নন্দন দেবনাথ, রাঙ্গামাটিঃ- রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে প্রতিনিয়ত হেনস্তা ও যাত্রী হয়রানীর মধ্যে দিয়ে নিম্নমানের যাত্রী সেবা দিয়ে যাচ্ছে পাহাড়িকা নামে নিম্নমানের বাস সার্ভিস। প্রতিনিয়ত দূর্ভোগের সীমা নেই যাত্রীদের। তার পরও মুখ বুঝে সহ্য করে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌছে যাচ্ছে যাত্রীরা। অসহ্য মরণ যন্ত্রনায় দীর্ঘ ২ থেকে আড়াই ঘন্টা বাসে বসে রাঙ্গামাটি থেকে চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি আসতে হচ্ছে যাত্রীদের। সেবার নামে রাঙ্গামাটির যাত্রীদের শোষণ করছে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি বাস মালিক সমিতি। লক্কর ঝক্কর মার্কা বাস সার্ভিসের দৌরাত্ম যতদিন বন্ধ হবে না ততদিন যাত্রী সেবার মানও ভালো হবে না বলে মন্তব্য করেন সাধারণ যাত্রীরা।
দীর্ঘদিন যাত্রী রাঙ্গামাটির ভূক্তভোগী যাত্রীরা যাত্রী হয়রানীর কথা বলে আসলেও শনিবার (২২ আগষ্ট) সরজমিনে যাত্রী হয়ে উঠে এসে তার প্রমান পাওয়া গেছে। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে অক্সিজেন ষ্টেশনে যাত্রীদের হয়রানী হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গতকাল রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা গাড়ী নির্দিষ্ট সময়ের ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর গাড়ী ছাড়া হচ্ছে। এক দিকে তারা পাহাড়ীকার উন্নত সার্ভিসের নামে দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। অন্যদিকে লোকাল সার্ভিসের মতো কোন সময় জ্ঞান তাদের নেই। তারপর রাস্তায় রাস্তায় যাত্রীদের উঠা নামার মধ্যে দিয়ে চলছে উন্নত মানের যাত্রী সেবা।
করোনা পরিস্থিতির পর স্বাস্থ্য বিধি মেনে রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম সড়কে চলাচল করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছে রাঙ্গামাটির সাধারণ মানুষ। সরকারের বেধে দেয়া নতুন নিয়মে প্রতিটি সিটে একজন যাত্রী নিয়ে তারা যাতায়াত করছে। কিন্তু বাবা ছেলে, আপন দুই ভাই সারাদিন নিজ বাড়ীতে এক খাটে শুয়ে ঘুমাতে পারলেও পাহাড়িকার যাত্রী হলেই দুজনকে দুই সিট নিতে হবে। এখানে তাদেরকে বাবা-ছেলে ও দুই ভাইয়ের জন্য দুটো সিট দেয়ার কথা বললে তারা বলে এখানে এরকম কোন নিয়ম নেই। প্রতি জনকে এক সিটে করে বসে যেতে হবে। গেলে যান না গেলে না যান।
এদিকে দেখা যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যাতায়াত করেন দুজন বন্ধ হলে তাদেরকে এক টি সিট দিয়েই কাভার করে দেয়া হচ্ছে। পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্যদেরকে এক সিটে একজন এবং স্বামী-স্ত্রী, ভাই-ভাই ও বাবা ছেলে অথ্যাৎ পরিবারের সদস্য হলেই তাদেরকে আলাদা আলাদা না দিয়ে দুই সিট এক সাথে নিয়ে যাতায়াত করতে পারছে। অথচ রাঙ্গামাটি-ঢাকা রুটে তার ব্যতিক্রম। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মালিক সমিতির আইন অনুযায়ী ঢাকার গাড়ী গুলোকেও ফলো করতে হচ্ছে। এক সিটে দুই জন দেখলে রাউজানে চেকিং এর নামে যাত্রীদের হয়রানি করে মালিক সমিতির কতিপয় লোকজন। এই অবস্থায় কী ভাবে যে রাঙ্গামাটি মানুষ অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াত করে তা এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে।
