জশনে জুলুশ, জগদ্ধাত্রী পূজা ও চীবর দানকে ঘিরে রাঙ্গামাটি শহর সম্প্রীতির উৎসবে পরিণত

891

রাঙ্গামাটিঃ-সম্প্রীতি ও উৎসবের শহরে পরিণত হয়েছে পুরো রাঙ্গামাটি জেলা। রাঙ্গামাটি শহরের হিন্দুদের জগদ্ধাত্রী পূজা উপলক্ষে চলছে মহোৎসব ও মেলা, আজ থেকে শুরু হচ্ছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব কঠিন চীবর দানোৎসব, আগামীকাল ইসলাম সম্প্রদায়ের মহামানব মহানবীর (দঃ) জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে রাঙ্গামাটি শহর সেজেছে উৎসবের নগরীতে। সকল সম্প্রদায়ের পৃথক পৃথক উৎসবকে ঘিরে রাঙ্গামাটি শহর এখন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। স্ব স্ব সম্প্রদায়ে তাদের ধর্মীয় উৎসব পালনের পাশাপাশি অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে চলছে উৎসব আর উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে যাতে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সহ সকল প্রসাশনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা।
রাঙ্গামাটি শহরে এই উৎসবে ঘিরে এখন লোকে লোকারণ্য। তিন পার্বত্য জেলার সর্ববৃহৎ মহোৎসব হিসাবে রাঙ্গামাটি জগদ্ধাত্রী পূজা উপলক্ষে গত সোমবার থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব এবং মেলা বসেছে। এই মেলাকে ঘিরে রাঙ্গামাটির সকল সম্পদায়ের মানুষের মিলন মেলা হিসাবে পরিণত হয়েছে। উৎসবকে ঘিরে মেলায় সকল সম্প্রদায় তাদের নিজ নিজ কেনা কাটা করতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে।
অপর দিকে মহানবীর জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে জশনে জুলুসকে ঘিরে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে চলছে উৎসবের আমেজ। প্রতিটি মসজিদে মসজিদে করা হয়েছে আলোক সজ্জা, বিশেষ করে রাঙ্গামাটি শহরের ফিসারী বাঁধ এলাকায় আলোকসজ্জা জানান দিচ্ছে উৎসব আর উৎসব। মানুষের হৃদয়কে মনোমুগ্ধ কর করে তুলছে এই আলোকসজ্জ্বা।
অন্যদিকে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে দানোৎত্তম কঠিন চীবর দান উৎসকতে ঘিরে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার এলাকায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আজ দুপুর থেকে শুরু হবে ২ দিন ব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব। এ উপলক্ষে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে বিশাল মেলা বসেছে।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি জগদ্ধাত্রী মাতৃ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কান্তি মজাহন বলেন, রাঙ্গামাটি সম্প্রীতির শহর, রাঙ্গামাটি শহর একটি উৎসবের শহর। তিন পার্বত্য জেলার সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব এই জগদ্ধাত্রী পূজা। এ উপলক্ষে রাঙ্গামাটি জগদ্ধাত্রী মাতৃ মন্দিরে ৫ দিন ব্যাপী বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবের আলোজন করা হয়। এ উৎসবেক ঘিরে বনরূপা এলাকায় বিশাল মেলা বসে। মেলায় সকল সম্প্রদায়ের মিলন মেলায় পরিনত হয়। তিনি বলেন, আমাদের এই উৎসবের পাশাপাশি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কঠিন চীবর দান ও মুসলিম সম্প্রদায়ের জশনে জুলুশ ঈদ এ মিলাদুন্নবী উৎসব চলছে। এই উৎসব গুলো যাতে সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন করা হয় তার জন্য আমরা প্রার্থনা করি। সকল সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির বন্ধনের কারণে রাঙ্গামাটি শহর এখন উৎসবের নগরী। তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি আমরাও আমাদের ভোলান্টিয়ারদের মাধ্যমে শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এদিকে রাঙ্গামাটি গাউছিয়া কমিটির আহবায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্য হাজী মোঃ মুছা মাতবক্ষর জানান, মহানবী (দঃ) জন্ম ও মৃত্যু বাষির্কী উপলক্ষে রাঙ্গামাটি জেলায় জশনে জুলুশের র‌্যালীতে এবচর ১০ হাজারের বেশী লোকের সমাগম ঘটবে। রাঙ্গাামটি পুরো শহর জুড়ে এখন উৎসবের নগরী। আমাদের গাউছিয়া কমিটির মাধ্যমে প্রতিটি মসজিদে মসজিদে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চলানো হয়েছে। আগামী শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর পর বিশাল র‌্যালী নিয়ে আমরা জুলুশ পালন করবো।
গাউছিয়া কমিটির সদস্য সচিব মোঃ আবু সৈয়দ জানান, মহানবী (দঃ) জন্ম ও মৃত্যু বাষির্কী উপলক্ষে রাঙ্গামাটির প্রতিটি উপজেলায় শুক্রবার র‌্যালী অনুষ্ঠিত হবে। আগামী শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর পর রিজার্ভ বাজার জামে মসজিদ থেকে র‌্যালী বের হয়ে প্রেসক্লাব, পুরাতন বাস ষ্ট্রেশন, কাঠালতলী হয়ে বনরূপা মসজিদে গিয়ে শেষ হবে। তিনি বলেন, আশা রাখি আমরা সুশৃঙ্খল ভাবে র‌্যালী অনুষ্ঠিত করতে পারবো। তার জন্য আমরা সকলে সহযোগিতা কামনা করছি। তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি এখন উৎসবের শহর হিন্দু, বৌদ্ধ দের দুটি বড়ো উৎসব চলছে। আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা আমাদের জশনে জুলুস ও ঈদ এ মিলাদুন্নবী পালন করবো আশা করছি।
রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের উপাসক উপাসিকা কার্যনির্বাহী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমিয় খীসা বলেন, রাজবন বিহারে ৪৬ তম কঠিন চীবর দানোৎসবকে ঘিরে এখন উৎসবের নগরী পরিণত হয়েছে রাঙ্গামাটি শহর। এই উৎসবের নগরীতে আরো দুটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্প্রীতির শহর রাঙ্গামাটিতে কোথাও যাতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য আমরা কামনা করছি। তিনি বলেন, রাজ বন বিহারে এবছর লাখো মানুষের সমাগম ঘটবে। এ উপলক্ষে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ছুফি উল্লাহ বলেন, রাঙ্গামাটি শহরের প্রতিটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব যাতে সুষ্ঠ ভাবে পালন করতে পারে তার জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের কঠিন চীবর দানোৎসবে লাখো মানুষের সমাগম ঘটবে। এই উৎসবকে ঘিরে আমাদের ৪ স্থরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পুরো রাজবন বিহার জুড়ে ১২ টি পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সাদা পোশাকেও পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে। এছাড়া আমাদের বেশ কয়েকটি মোবাইল টিম থাকে পুরো রাঙ্গামাটি শহর জুড়ে। শহর জুরে স্টাইকিং ফোর্স রাখা হয়েছে বেশ কয়েকটি। আশা করছি কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। রাঙ্গামাটি সম্প্রীতির শহর সব সময় সম্প্রীতি বজায় থাকবে এটা আমরা আশা রাখি।