নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙ্গামাটি – সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ এনে সাবেক মহিলা এমপি ফিরোজা বেগম চিনুর বিরুদ্ধে রাঙ্গামাটি কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেছেন রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর।
২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটি কোতয়ালী থানায় এই মামলা দায়ের করা হয় বলে জানান তিনি। রাঙ্গামাটি কোতয়ালী থানায় দায়েরকৃত মামলা নং-১০৬২/১৯।
গনমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে মামলার বিষয়টি জানিয়ে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর জানান, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে জড়িয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিও ক্লিপ ছড়ানোর মাধ্যমে আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার একটি ষড়যন্ত্র করা হয়। ফেসবুকে ছড়ানো এ ভিডিও ক্লিপের উদ্ধৃতি দিয়ে এ বিষয়ে তার অবস্থান ব্যখ্যা করেন জেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর ।
বিবৃতিতে মুছা মাতব্বর বলেন, ‘গত ১৯ নভেম্বর ২০১৯ খ্রিঃ তারিখ রাত ১২ টার দিকে সাবেক মহিলা এমপি ফিরোজা বেগম চিনু তার ফেসবুক আইডি থেকে উক্ত অশালীন ভাষায় রেকর্ডকৃত ভিডিও ক্লিপটি পোস্ট ও শেয়ার করেন। যা আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, সাবেক মহিলা এমপি ভিডিওটি শেয়ারের মাধ্যমে আমাকে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে হয়রানি ও ক্ষতি করার লক্ষ্যে এ ষড়যন্ত্রমূলক কাজটি করেছে বলে আমি মনে করি। এ ঘটনার নিন্দাও জানান তিনি।
জেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর বলেন, ২০০৯ সালে ২২ জানুয়ারী রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আমার প্রতিদ্ব›িদ্ধ প্রার্থী হয়েছিলেন ফিরোজা বেগম চিনু।
সেখানে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। ২০০৯ সালে পরাজয়ের সেই ক্ষোভ ও আসন্ন রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে আমার জনপ্রিয়তা ও নেতৃত্বের সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে তিনি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও হীন ষড়যন্ত্রমূলক এই ভিডিও তৈরি করেছেন বলে আমি মনে করি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন অশোভন ও অশালীন ভিডিও প্রচার করে আমাকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হয়রানি ও হেয়প্রতিপন্ন করার কারনে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমি ২১/১১/২০১৯ খ্রিঃ তারিখ কোতয়ালী থানায় আমি একটি মামলা দায়ের করি। মামলা নং-১০৬২।
মুছা মাতব্বর আরো বলেন, রাঙ্গামাটি ফিরোজা বেগম চিনু জেলা আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেত্রী হয়ে এমন অশালীন ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের মত কর্মকান্ড সংঘটিত করার কারণে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেতা দীপংকর তালুকদার এমপি বরাবরেও আবেদন করেছি।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মহিলা এমপি ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, যে অভিযোগ নিয়ে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বর কোতয়ালী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে তা সঠিক নয়, সম্পুর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্য প্রনোদিত। তিনি বলেন, ভিডিওটি আমি পোষ্ট করিনি, পোষ্টে শেয়ার করেছিলাম, শেয়ার করার উদ্দেশ্য ছিল বিষয়টি সকলে যেন অবহিত হয়। কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে তা করিনি। তিনি আরো বলেন, উক্ত ভিডিওটি আমি একা শেয়ার করিনি এটা ৩৭২জন শেয়ার করেছে।
এদিকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাঙ্গামাটি কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মীর জাহিদুল হক রনি । তিনি জানান, মামলা গ্রহণের পর নিয়ম মোতাবেক আমরা অভিযোগের প্রযুক্তিগত দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি। ওই রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে এসব ঘটনায় পুরো রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাই অনেকটাই বিব্রত।
জেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে এ ধরনের বিতর্কিত স্ট্যাটাস দেয়াটা একটা ষড়যন্ত্র এবং আওয়ামীলীগের সুনামকে ক্ষুন্ন করারই একটি গভীর ষড়যন্ত্র। যারা এসব অপকর্মে জড়িত তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কাছে আহবান জানান অনেকে।