বিলাইছড়িতে রবি মৌসুমে ধান চাষে আশানুরূপ ফলন পাচ্ছেন না কৃষকরা

445

বিলাইছড়ি প্রতিনিধিঃ-বিলাইছড়ি উপজেলার রবি মৌসুমে ফ্রিঞ্জল্যান্ড বা জলেভাসা জমিতে শুরুতে অনাবৃষ্টি ও সেচ ব্যবস্থা না থাকার কারনে ধান চাষে সুবিধা করতে পারছেনা কৃষকরা। এতে তারা নিজেকে খুব অসহায় ও হতাশায় ভুগছেন এবং আশানুরূপ ফলন পাচেছনা কৃষকরা।
এ ব্যাপারে সরেজমিনে মাঠ পযার্য়ে জমি দেখতে গেলে দেখা যায়, ৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩নং ফারুয়া ও ৪নং বড়থলিতে বর্ষা মৌসুমে জুম ও জমিতে ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হলেও সেখানে চাইন্দ্যা ও আলেখ্যং এলাকা বাদে বাকী অন্য তেমন কোন এলাকায় জলে ভাসা জমি নেই এবং ২নং কেংড়াছড়ি ইউনিয়নে ১,২,ও ৩নং ওর্য়াড বাদে বাকী প্রায় সব ওয়ার্ডের জলেভাসা জমি রয়েছে। উক্ত ইউনিয়নে শুভমঙ্গল চেয়ারম্যানে কেরনছড়িস্থ ১টি ড্রেন করা হলেও বর্তমানে তা প্রায় পলির কারনে মাটির নীচে ডেবে গেছে।
অন্যদিকে বেশীরভাগ জলে ভাসা ধান্যজমি রয়েছে ১নং বিলাইছড়ি ইউনিয়নে এজন্য এ ইউনিয়নে সবকটি ওর্য়াডে জলেভাসা জমি থাকলেও বেশীরভাগ জমি রয়েছে কুতুবদিয়া মৌজায়। লক্ষ্যনীয় যে, মেশিন ও জনবল দিয়ে যারা ধান চাষ করেছেন তারা কিছুতা ফলনের আশা করলেও, কিন্তু বেশির ভাগ কৃষক যারা অথের্র অভাবে এমনিতে নিজে নিজে চাষ করেছেন তারা, একেবারে নিরাশা ও হতাশায় ভুকছেন।
বেশীর ভাগ কৃষকের জমি পানির ও সেচের ব্যবস্থা মোটেও না থাকার কারনে চৈত্র মাসে গরমে ধানগুলো লাল হয়ে মরে যাচ্ছে এবং বেড়ে ওঠছেনা ধান গাছগুলো। বেশী আগাছার কারনে আগাছা তুলতে জনবল দিতে না পারায় মন মানসিকতা খারাপ করে জমি থেকে সরে এসেছেন কুতুবদিয়া গ্রামের দ্ররিদ্র কৃষক উল্লুক্যা তঞ্চঙ্গ্যা, বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা ও সুকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা সহ অনেকে।
আরো লক্ষ্যনীয় যেসব ধানগুলো বের হচ্ছে সে ধানগুলো মুঁছড়ে যাচ্ছে এবং ছিড়ামড়া ও ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। এতে সুবাস তঞ্চঙ্গ্যা, বিসুক্যা তঞ্চঙ্গ্যা, ভাসাইয়া তঞ্চঙ্গ্যাসহ প্রায় কৃষকের ধান্যজমিতে এ রোগের কারণে গত বছরে তুলনায় এ বছরে আশানুরূপ ফলন পাবেনা বলে তারা জানিয়েছেন। তারা আরো জানিয়েছেন ধান রোপনের পর থেকে কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা এ পর্যন্ত একবারও আমাদের জমি দেখতে আসেনি।
এব্যাপারে কুতুবদিয়া গ্রামের গ্রামপ্রধান সুশীল কার্বারীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, সঠিকভাবে কৃষি অফিস ও প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে হয়ে উঠতে পারে বিলাইছড়ি উপজেলা কৃষি প্রধান উপজেলা হিসেবে এমনটি তিনি জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, বিলাইছড়ি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী ধান্যজমি রয়েছে। কুতুবদিয়া মৌজার কাপ্তাই বাঁধ হওয়ার ফলে পানি আসার পর