খাগড়াছড়ি পানছড়ির মিষ্টি পান ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে

406

খাগড়াছড়িঃ-পানছড়ির মিষ্টি পান ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। একসময় এই জনপদে প্রচুর পরিমাণ মিষ্টি পান উৎপাদন হতো। এলাকাবাসীর চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানি করা হতো এই পান। পান উৎপাদনের সূত্র ধরেই এই জনপদের নামকরণ করা হয় পানছড়ি। পানছড়ি মূলত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার একটি উপজেলা। পানছড়ির মিষ্টিপানের সুখ্যাতি আছে সারা দেশ জুড়ে। মাঝখানে পান উৎপাদনে কিছুটা ভাটা পড়লেও পানের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে কৃষকরাও পান চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। পানছড়ির মিষ্টিপানের গুণগত মান ভালো হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাইকারদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে উৎপাদিত হয় এসকল পান।
উপজেলার সং খোলাপাড়া, নাপিতাপাড়া, পূজগাং, শান্তিপুর, কানুনগোপাড়া, লতিবান, রাজকুমার পাড়া, যুবনাশ্বের পাড়া, বড় পানছড়ি, ছোট পানছড়ি সহ বিভিন্ন গ্রামে প্রচুর পানের বনজ রয়েছে। সম্প্রতি পান উৎপাদন কে কেন্দ্র করে বড় পানছড়ি গ্রামকে পান বনজের গ্রাম হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।
বড় পানছড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় গ্রামের বাসিন্দারা পান বনজে কেউ পরিচর্যা করছেন। কেউ বা উৎপাদিত পান বাড়িতে এনে উঠোনে রাখছেন। সেখানে পরিবারের বাসিন্দারা পান বাছাই করে আলাদা আলাদা করে রাখছেন। এসকল পানের বনজে উৎপাদিত পান বিক্রি উপযুক্ত হলে বাজারে নিয়ে আসে কৃষক। পানছড়িতে পান কেনাবেচার জন্য পৃথক পৃথক বাজার সৃষ্টি হয়েছে। সপ্তাহের শনি, রবি ও বুধবার তিরপা বিল কানুনগোপাড়া ও কলেজ গেইট এলাকায় জমে ওঠে এসব হাট।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পানের সন্ধানে ব্যাপারীরা হাজির হয় এসব হাটে। স্থানীয় পান চাষীরা জানান এসকল হাটে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ লক্ষাধিক টাকার পান বেচাকেনা হয়। বাজার থেকে বেপারির মাধ্যমে এসব পান চলে যায় সারা দেশে। পানছড়ি কৃষি অফিস কর্তৃক জানা যায় বর্তমানে পানছড়িতে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। চাষির সংখ্যা প্রায় দেড় হাজারেরও অধিক। প্রতি একরে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার পানের চারা বা আগা লাগানো যায়। রোগ বা পোকার আক্রমণ না হলে ৬ মাস পর থেকে পান উত্তোলন করা যায়। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে একর প্রতি এক লক্ষ বিরা পান উৎপাদন করা সম্ভব।
প্রতি বিরা পান আকার ভেদে ৪০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। পান বিক্রি করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন ঘটিয়েছে চাষীরা। লতিবান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কিরণ ত্রিপুরা জানান আদিম পদ্ধতিতে এখনো এখানে পান চাষ হচ্ছে চাষীদেরকে উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করলে পান চাষে চাষীরা আরো লাভবান হতে পারবে। পানচাষিদের সূত্রে জানা যায় মাঝেমধ্যে পানের বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। তবে পোকার আক্রমণের চেয়ে ছত্রাকজনিত রোগেরপ্রকোপ বেশি হয়। রোপণের আগে ছত্রাকনাশক দিয়ে আগা শোধন না করলে পরবর্তীতে রোগ প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। পানছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিন শেখ জানান পান চাষের জন্য এই এলাকার মাটি ও আবহাওয়া খুবই উপযোগী। পান চাষীদের উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাছাড়া পানচাষিরা উপজেলা কৃষি অফিসের যেকোনো সমস্যা নিয়ে যোগাযোগ করলে তাদের যথাযথ পরামর্শ প্রদান করা হয়।