করোনায় লোকসানের মুখে বান্দরবানের আম চাষীরা

657

রাহুল বড়ুয়া ছোটন, বান্দরবানঃ-পার্বত্য জেলা বান্দরবানে আম্রপালি, হাঁড়িভাঙ্গ, বারি আম-৪ এবং রাংগোয়াইসহ বিভিন্নজাতের আমের বাম্পার ফলন হলেও লোকসানের মুখে চাষীরা। ফলে চাষীদের মাঝে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। বান্দরবানের পাহাড়ের পাদদেশে এখন গাছে গাছে ভর্তি আম। পাহাড়ের মাটি ও জলবায়ু আম উৎপাদনের জন্য উপযোগী। ফলন ভাল হওয়ায় লাভের আশায় বুক বেঁধে ছিলেন চাষিরা। কিন্তু করোনায় চাষিদের সেই স্বপ্ন হতাশায় পরিণত হয়েছে। করোনায় ব্যবসায়ীরা আম সংগ্রহ করতে আসছে না। যার কারণে আম উৎপাদন খরচ তুলতে চরম বেগ পেতে হবে চাষিদের। ফলে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত আশংকায় চাষীরা।
এদিকে একাধিক আম চাষী জানান, করোনার কারণে বাহিরের ব্যবসায়ীরা না আসার কারণে আম বিক্রি করে লাভের সম্ভাবনা নেই এবং কাচাঁ মাল বেশিদিনও রাখা যায়না, তাই কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার অনেকেই অর্থ সংকটের কারণে বিভিন্ন কাচাঁ আম বিক্রি করে দিচ্ছে। তাদের মতে, পাহাড়ে উৎপাদিত আম্রপালি আমের খ্যাতি দেশজুড়ে। এই আমের চাহিদা থাকায় সময়ের সঙ্গে বেড়েছে চাষাবাদ। গত বছরের তুলনায় এবার জেলায় আমের উৎপাদন বেশি হয়েছে। তবে করোনার কারণে আম বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে চাষীরা। সময়মত আম বাজারজাত করতে না পারলে লোকসানে পড়তে হবে। পাহাড়ের মাটি উর্বর হওয়ায় ফলন হয় আমের ফলন ভালো হয়। করোনার কারণে বিগত বছরের মতো ভালে দাম পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে বান্দরবান জেলায় ৭ হাজার ৪শ হেক্টর পাহাড়ী জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে এবং ৯০ হাজার মেট্রিকটন আমের উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়। বান্দরবান জেলাতে রাংগোয়াই জাতের আমের চাষ সবচেয়ে বেশি। আমের এই জাতটি বান্দরবানের থানচি এবং নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত হয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমার থেকে এদেশে প্রবেশ করেছে। এখন থেকে প্রায় ১৫/২০ বছর আগে পাহাড়ীরা এই আম মিয়ানমারের পাহাড়ী অঞ্চল থেকে বান্দরবান নিয়ে আসেন। তবে অনেকের কাছে এটি বার্মিজ আম নামে পরিচিত। মিয়ানমারের বার্মিজ ভাষায় রাংগোয়াই অর্থ বুকে শিরধারার মতো সেলাই আর ‘সি’ অর্থ ফল, অর্থাৎ রাংগোয়াইসি মানে ‘বুকসেলাই ফল’। খেতে খুবই সুস্বাদু, পোকার আক্রমন কম এবং স্বল্প সময়ে অধিক লাভজনক ফলন। বেশ কয়েক বছর ধরে এই আমের চাষবাদ হয়ে আসছে বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায়। তবে চলতি মৌসুমেও বান্দরবানে আম্্রপালি, হাঁড়িভাঙ্গ, বারি আম-৪ এবং রাংগোয়াইসহ বিভিন্নজাতের আমের বাগানে ভাল ফলন হয়েছে।
বান্দরবান সদর উপজেলা কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.ওমর ফারুক বলেন, চলতি মৌসুমে বান্দরবান জেলায় ৭হাজার ৪শ হেক্টর পাহাড়ী জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে এবং ৯০ হাজার মেট্রিকটন আমের উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়। অনুকুল আবহাওয়ার কারনে চলতি মৌসুমে আমের ফলন ভালো হয়েছে। এই বছর করোনায় তাদের উৎপাদিত ফলন বিক্রি করতে দুশ্চিন্তায় রয়েছে চাষীরা। তবে কৃষি বিভাগ বান্দরবানের আম ভোক্তার হাতে পৌছে দিতে এবং অনলাইনে বিক্রি করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান। এতে করে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাবে। এছাড়া করোনার কারণে যদি আম বিক্রি করতে না পারে সেক্ষেত্রে কৃষি প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টিও আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। তিনি আরো বলেন, বান্দরবানে আম্্রপালি, হাঁড়িভাঙ্গ, বারি আম-৪ এবং রাংগোয়াইসহ বিভিন্নজাতের আম চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে বাগান থেকে পাকা তোলা হবে। এই কৃষিবিদের মতে, এখন থেকে প্রায় ১৫/২০ বছর আগে পাহাড়ীরা বান্দরবানে থানচি সীমান্ত হয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের পাহাড়ী অঞ্চল থেকে রাংগোয়াই আম বান্দরবানে নিয়ে আসেন। তবে এই আমের চাহিদা আগের চেয়ে কমে আসছে। চলতি মৌসুমে আম্রপালি, হাঁড়িভাঙ্গ, বারি আম-৪সহ বিভিন্ন জাতের আম উৎপাদন হয়েছে।