রাঙামাটিতে রাবিপ্রবি’র সিনিয়র শিক্ষার্থীদের উপর জুনিয়রদের হামলা; উত্তপ্ত ক্যাম্পাস

2611
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাসে উঠা নিয়ে তুচ্ছ কথা কাটাকাটির ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স বিজ্ঞান বিভাগের ১ম ব্যাচের ছাত্র মিরাজুল হাসান সায়মন কে বেদড়ক মারধর এবং মোবাইল ও টাকা কেড়ে নিয়ে হামলার অভিযোগ করেছে, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তয় ব্যাচের শিক্ষার্থী আকিব মাহম্মুদ হাসান, মেহেদী হাসান, লাল সাং পুই এবং রিয়াদ তালুকদার’র বিরুদ্ধে। হামলার সময় সায়মন মাথায় এবং পায়ে গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয়। হামলাকারীরা সবাই নামধারী ছাত্রলীগ কর্মী বলে জানিয়েছে আহত ছাত্র মিরাজুল ইসলাম সায়মন।
 
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাঙামাটি শহরের তবলছড়ি কালিবাড়ী সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
 
এই হামলার ঘটনার পর জীবনের নিরাপত্তার জন্য রাঙামাটি কোতয়ালি থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তয় ব্যাচের শিক্ষার্থী আকিব মাহম্মুদ হাসান, মেহেদী হাসান, লাল সাং পুই এবং রিয়াদ তালুকদার’র বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পত্র দিয়েছেন, হামলায় আহত রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স বিজ্ঞান বিভাগের ১ম ব্যাচের ছাত্র মিরাজুল ইসলাম সায়মন।
 
অভিযোগ পত্রের সত্যতা কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মীর জাহিদুল হক রনি স্বীকার করে তিনি জানান, এই ঘটনায় পৃথক দুটি অভিযোগ পড়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বসহকারে নিয়েছি এবং এই ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
থানায় অভিযোগ পত্রে লিখিত বক্তব্যে সায়মন জানায়, বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে আমাদের তৃতীয় ব্যাচের মেহেদীর সাথে প্রথম ব্যাচের সায়মন এর বাসে উঠা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। পরে ক্যাম্পাস থেকে বাসায় যাওয়ার পথে আকিব মাহম্মুদ হাসান, মেহেদী হাসান, লাল সাং পুই এবং রিয়াদ তালুকদারসহ অজ্ঞাত কয়েকজন রাঙামাটি তবলছড়ি এলাকার কালিবাড়ি সংলগ্ন সড়কে আটকে তবলছড়ি ব্রীজের নীচে নিয়ে যায় এবং মারধর করে মোবাইল ও টাকা কেড়ে নেয়। একই সময় তার গলা টিপে ধরে মারধর করে জখম করে।
 
লিখিত অভিযোগে সায়মন আরো জানান, আমি শুরুতে প্রতিহত করার চেষ্টা করি, হামলাকারিরা তার মোবাইল ফোন ও সাত হাজার পাঁচশত টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। পরে পথচারিরা এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। পরবর্ততে শুনেছি তারা আমাদের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
অন্যদিকে এই ঘটনা কে কেন্দ্র করে পাল্টা কোতয়ালি থানায় পৃথক একটি সাধারন ডায়রি করেছেন, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় ব্যাচের ছাত্র মেহেদী হাসান। লিখিত অভিযোগ মেহেদী এই হামলার ঘটনার জন্য জুয়েল ও রুবেল, তবলছড়ি বাজারের দিদার, মীর শাকিল, পারভেজ ও সোহেলকে আসামী করে একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
থানায় অভিযোগ পত্রে লিখিত বক্তব্যে মেহেদী জানান, বাসে উঠা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসার পথে তবলছড়ি মসজিদের পাশের জুম ফুড রেস্টুরেন্টের সামনে আমার চার বন্ধু পায়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওই এলাকার বহিরাগত জোবায়ের হোসেন জুয়েল, সাবেক পৌর কমিশনার শহীদ চৌধুরীর ছেলে পারভেজ, যুবলীগের দিদার, মীর শাকিল, ছাত্রলীগ কর্মী সোহেল এবং রুবেলসহ কয়েকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এবং ব্যাপক মারধর শুরু করে।
 
এসময় মেহেদী হাসান মাথায়, হাতে ও পায়ে আঘাত পেয়েছেন। আহত অন্য তিন শিক্ষার্থী হলেন, আকিব, লালসাং ও রিয়াদ।
 
ক্যাম্পাসের এ ঘটনা ও সিনিয়র ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় ক্ষুদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানা যায়, এই ঘটনায় যে বা যারাই জড়িত থাকুক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিবেন ।
 
ঘটনায় সম্পৃক্ত রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তয় ব্যাচের শিক্ষার্থী আকিব মাহমুদ হাসান ও মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের।
 
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম ব্যাচের সাধারণ শিক্ষার্থী ওমর ফারুক অভিযোগ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির কয়েকমাস পর থেকেই মাঝেরবস্তী এলাকার আকিব মাহমুদসহ কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলের দ্বারা আমরা প্রায়ই হেনস্তার স্বীকার হয়ে থাকি। তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী আকিব মাহমুদ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির পর থেকে সেটা আরো বেড়ে যায়।
 
তিনি জানান, আকিব ও মেহেদীসহ কয়েক ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থী নিয়ে বেশ বড় একটি গ্রুপ রয়েছে তাদের। গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সিনিয়রদের সাথে এবং জুনিয়রদের সাথে বাজে ব্যবহার করে এবং হুমকি দিয়ে থাকে। তারা তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী হওয়া স্বত্তে¡ও দ্বিতীয় ব্যাচের দুই একজন শিক্ষার্থী কে সাথে নয়ে এমন অবস্থা সৃষ্টি করেছে যেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র জুনিয়র সম্পর্ক নষ্ট করছে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।
 
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের সাধারণ শিক্ষার্থী মোঃ আব্দুল গাফফার জানান, অতীতে আকিব, মিকি, মেহেদী,লাল চাং ফোন করে রাবিপ্রবির অস্থায়ী ছাত্রহল থেকে ডেকে নিয়ে যায় এবং মারার হুমকি দেয় এবং গালিগালাজ করে। তাদের কথামত রাজনীতি করতে হবে, না করলে এখানে রাজনীতি করা যাবে না বলে হুমকি দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইদুজ্জামান পাপ্পু বলেন, বেশ কয়েক মাস পূর্বে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের অনুসারী বখাটে আকিব মাহমুদসহ তার গ্রæপের সাথে মত বিরোধের জেড়ে মিল না হওয়ায়, আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে। আমি তার সিনিয়র হওয়া সত্বেও আমাকে নানাভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করে। এ ব্যাপারে আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু আমি যথাযত বিচার পায়নি।