তীব্র বৃষ্টি, গিরি পথ, জোঁকের থাবা অতিক্রম করে দুমদুম্যা ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের সরকারি সহায়তা

481

সুমন্ত চাকমা, জুরাছড়িঃ-বর্ষায় তীব্র বৃষ্টি, উচু নিচু পাহাড়ী পথ, জোঁকের একের পর এক থাবা অতিক্রম করে জুরাছড়ি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হলো ত্রান। সরকারি ত্রান সহায়তা পেয়ে হাসি ফুটল বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসের কর্মহীন হয়ে পড়া ৬২৫ পরিবারের। এসবের পরেও কিছুতেই খাদ্য সংকট কেটে উঠছে না।
রাঙ্গামাটি জুরাছড়ি উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়নের ১,২,৩ ও ৭, ৮, ৯নং ওয়ার্ডে প্রায় ১৪ শ পরিবারে বসবাস। এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে পৌঁছাতে ৪/৫ ঘন্টা সময় লেগে যায়। এই ছয় ওয়ার্ডের মধ্যস্থ স্থান বরকল বাজার। উপজেলা সদর থেকে দুরত্ব ৭০ কিলোমিটার। হেঁটে আসতে দু’দিন সময় লেগে যায় বাসিন্দাদের। উপজেলা সদরের সঙ্গে কোন সড়কপথ নেই। যুগ যুগ ধরে হেঁটে চলাচল করে আসছে এ ছয় ওয়ার্ডের মানুষ।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানায়, করোনা সময়ে দুমদুম্যা ইউনিয়ন জুড়ে চরম খাদ্য সংকট দেখা দেয়। উপজেলা প্রশাসন দুমদুম্যা ইউনিয়নের ১,২,৩ ও ৭, ৮, ৯নং ওয়ার্ডে এই সংকট মোকাবেলায় সাড়ে ১২ মেট্রিক টন খাদ্য পৌছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এসব সহায়তা পৌঁছে দিতে ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাধন চাকমাকে আহ্বায়ক করে ৫ জন ওয়ার্ড সদস্য ও ২ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য, সচিব অতুল চাকমা, এক গণমাধ্যমকর্মীকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। অবশ্য স্থানীয় রিপন পাংখোয়া, গ্রাম পুলিশসহ ৩০/৪০ জন স্বেচ্ছাশ্রমে ত্রান বহনে সহযোগীতা করেন। এতে ৬২৫ পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল, সাবান, মাস্ক দেওয়া হয়।
কীভাবে পৌঁছানো গেল প্রান্তিক জনপদে প্রধানমন্ত্রীর ত্রান সহায়তা নিয়ে? সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ১৯ জুলাই বেলা ১১ টায় উপজেলার সামিরা থেকে ইঞ্জিনচালিত ১৭টি বোটে (স্থানীয় ভাষায় বার্মা বোট) প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা নিয়ে রওনা দেয় কমিটির তিন সদস্য। সলক নদীর ধরে হয়ে সারা দিন যাওয়ার পর মৈদং ইউনিয়ন ফকিরাছড়ি বাজারে পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হয়। পরদিন সকলে ডানে তেছড়ির ছড়া ধরে তেছড়ি রওনা দেওয়া হলে কিছু দূর যাওয়ার ডজর পর বাজার নামক স্থানে বোট আটকে যায়। শুরু হয় আরেক লড়াই। স্থানীয়দের সহায়তায় সারা দিন বাঁশের ও কলা গাছের ভেলা তৈরী করা হয়। ২১ জুলাই বাঁশের ও কলা গাছের ভেলায় প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা প্যাকেটগুলো তোলা হয়। গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয় রিপন পাংখোয়াসহ ২৫ জনের সহায়তায় ডানে তেছড়ি ও বরকলক পৌছায়। ২২ জুলাই ৫শ পরিবারে মাঝে সহায়তা পৌছে দেওয়া হয়। ২৩ শুরু হয় আরেক লড়াই ! ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড গবছড়ি। সেখানে পৌছানো মাধ্যম একমাত্র পায়ে হাঁটা। তীব্র বৃষ্টি কাঁদে সহায়তা প্যাকেট। পাহাড়ী পথ জংগলে ভরা। একের পর এক জোকে থাবা। কঠিন পরিস্থিতি অতিক্রম করে গবছড়িতে পৌঁছে দেওয়া হলো সরকারি ত্রান সহায়তা।
ডানে তেছড়ির ৬০ বছরের বৃদ্ধ চিন মিলা চাকমা ও তার স্বামী বিরো বাহু চাকমা (৬৫)। তারা দু’দিন ধরে কলা ও কাটালের বিচি খেয়ে দিন কাঠাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা পেয়ে তারা বেশ খুশি। র্দীঘ শ্বাস পেলে বলে আজ দু’মুটো পেট ভরে খেতে পারব।
সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য বকুল বালা চাকমা বলেন, এলাকার মানুষ অধিকাংশ জুম চাষী। সুতরাং প্রতিবছর এ খাদ্য সংকট কম-বেশী লেগে তাকে। এ বছর করোনার কারণে সংকটের মাত্রা চরম আকার ধারন করেছে। এর একটি স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহন করা জরুরী।
দুমদুম্যা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাধন চাকমা বলেন, সরকারি ত্রান সহায়তা যথাযথ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য জনগোষ্ঠীদের মাঝে পৌঁছে দিয়ে যাচ্ছি। সরকারি ২০ কেজি চালে স্থায়ী সমাধান নয়, ইউনিয়নের সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা সহযোগীতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
জুরাছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহফুজুর রহমান বলেন, উপজেলার সব চেয়ে দুর্গম ইউনিয়ন হচ্ছে দুমদুম্যা। এখানে অধিকাংশ জুম চাষী। করোনা কালে খাদ্য সংকটে বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি। ইতি মধ্যে এই সংকট মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে এইচআইডি-ইউএনডিপির সহায়তায় আগামী মাসে সাড়ে সাত মেট্রিকটন চালসহ বিভিন্ন সামগ্রী প্রদান করা হবে।