী করোনা ভাইরাসের লক ডাউনের সময় থেকে।
চাকরী প্রার্থীদের বোঝানো হচ্ছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের উপর শত কোটি টাকার ফান্ড ব্যয় করা হবে তিন জেলায়। প্রথমে সার্ভে কাজ করা হবে। তার পর মূল কাজ শুরু করা হবে বলা হচ্ছে। সেজন্য সমিতির ঢাকা অফিস থেকে আইডি কার্ড প্রদান, রাঙ্গামাটি থেকে ঢাকায় ফাইল নিয়ে যাওয়া এবং ইন্টারভিউ খরচ দেখিয়ে সুকৌশলে প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে সর্বনি¤œ ৫ হাজার থেকে ১০/২০ বিশ হাজার ক্ষেত্র বিশেষে আরো বেশী টাকা নেয়া হচ্ছে বলে ভূক্তভোগীরা এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।
সমিতির কাগজপত্র থেকে জানা গেছে, চাকরী দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদ যেমন-এরিয়া ব্যস্থাপক, শাখা ব্যবস্থাপক, সুপাভাইজার ও মাঠকর্মী দেখানো হয়েছে। আর জানা গেছে, বিপ্লব চাকমা প্রথমে অফিস ভাড়া নেয় জেলা শহরের কল্যাণপুরস্থ সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক এর অফিসে।
জেলার রাজস্থলী উপজেলার বাসিন্দা নয়ন তংচঙ্গ্যা বলেছেন, তাকে দশ হাজার টাকা দিতে হয়েছিল শাখা ব্যবস্থাপক পদের জন্য। আর অন্য তিনজন ৫ হাজার করে দিয়েছিল বিপ্লব চাকমার হাতে।
ঠিক একই অভিযোগ করেন নানিয়াচর উপজেলার প্রার্থী নরেন চাকমা। তিনি জানিয়েছেন, তাদের উপজেলা থেকে চারজন মিলে ৫ হাজার করে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়েছিল।
রাঙ্গামাটি সদর এলাকার রিপনা চাকমারও সেই একই অভিযোগ। তাকে মাঠকর্মী পদের জন্য ৫হাজার দিতে হয়েছিল।
”চাকরী পাবার আশায় অন্য জনের কাছ থেকে ধার করে ঐ টাকা দিয়েছিলাম সেই দেশব্যাপী লক ডাউনের সময়। ঐ টাকার জন্য এখন মা-বাবার কাছ থেকে কথা শুনতে হচ্ছে প্রতিদিন। কিন্তু পাঁচ মাস চলে গেলেও নিয়োগপত্র পায়নি। আজ না কাল, এই মাসে না হলে আগামী মাসে নিয়োগ দেয়া হবে বলে কাল ক্ষেপন করা হচ্ছে” বলেন রিপনা।
এ ব্যাপারে বিপ্লব চাকমার সাথে কথা বললে সে জানায়, প্রার্থীদের কাছ থেকে নেয়া সমস্ত টাকা তাকে হেড অফিসে পাঠাতে হয়। যেহেতু, প্রার্থীদেরকে ঢাকায় গিয়ে ইন্টার ভিউ দিলে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিতে পড়তে হতো। কাজেই তাদের সুবিধার্থে এটা বাতিল করে এ কাজ রাঙ্গামাটিতে করা হচ্ছে এবং অফিস খরচ নেয়া হচ্ছে বলে স্বীকার করে। বিপ্লব আরো জানায় যে, তারা এখনও ফান্ড পায়নি। তাই সমিতির নিজস্ব টাকা দিয়ে প্রথমে সার্ভে কাজ করা হবে পার্বত্য তিন জেলায়।