গাড়ীতে থাকা কয়েকজন যাত্রী তাদের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ভাই বলে লাভ কী হবে। আজকে আপনি হেনস্তা হয়েছেন বলে প্রতিবাদ করছেন। আমরাতো প্রতিবাদও করতে পারি না। কারণ আমাদেরকে প্রতিনিয়ত রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রামে যাতায়ত করতে হয়। তাদেরকে বললেও তারা কোন কর্ণপাত করে। অভিযোগ বাক্সে তাদের অভিযোগ জানাবো তাতেও কোন লাভ হয় না। টিকেটের পেছনে যে নাম্বার গুলো দেয়া আছে সেই গুলোতে ফোন করলে তারা আরো বলে পোষালে চড়েন নাহলে ব্যক্তিগত গাড়ী নিয়ে চলাচল করেন। মিয়া আপনাদের সেবা দিচ্ছে এটাই বেশী। সেবা না দিলে কী করতেন। রাখেন আপনাদে কথা শোনার মতো সেই টাইম আমাদের নেই। এইভাবে তারা আমাদেরকে বলে। তাই আমরা প্রতিনিয়ত যাতায়াত করি, কখনো ১০ মিনিট, কখনো ১৫ মিনিট মাঝে মাঝে লাষ্টটিপ যখন হয় তখনতে ১ ঘন্টাও বসে থাকতে হয় আমাদেরকে। এর মাঝে পথে পথে তো যাত্রী উটানো নামানোতো আছেই। এই হচ্ছে তাদের উন্নত মানের যাত্রী সেবা। অন্যান্য জেলায় দেখলাম নির্দিষ্ট টাইমে যাত্রী হয়নি। ১ জন যাত্রী নিয়েই তারা গাড়ী ছেড়ে দিয়েছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ৭/৮ জন যাত্রী নিয়ে তারা নির্দিষ্ট টাইমে গাড়ী ছেড়ে দেয়। আর রাঙ্গামাটির বড়ো বড়ো কোম্পানী গুলো আমাদের শোষণ করে।
রাঙ্গামাটির সচেতন মহলের মতো রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াত যারা করে তারা মুলত বাধ্য হয়েই যাতায়াত করছে। মালিক সমিতি ও শ্রমিক সমিতির লাথি ঝাটা খেয়ে নিজ গন্তব্যে পৌছে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মালিক সমিতির যতদিন থাকবে রাঙ্গামাটি বাসীর দুঃখ কখনোই লাঘব হবে না। তারা নিজেদের স্বার্থের জন্য রাঙ্গামাটির গুটি কয়েক গাড়ীর মালিককে সমিতিতে অন্তর্ভূক্ত করে নিজেদের নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
গত শুক্রবার সরজমিনে রাঙ্গামাটি আসার পথে অক্সিজেন ষ্টেশনে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সকলকে। নির্দিষ্ট টাইমে ছাড়ছে না জিজ্ঞাসা করলে গাড়ী ছাড়ার কোন নির্দিষ্ট টাইম নেই। লাইনম্যানকে জিজ্ঞাসা করেন। ড্রাইভার আরো অকথ্য ভাষায় গালীগালাজ করতে থাকে। আরেকটু হলেই ড্রাইভারের মাইরের খপ্পরে পড়তে হতো যাত্রীদের। পরে লাইনম্যানকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি যাত্রী হয়নি। ২ টি সিট খালী তাই ছাড়া যাবে না বলে উত্তর দেয়। পরে তাকে লিখিত দিতে বললে সে একটি টিকেটে যাত্রী খালী গাড়ী ছেড়ে যাওয়া যাবে না বলে লিখে দেয়।
এই বিষয়ে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুজ্জামান মহসিন রোমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে তাদের হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা দেন।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি বাস মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ সৈয়দ এর সাথে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়েই গাড়ী ছেড়ে যাবে। এখানে আমরা ২২ টির অধীক গাড়ী দিয়ে প্রতি আধ ঘন্টা পর পর যাত্রীদের সেবা দিচ্ছে। এখন এই বিষয়টি কেন হলো তা নিয়ে আমরা দেখছি। তিনি বলেন, যাত্রী না হলেও গাড়ী ছেড়ে দিবে। এখানে ২০ মিনিট লেইট করার কোন মানে হয় না। তিনি বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান।
এর পর মালিক সমিতি ও শ্রমিক সমিতির আরো বেশ কয়েকজন বিষয়টি নিয়ে ফোন করে কথা বলেন। পরে রাঙ্গামাটি রিজার্ভ বাজার ষ্টেশনে আসলে তারা ক্ষমতা প্রার্থনা করেন যাত্রীদের কাছে।