ডাক্তারের মৃত ঘোষণা নবজাতককে জীবিত প্রসব করালেন নার্স

480

নিজস্ব প্রতিবেদক,রাঙ্গামাটি – সন্তান সম্ভবা এক পাহাড়ী নারীর আলট্রাসনো রিপোর্টে রাঙ্গামাটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ডাঃ লেনিন চাকমা আগত সন্তানকে মৃত ঘোষণা করে রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে রেফার করলে ও সদর হাসপাতালের একজন সিনিয়র নার্সের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জীবিত সন্তান প্রসভ করলো সেই নারী। বর্তমানে মা এবং নবজাতক শিশু দুজনই সুস্থ্য আছেন। এ ঘটনায় রাঙ্গামাটি শহরে রীতিমত চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনার বিবরনে জানা গেছে, রাঙ্গামাটির নানিয়ার চর উপজেলার দূর্গম এলাকা চৌদ্দমাইল থেকে মিনতি প্রভা চাকমা নামে সন্তান সম্ভবা এক নারীকে নিয়ে তার স্বামী তরুন চাকমা গত ১৭ মে রাঙ্গামাটি মা ও শিশু কল্যাণ হাসপাতালে আসেন। এসময় মা ও শিশু হাসপাতালের দায়িত্ েথাকা চিকিৎসক ডাঃ লেনিন চাকমা মিনতি প্রভার আলট্রাসনোগ্রাফীর রিপোর্ট দেখে বলেন, তার আগত সন্তানটি গভেই মারা গেছে, এখন তাদের কোন কিছু করার নেই। এখন রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে গিয়ে তাদের মৃত সন্তানটি অপারেশন করে বের করতে হবে। তাছাড়া করোনা ভাইরাসসহ নানা কারণ দেখিয়ে তাকে দ্রুত রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন ডাঃ লেনিন চাকমা।

পরে প্রসুতি নারীকে তার স্বামী রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। এসময় সদর হাসপাতালে দায়িত্বরত জানান, প্রসুতি সন্তান সম্ভবা নারীর রিপোর্টে মৃত শিশুর কথা বলা হলেও সন্তান সম্ভবা নারীর শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমান কম থাকায় আমরা এক ব্যাগ রক্ত দেয়ার কথা তার স্বামীকে জানালে তিনি রক্ত ব্যবস্থা করতে না পারায় তখন হাসপাতালে দায়িত্বপালনরত সিনিয়র নার্স সুমিত্রা বড়–য়া প্রসুতিকে রক্তের ব্যবস্থা করে দেন।

১৮ মে পরের দিন সকালে প্রসুতি নারীর ব্যাথা উঠলে তাকে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নার্স জানান, ডাক্তারের রিেেপার্ট অনুযায়ী আমরা মৃত সন্তানের কথা ভেবে সেরকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। তিনি বলেন, মৃত বাচ্চা হলে তাকে আমরা প্লেটে রাখি আর জীবিত হলে শিশুকে মায়ের কোলে বা পাশেই রাখি। কিন্তু সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর প্লেটে রাখার কিছুক্ষন পর দেখি শিশুটি হঠাৎ নড়াচড়া করছে। এসময় আমরা তাড়াতাড়ি বাচ্চার নাড়ি কেটে তাকে চিকিৎসাসেবা দিতে শুরু করলে কয়েকমিনিটের মধ্যে শিশুটি সজোরে কান্না করে উঠে। এ ঘটনায় আমরা সকলে আনন্দের পাশাপাশি অনেকটাই আশ্চর্য হই। পরে আগত শিশুকে তার মায়ের কাছে তুলে দিই।

এসময় দায়িত্বপালনরত সিনিয়র নার্সটি বলেন, আমার জীবনে আমি অনেক নরমাল ও সিজারে ডেলিভারি কাজ করেছি এরকম ঘটনা আমি কখনো দেখিনি।

এ ঘটনায় নার্স তার ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন, এতে তিনি বলেন, ” ডাক্তারের ভূল রিপোর্ট নির্ণয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন এমনিতে ডাক্তার এবং নার্সদের উপর সাধারন জনগনের ক্ষোভের কোন অন্ত নেই, সেখানে আমরা স্বাস্থ্যকর্মীরা যদি এরকম ভূল করি তাহলে আমাদের প্রতি সমাজের সকলের ক্ষোভ বাড়তে থাকবে। আমি শ্রদ্ধেয় ডাক্তারদের প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি যাতে ভূল রিপোর্ট করা না হয় সেদিকে সবাই নজর দিবেন।”

এ ঘটনায় নার্স তার ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিলে ও সেটি তিনি কি কারনে মুছে ফেলেন তা জানা যায়নি।
এ ঘটনায় নবজাতকের মা মিনতি প্রভা চাকমা বলেন, প্রথমে আমার মৃত সন্তানের কথা শুনে আমি খুবই দুঃখ পেয়েছিলাম। পরে রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে দায়িত্বপালনকারী নার্সরা যেভাবে কষ্ঠ করে রক্ত দিয়ে আমার এবং আমার সন্তানের জীবন বাচাঁলেন তার জন্য আমরা তাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। তিনি ডাক্তারদের অবহেলা ও ভূল রিপোর্টের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।

এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক ডাঃ লেনিন চাকমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, এর আগেও রাঙ্গামাটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক ডাঃ লেনিন চাকমার বিরুদ্ধে প্রসুতি সেবা নিতে আসা নারীদের চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ ছিল। তার মধ্যে ২০১৪ সালে জুরাছড়ি উপজেলা থেকে আসা প্রসুতি নারীকে চিকিৎসায় অবহেলা করার কারনে তিনি মৃত সন্তান প্রসব করেন। এরপর ২০১৭ সালে চিকিৎসকের ভূলের কারনে জেনি আক্তর নামে এক প্রসুতি মাসহ তার নবাগত সন্তানের মৃত্যু হয়। তার বিষয়ে এর আগে বিভিন্ন তদন্ত হলে ও সে তদন্তের কোন ফল দেখেননি রাঙ্গামাটিবাসী। পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রসুতি সেবা নিতে আসা মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে রাঙ্গামাটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন ভূক্তভোগীরা।