রাজবন বিহারে লাখো মানুষের সাধু সাধু ধ্বনিতে কঠিন চীবর উৎসর্গের মধ্যদিয়ে দানোৎসব সম্পন্ন

345

রাঙ্গামাটি>> মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে লাখো পূর্ণার্থীর শ্রদ্ধা এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীয্যের ও সাধু সাধু ধ্বনিতে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে চীবর উৎসর্গের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দুইদিন ব্যাপী সর্ববৃহৎ ৪৬তম কঠিন চীবর ধর্মীয় উৎসবে সকল সম্প্রদায়ের মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে রাজবন বিহার।

শুক্রবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে রাঙ্গামাটির রাজবন বিহার প্রাঙ্গনে বৌদ্ধ সমাবেশে রাঙ্গামাটি সার্কেল চীফ রাজা দেবাশীষ রায় ২৪ ঘন্টায় তৈরীকৃত চীবর পার্বত্য বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু বনভন্তের শীর্ষ মন্ডলীর কাছে এ চীবর উৎসর্গ করেন। চীবর উৎসর্গের সময় ভক্তদের সাধু..সাধু..সাধু কন্ঠধ্বনিতে সমগ্র আশপাশ এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো রাজবন বিহার এলাকা।

বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে বৌদ্ধ ধর্মাবলন্বীদের দানোত্তম কঠিন চীবর দান শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে চাকমা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় বেইন ঘর উদ্বোধন করে এবং চরকায় সূতা কেটে দুই দিনের কঠিন চীবর দান উৎসবের সূচনা করেন।

বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গেরুয়া কাপড়কে বলা হয় চীবর। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে চরকায় সূতা কেটে, সূতা রং করে আগুনে শুকিয়ে সেই সুতায় তাঁতে কাপড় বুনে চীবর তৈরী করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয় বলে এর নাম কঠিন চীবর দান। শুক্রবার দুপুরে এই চীবর উৎসর্গের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় ২ দিন ব্যাপী কঠিন চীবর দানানুষ্ঠান।

শুক্রবার রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার মাঠে চীবর দানানুষ্ঠানে মহিলা সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, রাঙ্গামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মাইনুর রহমান, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এক এম মামুনুর রশিদ, চাকমা সার্কেল রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়, রানী ইয়েন ইয়েন, জেলা পরিষদ সদস্য অংশ্রুপ্রু চৌধুরী, রাজবন বিহারের উপাসক উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান উপস্থিত ছিলেন।

প্রাচীন নিয়ম মতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর তৈরী করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের উৎসর্গ করা হয়। বিশ্বের আর কোথাও এ নিয়মের প্রচলন নেই।

বৌদ্ধ শাস্ত্র মতে, দীর্ঘ আড়াই হাজার বছর পূর্বে গৌতম বুদ্ধের শিষ্য বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীবর তৈরীর প্রচলন করেছিলেন। প্রতি বছর আষাড়ী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিনমাস বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাবাস শেষে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চীবর দান করতে হয়। এরইই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সাল থেকে বুদ্ধের শিষ্য বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে ৪৬ বছর ধরে কঠিন চীবর দান উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে।
এ কঠিন চীবর দান উৎসবের অন্যতম উপলক্ষ হলো মৈত্রী গড়ে তোলা। পার্বত্য অঞ্চলে চলমান সংঘাত নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে চাকমা রাজা বলেন, সকল প্রশাসন নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা বজায় রেখে চেষ্টা করলে সংকট নিসন করা অসম্ভব না।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরমতে, জগতে যত প্রকার দান রয়েছে তার মধ্যে এ চীবর দানই হচ্ছে সর্বোত্তম দান।
বৃহস্পতিবার চরকায় সুতা কেটে চীবর প্রস্তুতের কাজ সুচনা করা হয়। রাজবন বিহারের বিশাল এলাকা জুড়ে অর্ধশতাধিক চরকা ও প্রায় ২শতাধিক বেইন স্থাপন করা হয়। প্রায় ৬ শতাধিক মহিলা এই চীবর প্রস্তুত কাজে অংশ গ্রহণ নেয়।

২৪ ঘন্টার পরিশ্রমে তৈরী করা এ চীবর চাক্মা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় প্রয়াত পার্বত্য ধর্মীয় গুরু বনভন্তে স্মৃতির উদ্দেশ্যে ভিক্ষু সংঘের কাছে এ চীবর উৎসর্গ করবেন। রাতে রাজবন বিহারে ফানুষ উড়িয়ে শেষ হবে এই কঠিন চীবর দান উৎসব।