গুইমারায় মোটর সাইকেল চালকের লাশ উদ্ধারঃ প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ, রাস্তায় অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাংচুর, আহত-২, আটক-২,

191

গুইমারাঃ-খাগড়াছড়ির গুইমারাতে মোটর সাইকেল চালক আকিব উদ্দিন রাকিব (২২)কে অপহরনের পরে হত্যা ও মোটর সাইকেল ছিনতায়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গুইমারা উপজেলা। বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) সকালে ৮টায় ঘটনার প্রতিবাদে জালিয়াপাড়া চৌরাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ করে স্থানীয়রা। দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে এ অবরোধ।
এসময় পুলিশ বহণকারী একটি মাহিন্দ্র পিকআপ’সহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে উত্তেজিত জনতা। এ ঘটনায় ২জন আহত হয়েছে। ঘটনার জন্য গুইমারা থানার ওসি বিদ্যুৎ বড়ুয়ার অবহেলাকে দায়ী করে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার দাবী করেছে নিহত রাকিবের পরিবার সহ স্থানীয়রা। অবরোধের কারনে দুর্ভোগে পড়েছে দূর পাল্লার যাত্রীরা। এদিকে দুপুর ২টারদিকে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুবিচারের আশ্বাসে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাত দশটায় ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেলে যাত্রী হিসেবে উপজেলার আমতলী নামক সীমান্তবর্তী এলাকায় সন্ত্রাসীরা চালক রাকিবকে নিয়ে যায়। এসময় রাকিব’কে হত্যা করে মাটিতে পূতে রেখে মোটর সাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। নিহত চালক রাকিব গুইমারা উপজেলার কালাপানি এলাকার ইকবাল হোসেনের ছেলে।
পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় মহালছড়ি থানার পুলিশ গতকাল বুধবার গভীর রাতে সাচিং মারমা (২২) ও অংচিং মারমা (২৫) নামে দুই যুবককে মোটর সাইকেলসহ আটক করে গুইমারা থানা পুলিশে সোপর্দ করেছে। সাচিং মারমা রামগড় উপজেলার পূর্ণ কার্বারি পাড়ার মংথুইজ্ঞা মারমার ছেলে এবং অংচিং মারমার বাড়ি গুইমারা উপজেলার হেডম্যানপাড়ায়। আটককৃতদের জবানবন্দি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুপুরে সিন্দুককছড়ি ইউনিয়নের আগবাড়ি এলাকা থেকে নিহত চালকের লাশ উদ্বার করা হয় বলে জানান গুইমারা থানার এসআই শরীফ।
এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী গুইমারা উপজেলার জালিয়াপাড়ায় প্রধান সড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে। সকাল ৮টা দুপুর ২টা পর্যন্ত কয়েক দফায় রাস্তায় অগ্নি সংযোগ করে উত্তেজিত জনতা। এসময় জালিয়পাড়া পুলিশ বক্সে ওসি বিদ্যুৎ কুমার বড়ুয়া’কে অবরুদ্ধ করে জুতা ঝাড়–নিয়ে স্থানীয় নারী-পুরুষ বিক্ষোভ জানিয়ে তার অপসারণ ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানায়। অবরোধ চলাকালে পুলিশ বহণকারী একটি মাহিন্দ্র পিকআপ’সহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে উত্তেজিত জনতা। মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী মংসাপ্রু মারমা ও চট্টগ্রাম গামী লোকাল বাসের যাত্রী (৮বছরের শিশু আলিম) আহত হয়েছে। অবরোধের কারনে খাগড়াছড়ি-ঢাকা ও খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কে ৪ ঘন্টা ব্যাপী সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে দূর পাল্লার যাত্রীরা।
নিহতের পিতা ইকবাল হোসেন জানান, মঙ্গলবার রাতে থানায় মামলা করতে গেলে ওসি বিদ্যুৎ কুমার বড়ুয়া মামলা না নিয়ে তাকে পাগল ও মদখোর বলে থানা থেকে বের করে দেয়। এরপর আরো কয়েক দফায় মামলা করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়ে পরে সেনাবাহিনীর সাব জোনের অধিনায়ক মেজর জুনায়েদের সহযোগীতায় ৯৯৯এ ফোন করার পর চাপে পড়ে গতকাল (বুধবার) রাত ১২টার সময় মামলা গ্রহন করেন ওসি।
গুইমারা থানার অফিসার ইনচার্জ বিদ্যুৎ কুমার বড়ুয়া জানান, একটু কাল ক্ষেপন হলেও রাত ১২টায় সময় মামলা নিয়েছি। হয়রানির বিষয়ে নিহতের পিতা ইকবালের অভিযোগ সঠিক নয়।
স্থানীয় সাবেক মহিলা মেম্বার ফাতেমা বেগম অভিযোগ করেন, ওসি বিদ্যুৎ বড়ুয়ার অবহেলা না করে যদি সঠিক সময়ে মামলা নিতো তাহলে ছেলেটাকে জীবিত উদ্ধার করা যেতো। ওসি মামলা না নিয়ে ছেলের বাপকে পাগল ও মদ খোর বলে থানা থেকে বের করে না দিলে আজ এ পরিস্থিতি দেখতে হতোনা।
সাবেক জামাল উদ্দিন মেম্বার বলেন, ওসির অবহেলার কারনে একটি তাজা প্রান অকালে শেষ হয়ে গেছে। ওসি মামলা না নিয়ে ইকবালকে হয়রানি করেছে। পরে সেনাবাহীনীকে জানালে ওসি তার উপর আরো রেগে গিয়ে তাকে থানা থেকে সেন্টি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের দপ্তর সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার লোকমান হোসেন এ যাবৎকালে পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী কর্তৃক হত্যাকান্ডগুলোর সঠিক বিচার না হওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নিহত আকিব উদ্দিনের বিষয়ে গুইমারা থানার ওসির দায়িত্বে অবহেলা ও সাম্প্রদায়িক প্রীতির নিন্দা জানিয়ে ওসির অপসারন সহ বিভাগীয় শাস্ত্রির দাবি জানান তিনি। এছাড়ও এ হত্যা মামলায় ওসিকে আসামী করার দাবিও করেন তিনি।
মাটিরাঙ্গা সার্কেলের সিনিয়র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ খোরশেদ আলম জানান, হত্যাকান্ডের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ওসির অবহেলার বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্তে বিষয়টি প্রমানতি হলে ওসির বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা নেওয়া হবে।