এযাবৎ বিলাইছড়ি ইউনিয়নে অভিলাষ তংচঙ্গ্যা চেয়ারম্যানের সময়ে সবে মাত্র ১টি ড্রেন হলেও তা প্রায় পলির কারনে র্বতমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় এবং সেটা যা জমি তুলনায় সামান্য এবং যথেষ্ট নয়। তাছাড়া যে বছর বন্যা হয় সে বছরে পলি পড়লে ধান চাষে উপযোগী হয় জমিগুলো এবং বন্যা না হলে এমনিতে পানি বাড়লে পরবর্তী সিজনে পলি না পড়লে চাষ করতে পারেনা গরীব কৃষকরা। এখানে জমিগুলো কৃষিবান্ধব করতে হলে প্রয়োজন অবশ্যই পরিকল্পনা মোতাবেক বেশ কয়েকটি পাকা ড্রেন-নালাসহ, পায়োজনীয় কৃষি যন্ত্রপাতি।
এ বিষয়ে ২নং কেংড়াছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার ভুবনজয় চাকমা ও আমতলা রাজধন ছড়ার মিলন শংকর চাকমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, তাদের এলাকার ভালাছড়ি, বাঙ্গালটা ও রজধনছড়া এলাকায় অনেকের ধান্যজমিতে ছিড়ামড়া রোগ ও ব্লাসরোগে ফলন পাবেন না বলে জানিয়েছেন। তারা আরো জানান কোন কৃষিবাবু ধান্যজমি দেখতে আসেনি।
এ বিষয়ে আরো বিলাইছড়ি উপজেলার কৃষি কর্মর্কতা মেজবাহ উদ্দিনের মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান.এখানকার জমিগুলো সমতলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সময় অনুসারে রোপন করা সম্ভব হয়না, দুই-একমাস দেরীতে রোপন করা হয়।ফলে ঝর-বৃষ্টি, রোদ-মেঘলা ও ঠা-ার কারনে বিভিন্ন রোগ-বালাই বিশেষ করে ব্লাস্ট রোগদেখা দিতে পারে এবং যারা গরীব কৃষক সেচ ব্যবস্থাপনা করতে পারেন নাই বা সেচ ব্যবস্থাপনা ছাড়া শক্ত পলি মাটিতে এমনিতে রোপন করেছেন তাদের ফসল একেবারে মরে গেছে বা মোড়ক দরেছে আরো জানতে চাইলে তিনি আরো জানান, তারপরেও যদি কেউ বুজতে না পারে তাহলে প্রয়োজনে উপজেলা কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেন। এবিষয়ে চেয়ারম্যানদের অবহিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলাপরিষদ চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা’র সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ এবং র্বতমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। তাই আমাদের বিলাইছড়ি উপজেলার জলেভাসা জমিদের কৃষিক্ষেত্রে বর্তমান অবস্থা থেকে আরো উপযোগী করতে হলে কোথায় কি প্রয়োজন, কোথায় ড্রেন-নালা করতে হবে প্রয়োজন অনুযায়ী সকলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি আরো বলেন, ধান্য জমিতে রোগ-বালাই দেখা দিলে কোন রোগে কি ঔষুধ প্রয়োগ করতে হবে এবং কোন সময়ে কি সার দিতে হয় তা সব সময় কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চাষাবাদ করার জন্য অনুরোধ জানান।
এসব এলাকায় বা জলেভাসা জমিতে প্রতিবছর জুন-জুলাই মাসে পানি আসে এবং ডিসেম্বর জানুয়ারীতে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যায়। ফলে ভেসে ওঠে কৃষিজমি। তাই ধান চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠে কৃষকরা। বছরে একবার সবেমাত্র চাষ করতে পারে কৃষকরা।