লামায় বখাটের তান্ডবে আতংকে কয়েক গ্রামের মানুষঃ ১২ ঘরে আগুন, উড়ো চিঠিতে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী

430

লামাঃ-লামায় দুর্বৃত্তদের তান্ডব ও অত্যাচারে নিদ্রাহীন রাত কাটাচ্ছে কয়েক গ্রামের মানুষ। গত ১ মাসে গভীর রাতে ৩টি গ্রামের ১২টি ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ ২টি উড়ো চিঠির মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেছে দুর্বৃত্তরা। চাঁদার টাকা সময়মত পরিশোধ না করলে ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়াসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে উড়ো চিঠিতে।
উপজেলার রুপসীপাড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের হাফেজ পাড়া, মাষ্টার পাড়া ও ১নং ওয়ার্ডের বৈদ্যভিটা গ্রামের গত ১ মাস যাবৎ জনৈক উচ্ছৃঙ্খল যুবক এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানায় স্থানীয় পাহাড়ি বাঙ্গালী জনসাধারণ। তারা প্রশাসনের কাছে জান-মালের নিরাপত্তা দাবী করেছে।
হাফেজ পাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. শাহ আলম, মাষ্টার পাড়ার মো. শাহজাহান ও বৈদ্যভিটা গ্রামের চ থোয়াই মার্মা বলেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার গভীর রাতে কে বা কারা আমাদের বাড়ির চারপাশে আগুন লাগিয়ে দেয়। আমরা টের পেয়ে চিৎকার দিলে সবাই এগিয়ে এসে আগুন নেভায়। এসময় ঘরের কিছু অংশ পুড়ে যায় এবং গবাদি পশুর জন্য রাখা খড়ের স্তুপে আগুন দিয়ে সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। মো. শাহজাহান জানায়, আমার একটি পাওয়ার টিলার মেশিন খড় ও লাকড়ি দিয়ে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা খুব আতংকে আছি। সামনে তামাক পাড়া পুড়ানোর সময়। তখন আমাদের সকলের ঘরে কয়েকলক্ষ টাকার শুকনা তামাক থাকবে। এখন এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধ করা না গেলে তখন আমাদের কি হবে ?
গত ৩০ জানুয়ারী ২০২০ইং বৃহস্পতিবার এক রাতে হাফেজ পাড়ার ৭টি বসতঘর ও খড়ের স্তুপে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্থরা হল, শৈ শৈ মং মার্মা, মংক্যাচিং মার্মা (কার্বারী), হ্লামে মার্মা, এনামুল হক, মো. শাহ আলম, মংচিং মার্মা ও নাছির উদ্দিন। তারা জানায়, দুর্বৃত্তরা আমাদের বাড়িঘরে ও অনেকের খড়ের স্তুপে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন ও এলাকার অনেকে বলেন, আমাদের ধারনা এই সব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের পিছনে এলাকার একটি ছেলের হাত থাকতে পারে। মাষ্টার পাড়ার বাসিন্দা পাইং শৈ প্রু মার্মার ছেলে চিং চিং মার্মা এই সব করতে পারে। সে দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকা হতে পলাতক আছে। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য চুরির অভিযোগ রয়েছে। মাঝে মধ্যে এই বখাটে ছেলেটিকে এলাকায় দেখা যায়। কিছু বুঝার আগে আবার পালিয়ে যায় সে। তাকে অনেকে বান্দরবানের টংকাবতী ও থানচি উপজেলায় দেখেছে। সে খুবই গরীব ঘরের ছেলে। বর্তমানে সে কয়েক লক্ষ টাকা দামের গাড়ি চালায়। সে কোন পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য হতে পারে বলে অনেকে ধারনা করেন।
হাফেজ পাড়ায় খামার বাড়ি করে থাকা সমির দাশ বলেন, গত ১ মাস আগে আমার গরুর খামারে আগুন দেয় এবং ১০ কানি জমিনের খড় পুড়িয়ে দিয়েছে। একই পাড়ার মংক্যাচিং মার্মা (কার্বারী) বলেন, আমার খড়ের স্তুপের আগুন নেভানো শেষ না হতে দেখি আমার মেয়ের ঘরে আগুন। আমাদের নিরাপত্তা দাবী করছি। তিনি বলেন, এই সন্ত্রাসী লোকটি উপজাতি হতে পারে। কারণ সে আমার খড়ের স্তুপে আগুন দেয়ার সময় সেখানে বাধা শুকরটি অন্যত্র সরিয়ে আগুন দেয়। কোন অউপজাতি লোক শুকর স্পর্শ করার কথা না।
একই পাড়ার বাসিন্দা উহ্লাচিং মার্মার ছেলে চনুমং মার্মা বলেন, এই সন্ত্রাসীরা গত ৩ ফেব্রুয়ারী আমাকে উড়োচিঠি দিয়ে দেড় লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করেছে। পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা মো. খালেকুজ্জামান বলেন, একই দিন রাতে উড়োচিঠি দিয়ে আমার কাছেও ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেছে। এই সন্ত্রাসীরা এলাকায় তান্ডব চালিয়ে সকলের মাঝে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে চাঁদা দাবী করছে। আমরা বিষয় গুলো লামা থানা পুলিশকে জানিয়েছি।
লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, খরব পাওয়ার পর থেকে ঐসব এলাকায় আমাদের পুলিশি টহল বাাড়নো হয়েছে। দিনে রাতে আমরা পাহাড়া দিচ্ছি। আশা করি কেউ আর কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতে পারবেনা।