কাপ্তাই রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এই অঞ্চলের কৃষি বিপ্লবের একটি বাতিঘর

877

কাপ্তাইঃ-পার্বত্য চট্টগ্রাম কৃষি নির্ভর অঞ্চল হিসেবে বেশ পরিচিত। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর এই অঞ্চলে এখনো তেমন কোনো শিল্প কারখানা গড়ে না উঠায় ভৌগোলিক দিক বিবেচনা করে পাহাড়ের মানুষ কৃষি উপর নির্ভরশীল। এ লক্ষ্যে পাহাড়ি এই অঞ্চলে কৃষির উন্নয়নে ১৯৫৭ সালে প্ল্যান্ট ইন্ট্রোড্রেকশান সেন্টার নামে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার কর্নফুলি নদীর মোহনায় রাইখালীতে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়, সেই সময় এই কেন্দ্রে শুধুমাত্র বিদেশ হতে আমদানিকৃত বীজ সংরক্ষণ করা হতো। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে একই এলাকায় ৯৬ একর জমিতে গড়ে উঠে পূর্নাঙ্গভাবে রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, যেটা হয়ে ওঠে কৃষি বিজ্ঞানিদের গবেষণার একটি আতঁরঘর। প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছরে ১৮টি উদ্যাণতাত্ত্বিক বিভিন্ন ফল ও সবজির উন্নত জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি এই অঞ্চলের কৃষকের বাতিঘর হিসেবে কাজ করছে।
কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ধর্তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড: আলতাফ হোসেন জানান, রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে উদ্ভাবিত ফল ও সবজি শুধু এ অঞ্চলেই নয়; দেশের কৃষির উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। দুই জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ৬৫ জন কর্মকর্তা-শ্রমিক নিয়ে এগিয়ে চলা এ গবেষণা কেন্দ্রে গত তিন বছরে নতুন আরও তিনটি ফলের উন্নত জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। শুধুমাত্র জাত উদ্ভাবনই নয়, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের নিরলস পরিশ্রমে পাহাড়ি অঞ্চলে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনে নীরবে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাত ব্যবহার করে কৃষকও পাচ্ছেন সুফল।
রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত নয়টি সবজির জাত হলো, বারি ঝারশিম-২, বারি ঝাড়শিম-৩ (খাইস্যা), বারি জ্যাকবিন-১, বারি সীতা লাউ-১, বারি ব্রোকলি-১, বারি চিনাল-১, বারি সীম-৯, বারি সীম-১০ এবং বারি সীম-৪। নয়টি ফলের জাতহলো- বারি কলা-৩, বারি কলা-৪, বারি কামরাঙ্গা-২, রাবি আম-৮, বারি মিষ্টিলেবু-১, বারি কুল-৪ (বরই), বারি ড্রাগন ফল-১, বারি জলপাই-১ এবং বারি পেয়ারা-৪ জাত। এছাড়া সম্প্রতি সুদান হতে আমদানিকৃত এ্যাভোগোডা নামক একটি পুষ্টিকর ফলের বীজ এনে এর চাষ করা হয়েছে।
রাইখালী এলাকার উন্নয়ন কর্মী রুবি চৌধুরী জানান, এই গবেষণা কেন্দ্র হতে বিভিন্ন প্রজাতির আম এবং ড্রাগন ফলের চারা নিয়ে চাষ করে সুফল পেয়েছি। এখানকার আম খুবই সুস্বাদো এবং পুষ্টিকর। এছাড়া মাত্র ৩ মাসের মধ্য ড্রাগন ফলের গাছে ফলন ধরে।
জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আনন্দ বিকাশ চাকমা বলেন, ‘রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে ১০০টি বারি-৪ কমলার চারা রোপণ করি। গত বছর থেকে ফল আসা শুরু করেছে। খাওয়া দাওয়া, আত্মীয় স্বজনকে দেওয়ার পরও আমি ৩০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করেছি। এই বাগানে পরিচর্যা ও বার্ষিক ব্যয় হয় ১০-১৫ হাজার টাকার মতো। আনন্দ বিকাশ আরো জানান, রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে থেকে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে কখন কী ঔষুধ দিতে হবে এবং কিভাবে গাছের পরিচর্যা করতে হয়। সেই বিষয়ে তারা খোঁজখবর রাখেন, সাথে সাথে সহযোগীতাও করে থাকেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাঙ্গামাটি জেলার উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, ‘রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে তারা নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ করে। আমরা প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত জাতগুলো কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের মাধ্যমে কৃষকের কাছে পৌঁছানো কাজটি করে থাকি। তাদের উদ্ভাবিত জাতের মধ্যে বারী আম-৮, বারী আম-১১, বারী আম-৪ বর্তমানে মাঠে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।’
রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানিরা বলেন, ‘পাহাড়ের কৃষির উন্নয়নে রাইখালী কৃষি গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি থেকে আটারোটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। যার মধ্যে নয়টি ফলের জাত, নয়টি সবজির জাত। গত তিন বছরে তিনটি ফলের জাত উদ্ভাবনসহ এ বছর আরও দুটি জাত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’
পার্বত্যঞ্চলের কৃষি বিপ্লবে এই গবেষণা কেন্দ্র যে ভূমিকা রেখে আসছে তাই এখানকার কৃষক থেকে শুরু করে সর্বমহলে এর আরোও উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করছেন তারা, যাতে ভবিষ্যতে তারা আরোও নতুন নতুন গবেষণার মাধ্যমে এই অঞ্চলেরর কৃষিকে সমৃদ্ধ করতে পারে।